বুধবার গণভবনে সংলাপ শেষে ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে আন্তরিক পরিবেশে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
৮ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ২:১৪

সংলাপের অভ্যন্তরে

হাস্যরসে প্রাণবন্ত 'ভাবগম্ভীর' পরিবেশ

আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপে বেশ খোলামেলা আলোচনাই হয়েছে দুই জোটের নেতাদের মধ্যে। সেখানে পরস্পরের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণাত্মক বক্তব্যও ছিল না। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বভাবসুলভ রসিকতা ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে নানা টিপ্পনীও বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সরস বক্তব্য সংলাপের পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলে। যদিও সংলাপ শেষে আলোচনায় 'সমঝোতা'র বিষয়ে কোনো পক্ষই ইতিবাচক কোনো অগ্রগতির আশ্বাস দিতে পারেনি।

গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দল ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে দ্বিতীয় দফার এই সংলাপ হয়েছে। সেখানে ১৪ দলের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমসংখ্যক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। দুই পক্ষের সাত নেতার সঙ্গে কথা বলে সংলাপের বিস্তারিত জানা গেছে।

'নির্বাচনকালীন সরকার' প্রসঙ্গ :কয়েকজন নেতা জানান, ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবিত 'নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার'-এর রূপরেখা তুলে ধরার পর এ নিয়ে কথা বলেন দু'পক্ষের নেতারা। আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এ দাবির অসারতা তুলে ধরে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যে অনির্বাচিত সরকারের দাবি তুলেছে, সেটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক; আদালতের রায়ের সঙ্গেও মেলে না। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলায় আপিল বিভাগ তার রায়ে বলেছেন, অনির্বাচিত সরকার সংবিধানের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওই রায়ের শেষ অংশে গিয়ে বলা হয়েছে, সংসদ চাইলে আরও দুটি টার্ম তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখতে পারে। এটা রায়ের কোনো অংশ নয়, পর্যবেক্ষণ। তাই সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের বাইরে গিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা যাবে না। এ ছাড়া আইনে বলা আছে 'যদি সংসদ চায়'। কিন্তু এখানে তো সংসদ চায় না। ফলে নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আনার আইনগত ও সাংবিধানিক কোনো ভিত্তি নেই।

তিনি বলেন, কথার কথা, ধরা যাক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো এবং ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটা নির্বাচন দিল। এখন এক্স, ওয়াই, জেড কেউ একজন যদি হাইকোর্টে রিট করে বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেআইনি ছিল। কাজেই ওই নির্বাচনে গঠিত সরকারও বেআইনি। তাহলে আরও

আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হবে। নির্বাচিত সরকারও অবৈধ হয়ে যাবে। যেমন পাকিস্তানে সরকার অবৈধ ঘোষিত হয়েছিল, ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন বাতিল হয়েছিল। বাংলাদেশেও সেটাই হয়ে যাবে।

এ ক্ষেত্রে আদালত থেকে সংবিধানের সপ্তম, অষ্টম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণার বিষয় তুলে ধরে রেজাউল করিম বলেন, আমরা যদি এখানে সমঝোতার ভিত্তিতেও নির্বাচন করি, সেটাও আদালত অবৈধ ঘোষণা করবে। তখন জাতি আবারও অন্ধকারে পড়ে যাবে।

ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট বলেছিল, সংবিধানের ভেতরে থেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলা দেওয়া যাবে। কিন্তু তারা দেখাক, সংবিধানের কোন ধারা কিংবা কোথায় একজন প্রধান উপদেষ্টা ও ১০ জন উপদেষ্টাকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলা আছে। তারা আজ যে ফর্মুলা দিয়েছেন, সেটি তো সংবিধানের মধ্যে পড়ে না।

জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, সরকার পক্ষ এভাবে টেকনিক্যাল সমস্যা তুললে আলোচনা এগোবে না। টেকনিক্যালি সবকিছুতে সংবিধান টেনে আনলে সমঝোতার পথ থাকে না।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমঝোতার ভিত্তিতে এটার সমাধান কোথায়? এই পর্যায়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা কোনো সমাধান দিতে না পারায় আলোচনা আর অগ্রসর হয়নি।

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ঐক্যফ্রন্টের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী গঠিত নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এখন কমিশন পুনর্গঠন করতে হলে, সেটাও রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। এখানে সরকারের কিছু করার নেই।

খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ :বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা জানতে চান, সংবিধানে কোথায় আছে, সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্বাহী বিভাগ খালাস দিতে পারবে? ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, 'অন্তত এতটুকু হোক, আমরা আপিল করলে যেন জামিনে আপত্তি দেওয়া না হয়।'

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত তার নিজস্ব গতিতে চলবে। খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনে মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন যদি বাধা দেয়, তাহলে এক বিষয়, যদি বাধা না দেয় তাহলে আরেক বিষয়। এখানে সরকারের কিছু করণীয় নেই। এরপরও যদি কিছু করণীয় থাকে, সেটা সরকার দেখবে।

