৩০ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১২:৩৯

আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে মনোনয়নপত্র জমাদান পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে মতাসীন আওয়ামী লীগের এমপিরা বিধি লঙ্ঘন করে শত শত নেতাকর্মী সাথে নিয়ে মিছিল করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মতাসীন দলের আচরণবিধি লঙ্ঘনে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে ভোটারদের মধ্যে। এসব বিষয় দেখেও না দেখার ভান করছে নির্বাচন কমিশন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আচরণবিধি লঙ্ঘনের এসব ঘটনা ছবিসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও তা মানতে নারাজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সারা দেশে কোথাও কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থীদের সাথে পাঁচ-সাত সমর্থক মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছিলেন। দলীয় কর্মী এবং সমর্থকেরা মূলত বাইরে অপো করেছেন। সেটিকে শোডাউন বলা যাবে না।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮-এর আচরণ বিধিমালার (১৮) ধারা অনুযায়ী কোনো প্রার্থী ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহনসহকারে মিছিল কিংবা মশাল মিছিল বের করতে পারবেন না কিংবা কোনো রকমের শোডাউন করতে পারবেন না। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো ধরনের মিছিল কিংবা শোডাউন করা যাবে না। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থী সাতজনের বেশি লোক সাথে নিতে পারবেন না।
অন্য দিকে বিরোধী দল সমর্থিত একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করার ঘটনাও ঘটেছে। এতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
মনোনয়নপত্র জমা নেয়ার শেষ দিন গত বুধবার রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জামায়াত নেতা গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র জমা নেয়নি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বুধবার সকালে গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীবের কাছে জমা দেয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র জমা নিতে টালবাহানা শুরু করেন। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে শেষ সময় পর্যন্ত মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
কেন মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হবে না এমন প্রশ্ন করলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে কালপেণ করেন। প্রার্থীর পে সব বৈধ কাগজপত্র নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে এলেও প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী না থাকার অজুহাত দেখিয়ে মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হয়নি।

নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনের প্রথম দিকেই যদি এমন আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। তাহলে ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া একেবারেই অযৌক্তিক নয়। এমন চলতে থাকলে মানুষ নির্বাচনের প্রতি অনীহা দেখাতে পারে। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নিরপে না হয় তাহলে অর্থবহ নির্বাচন হবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীগুলো যদি নিরপেতা প্রদর্শন না করে তাহলে নিরপে নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকারের এই দুই অংশ যদি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে, তাহলে নির্বাচন কমিশন চাইলেও তা ঠেকাতে পারবে না। তাই সরকারের আন্তরিকতা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের এই আন্তরিকতা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার মাধ্যমেই প্রকাশিত হবে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন এ বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশন আমলে নিচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। প্রথম থেকেই যদি এসব বিষয়ে গুরুত্ব না দেয়া হয় তাহলে পরে এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কাজেই এখন থেকেই এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ একের পর এক ফাউল করছে। সরকার ও ইসি নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এভাবে চলতে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/368529