২৯ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৯

নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে না

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল: গত সোমবার এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল বলেছিলেন, দেশের মানুষ নির্বাচনকে উৎসব হিসেবে দেখতে চায়। সেই জায়গাতেই মানুষ চলে যাচ্ছে। জনগণকে বাধা দিয়েও বিরত রাখা যাবে না নির্বাচনী এই উৎসব থেকে। জনগণ তৈরি হয়ে আছে নির্বাচনের জন্য। তারা সঠিকভাবেই ভোট দেবে। তাদের মত সঠিকভাবে প্রকাশ করবে। এখানে কারও বাধা ও নাশকতা কাজে দেবে না। নির্বাচনী কাজে কাউকে কোথাও বাধা দেয়া হবে না। যদি কেউ এমন করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সাথে কেউই একমত হতে পারছেন না। কারণ ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই এখনই হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের পুত্র তানভীর ইমাম ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ভোটের দিন কেন্দ্র দখল রাখতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ ফরিদপুরে এক সভায় বলেছেন নৌকার বিপক্ষে গেলে শালাদের গুলী করে মারবো। কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, নির্বাচনের বিজয় আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এছাড়া গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্নস্থানে হামলা, গুম, গ্রেফতারের ঘটনায় বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় সরকারের একতরফা নির্বাচনের ন্যায় আরেকটি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ। সরকারের এসব কর্মকা-ে সহযোগিতা করছে নির্বাচন কমিশন।

সূত্র মতে, মনোনয়নপত্র জমাদানকালে বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কর্তৃক হামলা শিকার হয়েছে বলে দলটি অভিযোগ করেছে। বিএনপি জানায়, বরিশালে নাজিউদ্দিন আলমের মনোনয়ন জমাদানকালে হামলার শিকার হয়েছেন। গতকাল বুধবার শরিয়তপুর ৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুর উদ্দিন অপুর গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়েছে। এতে ৫০/৬০ জন আহত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বরাবরে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া গতকাল মুন্সিগঞ্জের-২ (টঙ্গিবাড়ী-লৌহজং) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান সিনহার মনোনয়নপত্র জমা দানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনার জন্য বিএনপির দুই প্রার্থী মনে করছেন আওয়ামী লীগের ইন্ধনে এ সংঘর্ষ হয়েছে।
সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছে পুরোদমে। কিন্তু রাজনৈতিক দলসহ দেশের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরাই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। তারা বলছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখনো যেভাবে বেপরোয়া আচরণ করছে, যেভােিব পুলিশ ও জনপ্রশাসনকে ব্যবহার করছে সেজন্যই এমন শঙ্কা মানুষের মনে।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও পুরো দেশকে সন্ত্রাসের উর্বর ক্ষেত্র বানাবে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে জনগণের মধ্যে ততো সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গোপন বৈঠকের তথ্য ফাঁস হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ ও ইসি’র পক্ষ থেকে এসব বৈঠকের কথা অস্বীকার করা হলেও তথ্যগুলো যে সঠিক এটির বাস্তব প্রমান পাওয়া গেছে। রিজভী জানান, আওয়ামী লীগ যে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করবে এটা তাদের মনোনীত প্রার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় ঘোষনাও দিয়েছেন। গণতন্ত্র, প্রশাসন, সুশাসন ধ্বংসকারীদের অন্যতম হোতা এইচ টি ইমাম তার গুণধর পুত্রকেও নিজের ইমেজে তৈরী করেছেন। এইচ টি ইমামের পুত্র তানভীর ইমাম ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ভোটের দিন কেন্দ্র দখল রাখতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ ফরিদপুরে এক সভায় বলেছেন নৌকার বিপক্ষে গেলে শালাদের গুলী করে মারবো। এই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গেমপ্ল্যান খুব সুস্পষ্ট, সেটি হলো বাংলাদেশে একটি পক্ষই থাকবে, সেটি হলো আওয়ামী লীগ ও তার দোসর’রা। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু’র অভিমুখী হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্তুতি প্রশ্নসাপেক্ষ। এই কারণে কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, নির্বাচনের বিজয় আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সেই একতরফা নির্বাচনের আভাসই আমরা ফুটে উঠতে দেখছি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮৫টি উপজেলায় নির্বাচনী কর্মকর্তা নেই, যা ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমে সংবাদটি বেরিয়েছে। এই অবস্থায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বাছাই করে আওয়ামীমনা কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে। আমাদের অভিযোগগুলী অতিকথন নয়, বরং নির্বাচন নিয়ে সরকারের চক্রান্তের গভীরতা ও ব্যাপ্তি আরও স্পষ্ট হচ্ছে।