গায়েবি মামলা প্রসঙ্গ :সংলাপের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক হাজার ৪৬টি 'গায়েবি মামলা' তথা রাজনৈতিক মামলা হয়েছে দাবি করে এ-সংক্রান্ত একটি তালিকা জমা দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দাবি করেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, তার অধিকাংশ অসত্য, গায়েবি ও ভুয়া মামলা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তদন্ত ও যাচাই-বাছাই শেষে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিএনপির তালিকা আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এগুলো যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন।

এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে 'গায়েবি মামলা'র তালিকা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

বিনা কারণে হয়রানি ও গ্রেফতার নয় :ঐক্যফ্রন্টের বেশিরভাগ নেতার আরেকটা দাবি ছিল, বিনা কারণে আর যেন বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার কিংবা হয়রানি না করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেন, রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হবে না। যদি কেউ আলাদা কোনো অপরাধ করে, সেটাকে বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও বিশিষ্ট 'সুশীল ব্যক্তি' ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী টেলিফোনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে বলেছেন, 'কতগুলো মেয়ে নিয়ে আসো, তাদের দিয়ে নারী নির্যাতনের মামলা কর, আর ৫০টা করে এক-একটা টিম করে হামলা কর, যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায়'। এখন এটাতে যদি মামলা হয়, সেটিও কী রাজনৈতিক হবে?

এ প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, আমরা কোনো অপরাধকেই সমর্থন করি না। প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন, 'ওই ক্ষেত্রে আইন যদি তার নিজস্ব শক্তি প্রয়োগ করে, তখন যেন বলতে আসবেন না, রাজনীতির কারণে হয়রানি করা হচ্ছে।'

ব্যারিস্টার মওদুদ একমত পোষণ করে বলেন, কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে হত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধ করেন এবং তিনি রাজনৈতিক নেতা হলেও সেটাকে রাজনৈতিক মামলা বলবেন না তারা। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

সভা-সমাবেশে বাধাদান প্রসঙ্গে :সরকারবিরোধীদের সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকারি বাধায় এলাকায় পর্যন্ত যেতে পারি না।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সভা-সমাবেশে আর বাধা দেওয়া হবে না- এটা তিনি নিশ্চিত করে বলছেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ড. কামাল বলেন, 'আমরা কি বাইরে গিয়ে আপনার রেফারেন্স দিয়ে বলব- আপনি বলছেন গ্রেফতার ও হয়রানি হবে না?' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'হ্যাঁ, আমার কথা বলবেন এবং আমিও বলে দেব। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার বা হয়রানি করা এবং অন্য কোনো ঝামেলায় যেন না ফেলা হয়, সে বিষয়টাও আমরা দেখব।'

ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে রসিকতা প্রধানমন্ত্রীর :সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের মঙ্গলবারের জনসভার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জনসভায় তার সম্পর্কে মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই যে মান্না, দলে নিয়ে এসে সাংগঠনিক সম্পাদক বানালাম। আহা, কী সাংঘাতিক বক্তৃতা আমার বিরুদ্ধে! বক্তৃতা দেওয়া ভালো, দাও ভালো করে দাও।'

জবাবে মান্না বলেন, 'বক্তৃতা না দিলে আমার রাজনীতি থাকে না।' শেখ হাসিনা বলেন, 'তাহলে তুমি আরও বক্তৃতা দাও, আরও দাও!'

এক পর্যায়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'আপনি চৌমুহনী কলেজের ভিপি ছিলেন, আমিও বদরুন্নেছা কলেজের ভিপি ছিলাম। আমার এখানে তো ছিলেন, মন্ত্রিত্বও পেয়েছিলেন। আবার ওখানে গেলেন।'

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ভারতে গিয়েছিলে, সত্য। আমি তো তোমাকে এনে ডাকসুর ভিপি করলাম। এরপর রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে বাকশাল করে আমার বিরুদ্ধে চলে গেলে। আবারও ছাত্রলীগের সভাপতি করলাম, এমপি করলাম! তুমি তো এদিক-ওদিক ঘোর। যারা এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে, তারা কোনোদিনই কিছু হতে পারে না।'

নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরামকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আপনি তো আওয়ামী লীগ করেন। আজ ওদিকে গিয়ে বসেছেন কেন?' এস এম আকরাম জানান, তিনি মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে এসেছেন। এ সময় টিপ্পনী কেটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ও আপনিও দল পাল্টাইছেন, খুব ভালো কথা।'

প্রধানমন্ত্রী এর পর ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বলেন, 'আপনি তো ছাত্রলীগ করতেন, এখন সুবিধা যেদিকে পেয়েছেন, সেদিকে গেছেন।' এ সময় ড. মোশাররফ হেসে বলেন, 'নেত্রী, নেত্রী, নেত্রী।'

