২ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:২৯

একের পর এক তুলে নেয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক

নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে একের পর এক তুলে নেয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই এ অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। গত তিন দিনে পাঁচজনকে এভাবে তুলে নেয়ার অভিযোগ মিলেছে।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা ব্যিেরস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া হাইকোর্টে মামলা পরিচালনার কাজ করছিলেন। পরে কারওয়ান বাজার থেকে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন আইনজীবীর পোশাক পরা অবস্থায় তাকে তুলে নিয়ে একটি গাড়িতে ওঠায়। এরপর যোবায়েরকে তার কাকরাইলের চেম্বারে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নিচে রেখে ডিবি পরিচয়দানকারী ওই লোকদের কয়েকজন উপরে যোবায়েরের চেম্বারে যায়। চেম্বারে থাকা বশির নামে ওই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে নিচে আসে। এরপর বেলা ২টার দিকে তাদের দু’জনকে নিয়ে চলে যায়। যোবায়েরের বোন ডা: ফেরদৌসী গতকাল জানিয়েছেন, যারা তুলে নিয়ে গেছে তাদের একজন নিজেকে ডিবির এসি শাহাদাত বলে পরিচয় দেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে পুরান ঢাকার বাসা থেকে তুলে নেয়া হয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় নিউমার্কেট এলাকা থেকে কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনকে তুলে নেয়ার খবর পাওয়া যায়। নিউমার্কেটে তার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাকে তুলে নেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
২৯ নভেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা থেকে খন্দকার রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তিকে তুলে নেয়া হয় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে। রুহুল আমিন জামায়াতের হাতিরঝিল থানা পূর্ব সেক্রেটারি বলে জানা যায়। ঘটনার সময় তিনি তার কর্মস্থলে ছিলেন। তাকে তুলে নেয়ার দৃশ্য কর্মস্থলের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। সেখানে কয়েকজনের চেহারা স্পষ্ট দেখা গেছে। তবে তারা ডিবির সদস্য কি না তা জানা যায়নি। রুহুল আমিনের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সুরমা গতকাল বলেছেন, ২৯ নভেম্বর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তার স্বামীকে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গেছে। যারা নিয়ে গেছে তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এ দিকে একের পর এক নিখোঁজ হচ্ছে অন্য দিকে বিভিন্ন স্থান থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জের পটকজোর বেড়িবাঁধসংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদী থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার পরনে ছিল জিন্সের প্যান্ট। তবে কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের নয়া দিগন্তকে বলেছেন, লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্নহ্ন পাওয়া যায়নি। লাশটি সাত-আট দিনের হতে পারে।

এর আগে ২২ নভেম্বর উদ্ধার হয় অপর এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ। ১৯ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার হয় এক বিএনপি নেতার লাশ। ওই নেতাকে কে বা কারা অপহরণ করে নেয়ার পরদিন লাশ পাওয়া যায়। যশোরের কেশবপুরের বিএনপির ওই নেতা আবু বকর সিদ্দিক (৬৫) ঢাকায় এসেছিলেন দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য। গত ১৮ নভেম্বর হোটেল থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন ১৯ নভেম্বর তার লাশ উদ্ধার হয় বুড়িগঙ্গা নদী থেকে। অপহরণের পর তিনি তার ভাতিজা সুমনের সাথে মোবাইলে কথা বলেন। তিনি দুই দফায় বিকাশ নম্বরে টাকা দিতে বললে পরিবারের পক্ষ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। এ টাকা নেয়ার পরও অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দেয়নি। এ দিকে ঘটনার পর দুই সপ্তাহ পার গেলেও কারা আবু বকরকে তুলে নিয়ে হত্যা করে, তা জানতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আবু বকরের ঘটনার পর মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এখন কেউ নিখোঁজ হলেই তাদের পরিবার অস্থির হয়ে ওঠেন অজানা আতঙ্কে। ব্যারিস্টার যোবায়ের ও খন্দকার রুহুল আমিনের পরিবারে এখন কান্নার রোল চলছে। তারা বিভিন্ন দফতরে ঘুরছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। রুহুল আমিনের স্ত্রী বলেছেন, তিনি ডিবি অফিস, হাতিরঝিল, রমনা ও পল্টন থানায় যোগাযোগ করেছেন। প্রতিদিন যাচ্ছেন। কিন্তু তার স্বামীর কোনো হদিস নেই। মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমানের সাথে গতকাল সন্ধ্যায় কথা বলা হলে তিনি জানান, ওই নামে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/369048