২৯ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১১:৫১

চলতি হিসাবে ঘাটতিতে উদ্বেগ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন

চলতি হিসাবে ঘাটতি অর্থনীতিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বলা হচ্ছে- চলতি হিসেবে ঘাটতির কারণে দেশের পণ্যের মূল্য সূচকের ওপরে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে আমদানিনির্ভর পণ্যের মূল্য বেড়ে যেতে পারে। ফলে বেড়ে যাবে দেশের অভ্যন্তরে জিনিসপত্রের দাম।
গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সভাকে অনুষ্ঠিত ‘মুদ্রা ও মুদ্রা হার বিনিয়ম সংক্রান্ত কো-অডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেটের সম্পদ কমিটির বৈঠকে এসব মতামত তুলে ধরা হয় বলে বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বহির্বিশ্বের সাথে লেনদেনে বাংলাদেশের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৩৬ কোটি ডলার। বহির্বিশ্বের সাথে পণ্য ও সেবাবাণিজ্য, রেমিট্যান্সসহ অন্যান্য আয়ের আদান-প্রদান মিলিয়ে চলতি হিসাব করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েছে। এ সময়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৬৫ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে আমদানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। রফতানি বেড়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

বৈঠকে মতপ্রকাশ করা হয়, আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি কমবে না। ফলে জিডিপির প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ধরে রাখা সম্ভব হবে। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কাও রয়েছে।
বৈঠকে ফিসকাল কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সদস্যরা বলেন, চলতি হিসাবে ঘাটতির কারণে দেশের পণ্যের মূল্য সূচকের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ইতিবাচক চিত্র উঠে এসেছে। চলতি অর্থবছরে সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭.৮৬ শতাংশ ধরে রাখতে পারবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে আগামী জানুয়ারিতে কমানো হতে পারে। অবৈধভাবে যাতে কেউ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে না পারেন সেজন্য সবার বিনিয়োগ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বৈঠকে আরো উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকের ঋণপত্র খোলার হার চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। কারণ নির্বাচনের অনিশ্চিয়তা এবং দেশে বাম্পার ফলনের আশায় ব্যবসায়ীরা নতুন করে আর এলসি খুলতে চাচ্ছেন না।
বৈঠকে চলতি অর্থবছরে চলতি হিসেবে বিশাল ঘাটতি সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ও চলতি বছর অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ; কিন্তু বর্তমানে এ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বৈঠকে, আমদানি, রফতানি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় বলে জানা গেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/368226