৯ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৩:৩১

চার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নীতিমালা

চারটি বিশেষ শর্তে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো এবং বেতনভাতাদি সংক্রান্ত নীতিমালায় সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গতকাল এসব শর্তের কথা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মহানগরে এক কিলোমিটার, পৌরসভায় দেড় এবং মফস্বলে দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটির বেশি মাদরাসা থাকলে তা একীভূত করতে হবে। বাজেটের ভারসাম্যের প্রতি খেয়াল রেখে মাদরাসাগুলোতে পর্যাক্রমে শিক নিয়োগ করতে হবে। শিকদের দিতে হবে প্রশিণ। কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ করতে হবে শিক।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী গত ২০ সেপ্টেম্বর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপনের জন্য নীতিমালার যে অনুমোদন দিয়েছিলেন, তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সম্মতির জন্য পাঠানো হলে গত ৭ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়ার সময় চারটি শর্তারোপ করে।
এ নীতিমালা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া পর যে প্রজ্ঞাপন জারি হলো, তাতে ইবতেদায়ি শিকদের দীর্ঘ দিনের বঞ্চনার অবসান হলো এবং এসব শিক্ষক এখন থেকে এমপিভুক্ত শিক্ষকদের মতো প্রতি মাসেই বেতনভাতা পাবেন। তবে তাদের চারটি শর্ত পূরণ করতে হবে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান শিকেরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিকদের মতো সমান অর্থাৎ জাতীয় বেতন স্কেলের ১১ গ্রেডে এবং সহকারী শিকেরা ১৬ গ্রেডে বেতনভাতা পাবেন। বর্তমানে প্রধান শিকেরা দুই হাজার ৫০০ আর সহকারী শিকেরা দুই হাজার ৩০০ টাকা করে সম্মানি পেতেন।
দেশে দুই ধরনের ইবতেদায়ি মাদরাসা আছে। একটি দাখিল বা এর উচ্চতর মাদরাসার সাথে সংযুক্ত, আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র। বর্তমানে এমপিওভুক্ত সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদরাসার শিকেরা নির্ধারিত হারে বেতনভাতাদি পেয়ে আসছেন। ওই সব মাদরাসার প্রধান শিকেরা মাসে ১০ হাজার ৩৮৮ টাকা এবং সহকারী শিকেরা মাসে ৯ হাজার ৯৮৮ টাকা হারে বেতনভাতা পাচ্ছেন। 
বাংলাদেশ শিা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যানুযায়ী, দেশে তিন হাজার ৪৩৩টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার ২৪৩ জন শিক কর্মরত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিার্থী সংখ্যা পাঁচ লাধিক। শিানীতি ২০১০ অনুযায়ী শিার অন্যান্য ধারার সাথে সমন্বয় রেখে ইবতেদায়ি পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, আইসিটির মতো বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় শিার বিষয়গুলো পড়ানো হয়।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী মাদরাসা স্থাপনে অনুমোদনের দেয়ার কাজ করবে মাদরাসা বোর্ড। তবে যেকোনো অনুমোদন দেয়ার আগে বোর্ডকে সরকারের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। ব্যক্তির নামে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা যাবে। প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাইলে আগে মাদরাসার নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে। পরে জমির সেই দলিলসহ মাদরাসা স্থাপনের আবেদন করতে হবে। বছরের প্রথম তিন মাস কেবল আবেদন নেয়া হবে। আবেদনপত্রের সাথে প্রতিষ্ঠানের নামে স্থায়ী আমানত হিসাবে ব্যাংকে ২০ হাজার টাকার গচ্ছিত থাকার প্রমাণপত্র দিতে হবে। প্রস্তাবিত মাদরাসার নামে মফস্বল এলাকার শূন্য দশমিক ৩৩ একর জমি থাকতে হবে। শহর বা পৌর এলাকায় শূন্য দশমিক ২০ একর ও মহানগর এলাকায় শূন্য দশমিক ১০ একর জমি থাকতে হবে। মাদরাসার নামে রেজিস্ট্রি করা জমির নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের হালনাগাদ দাখিলা থাকতে হবে।
ইবতেদায়ি সমাপনী পরীায় মহানগর/পৌর/শহর এলাকার প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম ২০ শিার্থী অংশ নিতে হবে। তাদের মধ্যে ১৫ জন পাস করতে হবে। গ্রাম এলাকায় সমাপনী পরীায় অংশ নিতে হবে ১৫ জন। তাদের মধ্যে ১০ জন পাস করতে হবে।
নীতিমালায় মাদরাসার ভবনের ব্যাপারে আটটি শর্তারোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ন্যূনপে টিনের বেড়াসহ টিনসেট ঘর থাকতে হবে। শিকের বসার জন্য একটি ক ও পাঁচটি শ্রেণিক থাকতে হবে। শ্রেণিকরে আয়তন হবে মফস্বলে দেড় হাজার এবং মহানগর/পৌর/শহর এলাকায় দুই হাজার বর্গফুটের। শিকের করে আয়তন হবে দেড় শ’ বর্গফুট। বসার জন্য পর্যাপ্ত আসবাবপত্র, মানসম্মত টয়লেট, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে পর্যায়ক্রমে সংযোগ নিতে হবে। শিার্থীদের জন্য খেলার মাঠ ও পাঠাগার থাকতে হবে।
নতুন মাদরাসা স্থাপনের ব্যাপারে নীতিমালায় বলা হয়েছে, দুই মাদরাসার মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব থাকতে হবে। এ েেত্র দূরত্ব মহানগর এলাকায় এক কিলোমিটার, শহর বা পৌর এলাকায় দেড় কিলোমিটার এবং মফস্বল এলাকায় দুই কিলোমিটার থাকতে হবে। 
নীতিমালায় উল্লেখযোগ্য দফাগুলোর হলো মহানগর, পৌর ও শহর এলাকার মাদরাসায় কমপে ২০০ এবং মফস্বল এলাকা ১৫০ জন শিার্থী থাকতে হবে। প্রতিটি মাদরাসায় একজন প্রধান শিক, চারজন সহকারী শিক ও একজন অফিস সহায়ক থাকবেন। প্রধান শিকের শিাগত যোগ্যতা হবে ফাজিল (ডিগ্রি পাস) আর সহকারী শিকদের এইচএসসি পাস। চারজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। অফিস সহায়কের এসএসসি পাস হতে হবে। শিাজীবনে তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য হবে না। মাদরাসা শিা বোর্ড ও জাতীয় শিাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদিত সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তক পাঠদান করতে হবে। সহশিা হিসেবে কিরাত, হামদ, নাত প্রতিযোগিতা, বার্ষিক ক্রীড়া, খেলাধুলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা, বৃরোপণ, কাব দল (স্কাউটিং), পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম করতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপজেলা ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক কমিটি গঠিত হবে। এ কমিটির সভাপতি হবেন ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) আর মেট্রোপলিটন এলাকায় জেলা শিা কর্মকর্তা, সদস্য সচিব হবেন উপজেলা মাধ্যমিক শিা কর্মকর্তা। কমিটির অপর সদস্যরা হবেন উপজেলা বা থানা সদরের এমপিওভুক্ত একটি ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান, স্থানীয় শিানুরাগী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের একজন প্রতিনিধি।

http://www.dailynayadiganta.com/city/363309/%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5-%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%A6%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%B2-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE-