৯ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৩:৩৫

এলএনজি পাইপলাইনের ত্রুটি, গ্যাস সংকটে সারাদেশ

পাইপ সারাতে লাগবে আরো এক সপ্তাহ, সংকটের মধ্যে আরো ঘাটতি ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস

ত্রুটিমুক্ত হতে পারছে না সমুদ্রের তলদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) পাইপলাইন। আট বছর আগে গৃহীত প্রকল্পটির পাইপলাইনের ত্রুটি কয়েক দফায় সারানোর পর বাণিজ্যিকভাবে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয় গত ১৮ আগস্ট। কিন্তু চালুর তিন মাস না পেরোতেই ফের ত্রুটি দেখা দিয়েছে পাইপলাইনে। বিঘ্ন হচ্ছে গ্যাস সরবরাহ।

 

গ্যাস সংকট কাটাতে সরকার যে এলএনজি বিদেশ থেকে আনছে এর পাইপলাইন নিজেই এখন একটি সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এর ত্রুটি সারানোর জরুরি ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় শীত শুরুর আগেই তীব্র গ্যাস সংকটে পড়েছে সারাদেশ। এর ফলে একদিকে শিল্প-উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে আবাসিক গ্রাহকরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। সামর্থ্যবানরা এলপিজি (সিলিন্ডার গ্যাস) গ্যাস কিনে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। কিন্তু ‘নূন আনতে পানতা ফুরায়’ লোকজন গ্যাসের অপেক্ষায় থেকে কিংবা একবেলা কেরোসিন তেলের চুলায় রান্না করে দিন পার করছেন। তবে এ সংকটে বিক্রি বেড়েছে সিলিন্ডার গ্যাসের।

 

পেট্রোবাংলা এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) সূত্র জানায়, গত ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরের তলদেশে এলএনজি পাইপলাইনে ঐ ত্রুটি দেখা দেয়। এতে জাতীয় গ্রিডে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। ভাসমান টার্মিনাল ও সমুদ্র তলদেশের পাইপলাইনের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলের হাইড্রোলিক ভাল্বটি অকার্যকর হয়ে গেছে। ফলে পাইপলাইনে গ্যাস আসছে না। অকার্যকর হয়ে যাওয়া হাইড্রোলিক ভাল্বটি ৪০ মিটার পানির তলদেশের পাইপলাইনে স্থাপিত। কিন্তু এটি মেরামত করার জন্য তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেই। হঠাত্ কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে তা সারানোর জন্যও কোনো বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীদল নেই। সব মিলিয়ে ত্রুটি সারাতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

 

এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার পরিচালক (উত্পাদন ও বিপণন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ত্রুটি সারাতে কিছু কারিগরি সরঞ্জাম দরকার। সেটি এ মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই। তবে একটি দক্ষ টিম প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে রওনা দিয়েছে গত বুধবার। আজ শুক্রবার তাদের কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছার কথা। এরপর ত্রুটি সারানোর কাজ শুরু করবে। এখন পর্যন্ত যতটুকু ত্রুটি সম্পর্কে জানা গেছে তা মেরামতে কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে বিশেষজ্ঞদের প্রত্যক্ষ যাচাইয়ের পর বোঝা যাবে কতদিন সময় দরকার হবে।

 

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ? বলেন, আমাদের ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি স্থাপন এবং পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি। তারা পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থাপিতব্য সামিটের টার্মিনাল প্রকল্পেরও ঠিকাদার। ওই প্রকল্প থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সিঙ্গাপুর থেকে আসা ডুবুরিদলের সাথে যোগ দিবেন।

 

এদিকে বিদ্যমান ঘাটতির মধ্যেই এলএনজি সরবরাহ স্থগিত থাকায় গত ৫ দিন ধরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা এবং সব শ্রেণির গ্রাহক আরো সংকটে পড়েছেন। তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানি সূত্র জানায়, এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আগে ঢাকায় চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি ছিল প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট। এখন আরো ২০ কোটি ঘনফুট ঘাটতি বেড়ে মোট ৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। ঢাকাসহ কোম্পানিটির আওতাধীন এলাকায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ২১০ কোটি ঘনফুট।

 

সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর, রামপুরা, আজিমপুর, লালবাগসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। কোনো কোনো এলাকায় গভীর রাতে গ্যাস পাওয়া গেলেও সকালে কিংবা দিনের বেলা গ্যাস পাওয়া যায় না। অনেক এলাকায় রাতে এবং দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাস থাকে না। শুধু সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যায়; এরপর আর ওই এলাকাগুলোতে গ্যাস থাকে না। আর সব এলাকাতেই গ্যাসের চাপও স্বাভাবিকের চেয়ে কম। এমন পরিস্থিতিতে কেউ এলপিজি, ইলেক্ট্রিক চুলা বা কেরোসিন তেলের চুলার মত বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে রান্না করছেন। কেউবা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। সব মিলিয়ে জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটেছে।

 

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। দৈনিক গ্যাস উত্পাদন করা হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। ৩০ কোটি ঘনফুট সমপরিমাণ এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর সরবরাহ ৩০০ কোটি ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে।

 

ইত্তেফাক/অারকেজি 

http://www.ittefaq.com.bd/national/2018/11/09/177469.html