৪ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ২:৫৬

আজ বিশেষ একনেকে উঠছে ৩৮ প্রকল্প

ব্যয় ধরা হবে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি * নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে -বদিউল আলম মজুমদার

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্র্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের বিশেষ বৈঠকে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে ৩৮টি প্রকল্প। এছাড়া টেবিলে সরাসরি আরও ১-২টি প্রকল্প উপস্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটিকেই শেষ বৈঠক বিবেচনায় এত প্রকল্পের পাহাড় উঠছে একনেকে।

জানা গেছে, এসব প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৩০টিই নতুন। সেই সঙ্গে মেগা প্রকল্পও রয়েছে তালিকায়। তাছাড়া বেশ কয়েকটি সড়ক-মহাসড়কের প্রকল্পও রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হবে ৮৫ হাজার ১০২ কোটি ৯০ লাখ টাকার বেশি।

এদিকে এত প্রকল্প অনুমোদন দিলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তা প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এসব প্রকল্পের প্রয়োজন আছে। তবে মানসম্মত যাচাই-বাছাই এবং অর্থায়নের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এসব প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে। তবে দেখার বিষয় হচ্ছে, প্রকল্পগুলোর যাচাই-বাছাই এবং মানসম্মত প্রক্রিয়াকরণ হয়েছে কিনা। তাছাড়া অর্থায়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় অনুমোদন দেয়া হলেও অর্থায়ন না থাকায় পরে বাস্তবায়ন সমস্যা হয়, ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।

একনেকে উপস্থাপন হতে যাওয়া সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়নসংক্রান্ত কয়েকটি প্রকল্প হল- কুমিল্লা জেলার ৫টি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্রামীণ সড়ক পুনর্বাসন, গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, ফরিদপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, বৃহত্তর ঢাকার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, তিন পার্বত্য জেলায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন, গ্রামীণ রাস্তার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু কালভার্ট নির্মাণ ও গ্রামীণ মাটির রাস্তাগুলো টেকসই করার লক্ষ্যে হেরিংবন্ড করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, কোনগুলো নির্বাচনী প্রকল্প সেটা বলা দুরূহ। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে এত উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় সব প্রকল্প নির্বাচনী কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে যায়।

তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নজরদারি থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের নির্বাচন কমিশনতো এসব বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

সূত্র জানায়, একনেকে উঠতে যাওয়া মেগা কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে- বাংলাদেশ রেলওয়ে জয়দেবপুর হতে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ২৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

পূর্বাচল লিংক রোডের উভয়পাশে (কুড়িল হতে বোয়ালিয়া পর্যন্ত) ১০০ ফুট পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। পায়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য টার্মিনাল নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি সম্প্রসারণ, ব্যয় হবে ৩ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প, ব্যয় হবে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

একনেকের তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রকল্প হল- ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ, খরচ হবে ৯৭৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। পুলিশের সন্ত্রাস দমন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ, খরচ হবে ৩৫৪ কোটি টাকা।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, খরচ হবে ১১৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, খরচ হবে ৩ হাজার ৭০৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক পর্যন্ত) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ, খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১১১ কোটি টাকা।

বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, খরচ ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের উৎপাদন পদ্ধতি ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রূপান্তরকরণ, খরচ হবে ৮৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা। কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেডের সংস্কার, খরচ হবে ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকা।

ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ, খরচ হবে ১ হাজার ৯২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, খরচ হবে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, খরচ ধরা হয়েছে ২৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়কের হারিয়াখালী হতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ পুনর্নির্মাণ, প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ, খরচ ৬৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

টাঙ্গাইল পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন, খরচ ২২৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বৃহত্তর কৃষ্টিয়া জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, খরচ হবে ৯৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (এলজিইডি অংশ), খরচ হবে ২২৫ কোটি টাকা।

পশ্চাৎপদ কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলার দারিদ্র্য দূরীকরণ, খরচ হবে ১৯৫ কোটি টাকা। বঙ্গমাথা ন্যাশনাল সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার রিসার্স সেন্টার স্থাপন, খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

মুগদা মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি সম্প্রসারণ, খরচ ৫২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, খরচ হবে ১ হাজার ১০৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ, খরচ হবে ৮৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, খরচ ৬৪৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

র‌্যাবের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, খরচ হবে ৩৪০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি ইউনিট সম্প্রসারণ, খরচ হবে ১৬৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। ন্যাশনাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, খরচ হবে ২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/107908