১৯ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৭

সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি

আমদানি বাড়লেও সে অনুযায়ী বাড়ছে না রপ্তানি আয়। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরের শুরুতেও পণ্য বাণিজ্যে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। এই দুই মাসে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন বড় প্রকল্পের সরঞ্জাম আমদানির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় রপ্তানি আয় বাড়েনি।
ফলে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণেও বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৭১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৮৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে, আগস্ট শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ২১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৪ টাকা দরে) ১৭ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তবে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি কমে ৩৯ কোটি ডলার হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার ছিল।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব ঋণাত্মক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ ঋণাত্মক হার কমেছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে ঘাটতি ছিল ২৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

এদিকে আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতন-ভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ১৪২ কোটি ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ১০৩ কোটি ডলার। এ হিসাবে, সেবায় বাণিজ্যে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটি ডলার। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
প্রথম দুই মাসে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স এসেছে ২৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৪৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহে ৮.৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৪৮ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৭.৮৭ শতাংশ বেশি। এদিকে এফডিআই বাড়লেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে শেয়ারবাজারে মাত্র ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এদিকে বেশ কয়েক মাস স্থিতিশীল থাকার পর সমপ্রতি বাড়ছে ডলারের দাম। প্রতি ডলারে পাঁচ পয়সা বেড়ে এখন আন্তঃব্যাংকে ডলারের দর উঠেছে ৮৩ টাকা ৮৩ পয়সা।

 

http://mzamin.com/article.php?mzamin=140932