২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১১:৩৭

জাতীয় চিড়িয়াখানা

‘বাঘ মামা তো পানি ছেড়ে উঠছেই না’

রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় আসা শিশু-কিশোরদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে বাঘ। কিন্তু এই হাঁসফাঁস গরমে তার দেখা পাওয়াই মুশকিল! বাঘের খাঁচার সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কয়েক শিশু। বাঘ না দেখে তারা অন্য কোথাও যাবে না। এক পর্যায়ে চার বছরের রাহুল বড় ভাই রূপমকে বলে, ‘ভাইয়া বাঘ মামাকে ডাকো, বাঘ মামা তো পানি ছেড়ে উঠছেই না!’

চিড়িয়াখানায় কথা হয় প্রবাসী নূর আলমের সঙ্গে। দুই সন্তানকে বাঘ দেখাতে নিয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু তারা এখনও বাঘ দেখতে পারেনি। শুধু বাঘ নয়, গরমে কোনো প্রাণীই দর্শনার্থীর সামনে আসছে না। সবাই লুকিয়ে থাকছে।

চিড়িয়াখানায় ঢুকেই হাতের বাঁ দিকে হরিণের খাঁচা, একটু সামনে গেলে বানরের। ওই রাস্তা ধরে আরেকটু সামনে এগোলে বাঘ ও সিংহের খাঁচা। এসব প্রাণী দেখতে বেশি আগ্রহ থাকে দর্শনার্থীর। কিন্তু গতকাল শনিবার তেমনটা দেখা যায়নি। চিড়িয়াখানা বেশ ফাঁকা, দর্শনার্থী খুবই কম। যারা আসছেন তারাও একটু ঘুরে বের হয়ে যাচ্ছেন; অথবা গাছের ছায়ায় বসে সময় পার করছেন। দর্শনার্থীর মতোই অবস্থা চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোর। বাঘ, সিংহ, ভালুক, হাতি, জলহস্তী, হরিণ, বানর– কেউই ছায়া থেকে বের হচ্ছে না।

জাতীয় চিড়িয়াখানার এক কর্মী জানান, প্রতিদিন দুপুর ১২টার দিকে প্রতিটি খাঁচায় খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ পশুপাখি খাবারে মুখ দিচ্ছে না, গরমে হাঁসফাঁস করছে। সকাল থেকে পানিতে গাঁ ভিজিয়ে রাখছে বাঘ, সিংহ, ভালুক ও জলহস্তী। খাঁচায় খাবার দিলেও ওপরে আসছে কম। দুপুর ২টার দিকে পানি থেকে উঠে কয়েক টুকরা মাংস খায় বাঘ। পরে আবার পানিতে নেমে যায়। দলবেঁধে চৌবাচ্চার পানিতে সাঁতার কাটছে বানর। মোটরের পানি ছিটানো হচ্ছে হাতির গায়ে। মাহুত মো. ইস্রাফিল জানান, আগে দিনে দু’বার হাতিকে গোসল করানো হতো, তাপপ্রবাহের কারণে এখন চারবার করানো হচ্ছে। পাঁচটি হাতি দেখাশোনা করছেন দু’জন।

গেল ঈদুল ফিতরের দিন চিড়িয়াখানায় হাতির আক্রমণে এক শিশুর মৃত্যু হয়। সেই থেকে পাঁচটি হাতি বাঁধা। মো. ইস্রাফিল জানান, এতে হাতির পায়ে সমস্যা হতে পারে, এর পরও তারা কোনো হাতি বের করছেন না।

চিড়িয়াখানার প্রাণী পুষ্টি কর্মকর্তা এম এ জলিল সমকালকে জানান, তাপপ্রবাহের কারণে খাঁচায় থাকা ১৩৮ প্রজাতির পশুপাখিকে রসালো খাবার দেওয়া হচ্ছে। গোসল করানো হচ্ছে বেশি। যেসব প্রাণী নিজে গোসল করতে পারে, সেগুলোর খাঁচায় চৌবাচ্চার পানি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণী অসুস্থ হয়নি। তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় তাপমাত্রা একটু কম থাকে, কারণ এখানে গাছপালা রয়েছে। এর পরও এই তাপদাহে পশুপাখি ছায়া থেকে বের হচ্ছে না। খাবার দিলেও আসছে না।’

https://samakal.com/capital/article/234511