প্রধানমন্ত্রীর তির্যক মন্তব্য থেকে ড. কামাল হোসেনও ছাড় পাননি। প্রবীণ এই নেতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'চাচা আপনাকে নিয়ে তো সবকিছুই করেছি। আপনি সংবিধান বানাইছেন, সুবিধা যেখানে সেখানেই গেছেন। আপনাদের প্রোগ্রামটা খুবই মজা হয়েছে। খুবই ইন্টারেস্টিং হয়েছে।'

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই মওদুদ সাহেব ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেলে ছিলেন। আবারও জেলে যেতে চান।' মওদুদ বলেন, 'নেত্রী, একটা স্পেস চাই।' তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এমন কোনো স্পেস দেব না যে অন্ধকারের লোকরা আবার আসতে পারে। অন্ধকারের লোকদের আমি আসতে দেব না। লখিন্দরের বেহুলার ছিদ্র আমি আর রাখব না। জেলে যাওয়ার শখ হলে ওগুলো নিয়ে থাইকেন। আমি জানি সহিংসতা কীভাবে মোকাবেলা করতে হয়, সেটা আমি ২০১৩-১৪ সালে বুঝেছি।' এ সময় মওদুদ বলেন, 'না, নেত্রী আমি ঠিক করেছি, আর কোথাও যাব না। শুধু চাই একটা স্পেস।'

কাদের-মওদুদ বিতণ্ডা :আলোচনার একপর্যায়ে ওবায়দুল কাদের ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নিজেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ব্যারিস্টার মওদুদ অভিযোগ করেন, তার নিজ এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। নিজ বাড়িতে গিয়ে বাধার মুখে ঘর থেকে বের হতে পর্যন্ত পারেননি তিনি। এ পর্যায়ে ওবায়দুল কাদের তাকে টার্গেট করে এমন কথা বলা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করলে দু'জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। মওদুদ কয়েকবারই বলেন, 'নেত্রী, আমি তো কারও নাম বলিনি। কাদের সাহেব নিজের কাঁধে নিলেন কেন?' একপর্যায়ে মওদুদকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আপনি তো ঢাকায় অন্যের বাড়ি দখল করেছেন।' রসিকতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাড়িটা দখল করে নিজের নামে লিখে নিলেন কেন? হাসনার (মওদুদের স্ত্রী) নামে লিখে নিলে তো কিছু বলা হতো না।'

অবশ্য বিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী দু'জনকেই থামিয়ে দিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ করার প্রয়োজন নেই।

আরও আলোচনা চায় ঐক্যফ্রন্ট :ঐক্যফ্রন্ট নেতারা আবারও আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা নির্বাচনের পক্ষে। তবে আরও আলোচনা হওয়া দরকার।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো সময় আসুন, আলোচনা হতে পারে। তবে আর যেহেতু সময় নেই, এভাবে বসা হবে না। তবে আলোচনা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা কথা বললেন নেতারা :সংলাপ শেষ হওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা কথা বলেন। মির্জা ফখরুল কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ভালো কথা। দেখা করতে চান, অবশ্যই দেখা করবেন। আমি বলে দেব।'

ব্যারিস্টার মওদুদ প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, 'আমার বাড়িটা নিয়ে গেলেন কেন নেত্রী?' জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাড়িটা নেওয়া হতো না। আপনি জালিয়াতি করতে গেছেন কেন? আদালত বলেছে, আপনাদের বাড়ি না। বাড়িটা যদি আপনি কবি জসীমউদ্‌দীনের মেয়ের নামে লিখে দিতেন, তাহলে আমি কিছুই করতাম না। আপনি বাড়ি নিয়ে দিছেন আপনার ভাইয়ের নামে। আমাদের ফরিদপুরের মেয়ের নামে দিলে কিন্তু আমি এটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতাম না।' মওদুদ বলেন, 'তাহলে আমি এখন তার নামে ফেরত দেব।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'না, না আপনাকে আর বিশ্বাস করা যায় না।'

মাহমুদুর রহমান মান্নাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, 'ও কী কথা বলবে! সকালে একটা আর বিকেলে আরেক কথা বলে। ওর সঙ্গে কী কথা বলব। সে নির্বাচন করতে চায়, করুক।' এ সময় মান্না বলেন, 'আমি জোট ছাড়া কীভাবে নির্বাচনে আসি!' জনসভায় দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে মান্না বলেন, পত্রিকায় যা লেখা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, 'মান্না বলেছেন, জীবন দিয়ে দেব, তবু খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে ছাড়ব।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মান্না তুমি এসব কথা বলেছ?' মান্না বলেন, 'আমি ওখানে যা বলেছি, আমার কথা পত্রিকায় মিসকোট করা হয়েছে। আমি এমন কথা বলিনি।' এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'টেলিভিশনে সবকিছু আছে। '

http://samakal.com/todays-print-edition/tp-first-page/article/18111591