২০ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার, ৮:২৩

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে বিশ্ব সম্পর্কে কিছু নেই

প্রাথমিকের পাঠ্যবই-২

চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের একটি পাঠ্যবইয়ের নাম ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’। তবে বইয়ের নাম ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ হলেও বিশ্বপরিচয়ের কিছু নেই এতে। নামে মাত্র এশিয়া মহাদেশ নামে একটি অধ্যায় রয়েছে। এ ছাড়া সব বিষয় বাংলাদেশবিষয়ক।
একইভাবে তৃতীয় শ্রেণীর জন্য পাঠ্য ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়েও তেমন কিছু নেই বিশ্ব সম্পর্কে। সংক্ষেপে মহাদেশ ও মহাসাগর নামে একটি অধ্যায় ছাড়া এ বইয়েরও সব বিষয় বাংলাদেশের।
চতুর্থ শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ১৬টি অধ্যায় রয়েছে। এগুলো হলোÑ আমাদের পরিবেশ ও সমাজ, সমাজে পরস্পর সহযোগিতা, বাংলাদেশের ুদ্র নৃগোষ্ঠী, নাগরিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, মূল্যবোধ ও আচরণ, পরমতসহিষ্ণুতা, কাজের মর্যাদা, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ, এলাকার উন্নয়ন, এশিয়া মহাদেশ, বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি, দুর্যোগ মোকাবিলা, বাংলাদেশের জনসংখ্যা, আমাদের ইতিহাস, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের সংস্কৃতি।
এশিয়া মহাদেশ অধ্যায়টি চার পৃষ্ঠাজুড়ে। তবে মানচিত্র, কিছু প্রাণী ও অন্যান্য বিষয় বাদ দিলে মহাদেশ সম্পর্কিত বিবরণের পরিমাণ এক পৃষ্ঠারও কম হবে। সামান্য এ বিবরণীতে মহাদেশটির অবস্থান, লোকসংখ্যা, দেশের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। মহাদেশের খাদ্যশস্য, অর্থকরী ফসল, খনিজসম্পদ, শিল্পসহ প্রতিটি বিষয় দুই থেকে আড়ই লাইনে তুলে ধরা হয়েছে। নামমাত্র মহাদেশ অধ্যায়টি ছাড়া বইয়ে বিশ্ব তথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আর কোনো কিছু শিক্ষার্র্থীদের সামনে তুলে ধরা হয়নি।
তৃতীয় শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে যেসব অধ্যায় রয়েছে সেগুলো হলোÑ প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ, মিলেমিশে থাকা, আমাদের অধিকার ও দায়িত্ব, সমাজের বিভিন্ন পেশা, মানুষের গুণ, সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ ও সংরক্ষণ, মহাদেশ ও মহাসাগর, আমাদের বাংলাদেশ, আমাদের জাতির পিতা, আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের জনসংখ্যা।
এ বইয়ে মহাদেশ ও মহাসাগর অধ্যায়ে পৃথিবীর সাতটি মহাদেশ ও পাঁচটি মহাসাগরের নাম রয়েছে। মানচিত্র পরিচয় রয়েছে এবং এশিয়া মহাদেশে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে। বড় ও ছোট মহাদেশ, মহাসাগরের নাম, পৃথিবীর গঠন, স্থল ও জলভাগের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিভাবকদের মতে আগের পরিবেশ পরিচিতি সমাজ বইয়ের নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন শ্রেণীতে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় নামে পাঠ্য করা হয়েছে। কিন্তু নাম পরিবর্তন করা হলেও বিষয়ের তেমন হেরফের হয়নি।
সালমা নামে বনশ্রীর একজন অভিভাবক বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তাতে বইয়ের নাম বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় না হয়ে বইয়ের একটি অধ্যায়ের নাম হতে পারত।
তৃতীয় শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে বাংলাদেশ অধ্যায়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক মানচিত্র দেখানো হয়েছে। রাজনৈতিক মানচিত্রে বিভাগগুলোর নাম এবং প্রাকৃতিক মানচিত্রে বন, নদী, পাহাড় ও লেক দেখানো হয়েছে। এ অধ্যায়ে বাংলাদেশের নদ-নদী, কৃষি, খনিজ, পানির বিবরণ রয়েছে।
আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অধ্যায়ে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। বাকি সব অধ্যায়ে যে আলোচনা করা হয়েছে তা মূলত সামাজিক বিষয়।
পঞ্চম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে জাতিসঙ্ঘ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এ ছাড়া সার্ক বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। এ দু’টি অধ্যায় ছাড়া পঞ্চম শ্রেণীতেও আন্তর্জাতিক আর কোনো বিষয় পাঠ্যভুক্ত করা হয়নি। পঞ্চম শ্রেণীর কয়েকজন অভিভাবক জানান, জাতিসঙ্ঘের সব শাখা-প্রশাখা, অঙ্গসঙ্গঠন বিষয়ে বিবরণ দেয়া হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের মতো একটি সংস্থা সম্পর্কে এত ছোট শিশুদের জন্য এভাবে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা তাদের জন্য অনেকটাই বিদঘুটে। তারা এসবের সাথে একদমই পরিচিত নয়। এসব আয়ত্ত করতে তাদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক কষ্ট করে তাদের এসব বোঝাতে হচ্ছে। তার পরও বুঝতে পারছে না। বিরক্ত হচ্ছে শিশুরা। কিন্তু তাদেরকে আমরা জোর করে এসব মুখস্থ করাচ্ছি।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/358433/