২ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:৩০

নির্বাচনী ডামাডোলে ব্যবসাবাণিজ্যে ধীরগতি

সারা দেশে চলছে নির্বাচনী ডামাডোল। শহর থেকে গ্রামে, সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নির্বাচন। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠারও কমতি নেই। উৎসুক মানুষের প্রথম প্রশ্ন, নির্বাচন কী হবে? পরস্পরের কাছে জানতে চাচ্ছেন, কী হতে যাচ্ছে নির্বাচন ঘিরে? সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তো? এজাতীয় হাজারো প্রশ্নের চাপে জর্জরিত পুরো দেশ। মাঝখানে চ্যাপ্টা হওয়ার অবস্থা অর্থনীতির। নির্বাচন ঘিরে ধীর হয়ে গেছে দেশের ব্যবসাবাণিজ্যের গতি।

বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী-শিল্পপতির সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসাবাণিজ্যে একধরনের মন্দাভাব বিরাজ করছে। নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তায় নতুন বিনিয়োগে ধীরগতি বেশ কিছু দিন থেকেই। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই স্থবির হয়ে যাচ্ছে ব্যবসাবাণিজ্য। বিশেষ করে কেউ নতুন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। পুরনো ব্যবসাবাণিজ্য চাঙ্গা করার জন্যও নেই বিশেষ উদ্যোগ। একটু বড় লেনদেনের ক্ষেত্রেও বাধা হিসেবে দেখা দিচ্ছে নির্বাচন। অনিবার্য কাজ না হলে বাইরে যেতেও রাজি নন এক শ্রেণীর মানুষ। সবাই অপেক্ষা করছেন নির্বাচনের জন্য।
নির্বাচনের ডামাডোলে মার্কেটগুলোয় বেচাবিক্রি বন্ধ জানিয়ে ঢাকা মহানগর দোকানমালিক সমিতির সভাপতি মো: হেলাল উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, শীতকাল বেচাকেনার মওসুম। যার বেশি টাকা নেই তিনিও একটা গরম কাপড় কিনতে মার্কেটে আসেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। মার্কেটগুলোয় বেচাকেনা নেই। মানুষ বাধ্য না হলে কোনো কিছু কিনছেন না। বিশেষ করে ফার্নিচার এবং ফ্রিজ-টেলিভিশনের মতো ঘরের কিছুটা কম প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য মানুষ নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাচ্ছেন।
নির্বাচনের অজুহাতে পাওনা টাকা কেউই নিচ্ছেন না জানিয়ে এফবিসিসিআইর একজন পরিচালক গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, নতুন করে কোনো কাজকারবারে জড়ানো তো দূরের কথা; নির্বাচনের দোহাই দিয়ে অতি জরুরি পাওনা টাকাও মানুষ দিতে চাচ্ছেন না। নিয়মিত লেনদেন করতেও মানুষ গড়িমসি করছেন। যে কথাই বলি না কেন, সবক্ষেত্রেই বলছে, নির্বাচনের পরে। অবস্থা এমন যেন, একটা ভোট দেয়ার জন্য সব কিছু আটকে থাকবে। তবে নির্বাচন হবে কি না সে বিষয়ে আশঙ্কা রয়েছে সবার মনেই।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচন এসে আমাদের যেনো ঝামেলায়ই ফেলে দিয়েছে। ব্যবসাবাণিজ্যে খুব দুরবস্থা যাচ্ছে। মানুষ এখন বাড়ি-ঘর বানানোও বন্ধ করে দিয়েছে। ফ্ল্যাট বিক্রিও কম। নির্মাণকাজে চলছে স্থবিরতা। এসব কারণে পুরনো ঢাকার পাইকারি ইলেকট্রিক মার্কেটগুলোয় বিক্রি অস্বাভাবিক কমে গেছে বলে জানান তিনি।
মতিঝিলের ব্যাংক কর্মকর্তা সোলায়মান জানান, নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু লোকজন ছাড়া অন্যরা বড় কোনো লেনদেন করছেন না। নির্বাচনে কী হয়? রাজনীতি কোন দিকে যায়? কারা ক্ষমতায় আসেন? এসব প্রশ্ন দেখা দেয়ায় ব্যবসায়ীরা আগের মতো এলসি খুলছেন না। বিনিয়োগের জন্য ঋণ নেয়ার হারও অনেক কমে গেছে। এমনকি ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর কাকরাইলে গাড়ির ব্যবসা করেন হোসাইন আহমেদ। তিনি গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আগে প্রতি মাসে অন্তত ৫টা গাড়ি বিক্রি করতাম। গত দুই মাসে একটিও বিক্রি হয়নি। কারণ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় কেউ গাড়ি কেনার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে সাহস পাচ্ছেন না। অনেকেই যোগাযোগ করেন কিন্তু চূড়ান্তভাগে এগিয়ে আসেন না। বলেন, নির্বাচনের পরে কিনবো। বিক্রি না হলেও সব খরচ চালিয়ে যেতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্যা কেটে যাবে।
কথা প্রসঙ্গে ইতালি প্রবাসী আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশে কিছু একটা করার ইচ্ছা দীর্ঘদিনের। কিন্তু রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সাহস পাই না। নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, একটা দেশের অর্থনীতি তো বেশি দিন স্থবির থাকতে পারে না। যেমন নির্বাচনই হোক, যে দলই ক্ষমতায় আসুক, ভোটের পর অর্থনীতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন তিনি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/369066