এদিকে গতকাল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে ধানের শীর্ষ প্রার্থীসহ অন্যরাও নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ মার্কায় মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক বলেন, বর্তমানে দেশে স্বৈরশাসন চলছে। জনগণ এই স্বৈরশাসকের হাত থেকে মুক্তি চায়। আসন্ন নির্বাচনে ভোটে বিএনপিকে জয়লাভ করানোর মাধ্যমে তা সম্ভব হবে। তবে যেভাবে ক্ষমতাসীনরা দমন পীড়ন হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছে তাতে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা শঙ্কিত। 
নির্বাচন কমিশনই (ইসি) নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। ঢাকা-৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো তৈরি হয়নি, বরং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন চেষ্টা করছেন। তার কথাবার্তায় মনে হয়েছে ইসি সচিব নির্বাচন চান না, পুরো নির্বাচন ধ্বংস করে দেবেন। সুব্রত বলেন, নির্বাচন কমিশনের কারণে নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হলে এটা জাতির জন্য কলংক নিয়ে আসবে।

দেশের মানুষ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে ভয় পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ঢাকা ১২ আসন (তেজগাঁও-বেগুনবাড়ি) থেকে নির্বাচন করবো। প্রথমে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম। এজন্য তেজগাঁও-বেগুনবাড়ি এলাকার চার হাজার নাগরিকের সমর্থন ও স্বাক্ষর নিয়েছিলাম। কিন্তু গতকাল দেখলাম তারা আমাকে সমর্থন দিয়ে ভীতিকর অবস্থায় আছেন। তাই আমি গণতান্ত্রিক বাম জোট থেকে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কোদাল প্রতীকে নির্বাচন করবো। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতান্ত্র রক্ষার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। মানুষ এখনও মনে করছে তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েই তারা ভয় পাচ্ছেন, তাহলে ভোট দিবেন কিভাবে? এতেই বুঝা যায় ভোটের পরিবেশ কেমন।
নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুস সালাম। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না-তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আব্দুস সালাম বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা সেটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। আমি এখনও বলছি, জনগণ যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে। আমি আশা করি, অন্তত আজকে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের আর গ্রেফতার করা হবে না। রাতে গিয়ে কোনো বাসায় হামলা করা হবে না। তাহলে জনগণ মনে করবে যে তার ভোট সে দিতে পারবে। তিনি বলেন, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের কোনো লক্ষণই নেই। একের পর এক বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ হয়তো চাচ্ছে আমরা নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে চলে আসি। কিন্তু আমরা শেষবিন্দু পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকতে চাই। সরকার যতই হুমকি দেখাক না কেন বিএনপি নির্বাচনী মাঠে থাকবে।
সদ্য আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক জোট গণঐক্যের সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আমাদের অনেক প্রশ্ন আছে। ইসির প্রতি আমাদের আস্থা নেই। তারা এমন কোনো কাজ এখনও করতে পারেনি, যাতে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা আসবে।
আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবে কি না, তা নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে গণতন্ত্রের লড়াই হিসেবে দেখছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া আন্দোলনের অংশ। বিএনপির নেতা–কর্মীদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হচ্ছে জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য রায় দেওয়া হয়েছে। জনগণ যদি নিরাপদে ভোট দিতে পারে, তাহলে বিপুল ভোটে বিএনপি জয়লাভ করবে। জনগণ প্রত্যাশা করে নির্বাচনে সব দল সমান সুযোগ পাক।

