৮ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ২:৩৩

গ্যাস সঙ্কট কাটছে না

থাকবে আরো দুই সপ্তাহ

মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ ত্রুটি পূর্ণ লাইন চিহ্নিত করা হলেও গতকাল পর্যন্ত মেরামতের কাজ শুরু হয়নি। এদিকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করতে আরো ১০দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ফলে পাইপলাইনে গ্যাস আসছে না। সাগরের নিচে পাইপলাইনের সমস্যার কারণে চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রামের পাশাপাশি রাজধানীসহ সারাদেশে ও গ্যাস সংকট নতুন করে দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে তিতাস দেশের মোট ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাস সরবরাহ করে। এরমধ্যে বর্তমানে ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ভাসমান টার্মিনাল ও সমুদ্র তলদেশের পাইপলাইনের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলের হাইড্রোলিক বাল্বটি অকার্যকর হয়ে গেছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, ভাসমান টার্মিনাল ও সমুদ্র তলদেশের পাইপলাইনের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলের হাইড্রোলিক ভালভটি অকার্যকর হয়ে গেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিটের ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের জন্য যারা এখন মহেশখালীতে কাজ করছেন, তাদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারা (আজ বুধবার) গতকাল কাজ করার কথা । কিন্তু বিকাল পযন্ত আসতে পারেনি।

তিতাস গ্যাস কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল ইনকিলাককে বলেন,এলএনজির কারণে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।

আরপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, এলএনজি সরবরাহ ১৫ তারিখের দিকে ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, অকার্যকর হয়ে যাওয়া হাইড্রোলিক বাল্বটি ৪০ মিটার পানির নিচে পাইপলাইনের মধ্যে আছে। অভিজ্ঞ লোক ছাড়া মেরামত সম্ভব নয়। তাই এই কাজের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিটের ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের জন্য যারা এখন মহেশখালীতে কাজ করছেন, তাদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তাদের ডুবুরি আছে। এই ধরনের কাজের জন্য বিশেষায়িত জাহাজ প্রয়োজন। সেটিও এখন মহেশখালীতে আছে। কামরুজ্জামান বলেন, পাইপলাইনের ভেতরে খোলা-বন্ধের যে জায়গাটি, সেখানে হাইড্রোলিক ফ্লুয়িড থাকে। ফ্লুয়িড বের হয়ে গেছে। এ কারণেই বাল্বটি কাজ করছে না। এমনিতে পাইপলাইনে কোনও সমস্যা নেই। কাজ খুব বেশি নয়। মাটির ওপরে থাকলে আধা ঘণ্টায়ই শেষ করা সম্ভব ছিল। সবমিলিয় আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি কোনও কারণে এই বিশেষজ্ঞ দলটি এই মেরামতের কাজ এখনো শুরু করতে না নাই। তাহলে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল আনতে হবে। ব্যাকআপ হিসেবে সিঙ্গাপুর থেকে একটা টিম আনার কথা হচ্ছে। তবে, সেক্ষেত্রে সময় আরও বেশি লাগতে পারে।

পেট্রোবাংলার এলএনজি সেলের সূত্র জানা গেছে, মাত্র আড়াই মাস আগে গত ১৮ আগস্ট থেকে পাইপলাইনে এলএনজির বাণিজ্যিক সরবরাহ শুরু হয়। এর আগেও পাইপলাইনের মধ্যেকার বিশেষ সংযোগে ত্রুটির কারণে নির্ধারিত সময়ে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয়নি। অকার্যকর হয়ে যাওয়া হাইড্রোলিক বাল্বটি ৪০ মিটার পানির তলদেশের পাইপলাইনে স্থাপিত।

বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ছাড়া এটির মেরামত সম্ভব নয়। তাই এই কাজের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিটের ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের জন্য যারা এখন মহেশখালীতে কাজ করছেন, তাঁদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তাঁদের দিয়ে কাজ হলে কয়েক দিনের মধ্যে পুনরায় এলএনজির সরবরাহ শুরু হতে পারে। আর তা না হলে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনতে হবে। তাতে কত দিন লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। গত ১৮ আগস্ট থেকে ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছিল। ফলে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা সম্পূর্ণ গ্যাসই (দৈনিক প্রায় ২৭০ কোটি ঘনফুট) চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা সম্ভব হওয়ায় চাহিদার তুলনায় গ্যাসের ঘাটতি কমেছিল। এখন এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবার জাতীয় গ্রিড থেকেই চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে। ফলে এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর গ্যাসের ঘাটতি যেটুকু কমেছিল, তা আবার বেড়েছ। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিল্পকারখানা, সিএনজি স্টেশন, বাসাবাড়ি-নির্বিশেষে সব শ্রেণির গ্রাহক নতুন করে গ্যাস-সংকটে পড়েছে।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গত শনিবার সকাল থেকেই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল বুধবার বার সন্ধ্যার সময়ও সেসব এলাকায় গ্যাস ছিল না। বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ, এলপি গ্যাস, এমনকি কোথাও কোথাও জ্বালানি কাঠ দিয়ে রান্নার কাজ করা হয়। অনেকে হোটেল থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন । পুরান ঢাকায় এমনিতেই গ্যাসের সমস্যা ছিল। দুই দিন ধরে তা আরও দ্বিগুন বেড়েছে। মোহাম্মদপুর চাঁদ মিয়া হাউজিং, আলী এন্ড নুর রিয়েল এস্টেট, শ্যামলী, ফার্মগেট, উত্তরা, আজিমপুর, পান্থপথ, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর, যাত্রবাড়ি, শনির আখড়া, শ্যামপুরসহ পুরনো ঢাকায় দিনের বেলা গ্যাসের চাপ এত কম যে, রান্নাই করা যাচ্ছে না।

https://www.dailyinqilab.com/article/164367