৪ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৩:০২

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের ৪ দিন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টানা চতুর্থ দিনের মত যানজটে হাজার হাজার মানুষের মহাদুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না। সময়ের হিসেবে যানজটের বৃদ্ধির পরিমাণ কখনো ১২/১৪ ঘণ্টা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সড়কপথের এ দূরত্ব হাজার হাজার মানুষের অবর্ণনীয় দুর্গতি শুধু নয় প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার জ্বালানি অপচয় ছাড়াও থমকে গেছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। পরিবহণ ব্যয় বাড়ায় পণ্যমূল্য বেড়ে দ্বিগুণ, যার মাশুল গুনতে হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের। এই বাড়তি খরচ পণ্যমূল্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত তা ক্রেতাদের পকেট থেকেই যাচ্ছে। আবার পণ্যের দাম বাড়ায় বেচাবিক্রি কমে ক্ষতিগ্রস্ত হন উৎপাদক ও বিক্রেতারাও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সড়কপথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এক ট্রাক বা এক কাভার্ড ভ্যান (১৬-১৮ টন ধারণক্ষম) পণ্য পরিবহনে আগে খরচ পড়ত ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এখন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলো ঢাকা ও আশপাশের এলাকার জন্য ভাড়া নিচ্ছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। একই পথে কনটেইনার বহনকারী লরির ভাড়া ২২-২৪ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০-৩২ হাজার টাকা। ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিকেরা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় গত কয়েক দিনের যানজটের কারনে ভাড়া বাড়তে শুরু করেছে। এখন প্রতিদিনই ভাড়ার হার ওঠানামা করছে। গত কয়েক দিনের যানজটে এর কারণ বলে জানিয়েছেন তারা। ব্যবসায়ীরা জানান, পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে এক টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। কুমিল্লার ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন ভূঁইয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, যানজটের কারনে অনেক গাড়ি ব্যবসায়ী তাদের ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যান বের করতে চাইছেন না। এ কারণেই ভাড়া অত্যধিক বেড়ে গেছে। এই বাড়তি টাকা বিক্রির শেষধাপে এসে কার্যত ক্রেতাদেরই দিতে হচ্ছে। এভাবে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে যানজট অব্যাহত থাকলে সাধারণ জনগণই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।

চাল ব্যবসায়ী আজগর হোসেন বলেন, কয়েকদিন যাবত চলমান যানজটে চাহিদা অনুপাতে কুমিল্লায় চাল আসছে না। কুমিল্লার চালের যোগান উত্তরাঞ্চল থেকে আনা চালের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, নওগাঁ থেকে শতাধিক গাড়ী চাল নিয়ে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে আসে। পণ্য পরিবহনের জন্য গাড়ীও মিলছে না। জানতে চাইলে কুমিল্লার চাল ব্যবসায়ী ফটিক সাহা বলেন, সম্প্রতি বাজারে চালের বাজার কমতির দিকে ছিল। এখন মহাসড়কে যানজটের কারণে চালের বাজার আবার উর্ধ্বমূখী হয়ে উঠেছে। চাহিদা অনুপাতে চাল আনা যাচ্ছে না। গাড়ী ভাড়া ৪/৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। চাল ছাড়া অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দামেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

পণ্য পরিবহন সমিতি সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দৈনিক প্রায় ৩০ হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আসা-যাওয়া করে। চাহিদার ওপর ভাড়া নির্ভর করে। গাড়ীর চাহিদা বেশী থাকলে আর গাড়ীর পরিমাণ কম থাকলে ভাড়া বেড়ে যায়। এখন চাহিদা অনুপাতে গাড়ী পাওয়া যাচ্ছে না। যানজটের কারণে ২/৩ দিন গাড়ী রাস্তায় অবস্থান করতে হচ্ছে। চালকরা ভাড়া নিয়ে যেতে রাজী হচ্ছে না। মহাসড়কের কয়েক জায়গায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গাড়ি চালকরা জানায়, দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলে ঢাকামুখী পণ্যবাহী পরিবহনের ওজন পরীক্ষার নামে চাঁদাবাজির কারণে ঢাকামুখী সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বান্দরবন থেকে ঢাকাগামী কাঠ বহনকারী ট্রাকচালক আলমগীর জানান, গত দু’দিন যানজটে কুমিল্লা অংশে গাড়ী নিয়ে বসে আছি। কখন ঢাকা গিয়ে পৌঁছাব জানি না।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টানা যানজটের কারনে রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে চাপ পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয়ের ওপরও। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কুমিল্লায় কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে। কুমিল্লার বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সবজি, মাছসহ সকল ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। যানজট শুরুর আগে শীতকালীন সবজির দাম বেশ কম থাকলেও এখন তা বেড়েই চলেছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা নিমসার বাজারের বেপারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, কুমিল্লা থেকে সাভার এক ট্রাক সবজি পরিবহনে আগে খরচ হতো (শ্রমিকদের মজুরিসহ) ছয় হাজার টাকা। এখন সেখানে লাগছে ১২ হাজার টাকার বেশি। শুধু সবজিই নয়, যানজটের কারনে বাজারগুলোতে মাছ-মাংসসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়েছে। মাছ ব্যবসায়ী মোবারক মিয়া জানান, মাছের চালান কম আসছে। আগে দুই কেজির একটা রুই মাছ বিক্রি হয়েছে সাড়ে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকায়। এখন তা ছয়শ’ টাকার ওপরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহাসড়কের যানজটের বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন ব্যয়ে। যানজট যত তীব্র হচ্ছে ট্রাকভাড়াও বাড়ছে।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে শিল্প কারখানার পণ্যবাহী গাড়িতেই দখল হয়ে যাচ্ছে সড়কের একাংশ। এ মহাসড়কে বাস-ট্রাক-লরি-কাভার্ডভ্যানের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাই যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে চার লেন সড়কের দু’পাশের বেশিরভাগই দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন কারখানার কন্টেইনার মুভার, লরি, কাভার্ডভ্যান ও পণ্যবাহী ট্রাক।

https://www.dailyinqilab.com/article/163525