সূত্র মতে, নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতির ধূম্রজাল ততই বিস্তৃত হচ্ছে। নির্বাচন, ভোট এখন ‘কৌশল’ রাজনীতিতে আটকা। সরকার চাইছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, তবে সে নির্বাচনে বিরোধীপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থানে থাকুক। এ কারণে নানা কৌশলের ফাঁদে বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টকে ফেলতে চাইছে সরকার। বিশেষত ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের শেষ পর্যন্ত কী হাল হয়, তাই নিয়ে ধন্দে দেশবাসী। কারণ যেভাবে মামলা হামলা চলছে তাতে বিরোধী পক্ষ রাজপথে নামতে পারে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত সবাই। 
এ বিষয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকার একটি পাতানো নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে, ২০১৪ সালের মতো। এবার ভিন্ন কৌশল নিয়ে একতরফা নির্বাচন করে ফের ক্ষমতায় আসতে চাইছে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা সরকারের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে চাই। তিনি বলেন, বিএনপির জনপ্রিয়তা সরকারের মধ্যে দিনদিন হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণেই সরকার জুলুম আরও বাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে বিএনপির শতশত নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছে। রাজনৈতিক মামলায় অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপিকে মাঠছাড়া করতেই সরকার নিপীড়ন করছে। ‘আমরা মনে করছি, সামনের দিনে সরকার আরও নির্যাতন চালাবে। ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এ সময় মনোনয়নপ্রত্যাশী আরও অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন, কারও কারও মনোনয়ন বাতিল হতে পারে। আশঙ্কা করছি, গুম হয়ে যেতে পারেন নেতারা। এ কারণেই আমরা প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে বলেছি।
এদিকে গতকাল রাতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 
ঢাকা-৭ (লালবাগ) আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সহ-সভাপতি এবং সাবেক কমিশনার মোশারেফ হোসেন খোকন গতকাল দুপুরে মনোনয়ন পত্র দাখিল করে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পর থেকে সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজ নেয়ার পরও তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীই তাকে গ্রেফতার করেছে। আমি অবিলম্বে তাকে সুস্থ অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি জানান, শরীয়তপুর-৩ (ভেদরগঞ্জ-গোসাইরহাট-ডামুড্যা) আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা মিয়া নুর উদ্দিন অপু নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন পত্র দাখিলের উদ্দেশ্যে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের দিকে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমনকি মিয়া নুর উদ্দিন অপুকে কার্যালয়ে ঢুকতেও দেয়া হয়নি। সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময় আওয়ামী গুন্ডারা বিএনপি নেতাকর্মীদের নিকট থেকে ১৫টি মোটরসাইকেল কেড়ে নিয়ে যায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ওপর আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা এবং মোটরসাইকেল লুটের বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলে যে, তাদের কিছুই করার নেই। এরপর একই নির্বাচনী এলাকা গোসাইরহাট এলাকার মধ্য দিয়ে ফিরে আসার সময় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সভাপতির নেতৃত্বে সশস্ত্র ক্যাডার’রা মিয়া নুর উদ্দিন অপু’র গাড়ীবহরে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে ভাংচুর ও বিএনপি নেতাকর্মীদের আহত করে।

গত দুইদিন ধরে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এর শাহজাহানপুরের বাসা সার্বক্ষনিক ঘিরে রাখছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েকদিন ধরে মির্জা আব্বাস এর বাসায় ঢোকা ও বেরুনোর সময় নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল থেকে এপর্যন্ত পল্টন থানা ১৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক মো: মুন্না, মো: বেলাল হোসেন, কামাল, শরীফ খান, মুগদা থানা যুবদল য্গ্মু আহবায়ক মেহরাজ উদ্দিন মিল্লাত, মিথুন মোল্লা, বাবু, শাহবাগ থানা প্রেসক্লাব ইউনিট বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শিপন, শাহবাগ থানা জাসাস এর সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শরীফ পাঠান, ঢাকা মেডিকেল ইউনিট ছাত্রদল সভাপতি মো: আজিম, পল্টন থানা ছাত্রদল নেতা নোমানসহ ১৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। মির্জা আব্বাস সাহেবের বাসা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সর্বক্ষণ ঘিরে রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বংশাল থানা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি আদিল, ৩২ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা নাজিবুল্লাহ, ৩৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা তারেক মাহমুদ, শহীদুল্লাহ, সোহেল, আরিফ ও কামালসহ আরও কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি হবিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

 

http://www.dailysangram.com/post/355183