৩ ডিসেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১১:০৬

বাজেটের অপ্রত্যাশিত খাতের পুরো অর্থ ৫ মাসেই শেষ

বরাদ্দ ছিল ২ হাজার কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের ৫ মাসেই বাজেটে রক্ষিত ‘অপ্রত্যাশিত খাতের’ ব্যয় বরাদ্দ শেষ করে ফেলেছ সরকার। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে অপ্রত্যাশিত খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন খাতে এই অর্থ নভেম্বর মাসের মধ্যেই সব ছাড় করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিগত ১০ বছরের মধ্যে আর কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগের তৈরি করা ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত হতে ছাড়কৃত অর্থের বিবরণী বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বিবরণী অনুযায়ী, এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এ্ই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসরসুবিধা বোর্ডের ২০১৭ জুন পর্যন্ত অনিষ্পন্ন আবেদনগুলো নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সম্ভাব্য ৭৫৭ কোটি টাকার মধ্যে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। অপ্রত্যাশিত খাত থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থ পেয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ঢাকার টিকাটুলীর ব্যক্তিমালিকানাধীন সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ‘রোজ গার্ডেন’ কেনার জন্য অপ্রত্যাশিত খাত থেকে এই মন্ত্রণালয় পেয়েছে ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ডিসেম্বর মাসে ৩০ তারিখে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে পর কে সরকার গঠন গঠন করে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়েই ওপরের নির্দেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অপ্রত্যাশিত খাতে পুরো অর্থ ছাড় করে দেয়া হয়েছে। এর আগে এ ধরনের ঘটনা তেমন ঘটেনি। তিনি বলেন, অপ্রত্যাশিত খাতের অর্থ সাধারণ দৈবদুর্বিপাক বা দুর্যোগের সময় বেশি ব্যয় করা হয়। কারণ এই খাতের অর্থ ব্যয় করার জন্য পরিকল্পনা কমিশনের কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এবার ৫ মাসের এই অর্থের পুরোটা ব্যয় করার ফলে আগামীতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে সে সময় অর্থ বরাদ্দ দিতে হলে আমাদের অন্য খাত থেকে অর্থ কেটে এনে দিতে হবে, যা বাজেট ভারসাম্যে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৯১টি ভোটকেন্দ্রে ৪ লাখ ৮২ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এতে অতিরিক্ত খরচ হবে ২৪৩ কোটি টাকা। এই অর্থও অপ্রত্যাশিত খাত থেকে দেয়া হয়েছে।

এ খাত থেকে আরো অর্থ দেয়া হয়েছে, রোমের চ্যান্সারি ভবন ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবন কিনতে ১৩৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল, লস অ্যাঞ্জেলেসে চ্যান্সারি ভবন কেনার জন্য ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাটকল শ্রমিকদের মজুরি ও বেতনভাতা পরিশোধে ১০০ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগের দুই প্রকল্পে ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ৭৯ কোটি টাকা, সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় ব্যয় ব্যবস্থাপনায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহের জন্য ৭৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের শ্রমিকদের মজুরি ও বেতনভাত পরিশোধের জন্য ১০০ কোটি টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য অপসারণে ব্যবহৃত গাড়ি কেনার জন্য ৩১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ সুরমায় ন্যাচারাল পার্কে বিভিন্ন রাইড স্থাপন এবং সিলেট মহানগরীর যানজট নিরসন ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য অতিরিক্ত ৫৫ কোটি টাকা।
২০টি জেলা শহরে ২০টি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফায়ার ওয়ার্কস ও লেজার শো অনুষ্ঠানের জন্য অতিরিক্ত ১৫ কোটি টাকাও অপ্রত্যাশিত খাত থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/369342