১৯ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪০

ঋণ করে শেষ মুহূর্তে ব্যয় বাড়াচ্ছে সরকার

মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার নানামুখী খাতে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। ভোটারদের কাছে দেয়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। এতে সরকারের ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় বাড়ছে না। ফলে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পাশাপাশি ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা বেশ চাপে পড়েছে। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে জনজীবনের ওপর চাপ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি হিসাবে গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরের উদ্বৃত্ত ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। যে কারণে সরকার ওই সময়ে কোনো ঋণ না নিয়ে বরং আগের ঋণ পরিশোধ করেছে। চলতি অর্থবছরে সরকারের একই হিসাবে অতিরিক্ত অর্থের কোনো সংস্থান নেই। বরং ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে ঋণের মাধ্যমে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রধান বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচনের পর নানামুখী সমালোচনার সম্মুখীন হয় সরকার। এ সময় জনগণকে আশ্বস্ত করতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেয় সরকার। বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বড় বড় প্রকল্পের পাশাপাশি জনগণের কাছে দেয়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে নানামুখী কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টসহ নানামুখী কাজ তড়িঘড়ি শুরু করা হচ্ছে। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে নদীভাঙন। হাজার হাজার ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ইতোমধ্যে ২৫০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। একই সাথে ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় ও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় নানামুখী চাপে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের (সিএসআর) অংশ হিসেবে বেশ কিছু অর্থ এসব খাতে বরাদ্দ করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর জন্য একটি সার্কুলারও জারি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সরকারের যে পরিমাণ ব্যয় বেড়েছে সেই হারে আয় বাড়েনি। এতেই সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের ব্যয় মেটাতে গিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনা বেশ চাপে পড়েছে। যার ফলে ঋণ গ্রহণ বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের আয়ের প্রধান খাত হলো রাজস্ব আহরণ ও বৈদেশিক অনুদান। এ দু’টি খাতেই ভাটা পড়ে গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রাজস্ব আদায় বেড়েছে মাত্র এক দশমিক ৫৮ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় সাড়ে ২৭ শতাংশ। এ থেকে দেখা যায়, সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে।

অপর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৈদেশিক অনুদানও কমে গেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই মাসে বৈদেশিক অনুদান এসেছিল ২৬ কোটি ডলার, এবার একই সময়ে এসেছে মাত্র ছয় কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক অনুদান কমেছে প্রায় ৭৭ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৯০ শতাংশ।
রাজস্ব আদায় ও বৈদেশিক অনুদান কমে যাওয়ায় ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণগ্রহণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সরকার ব্যাংকব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণ নিয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। মোট ২১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দিয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকার ব্যবহার করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়ে যাবে। এতে জনভোগান্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি নানামুখী চাপে পড়বে অর্থনীতি। অপর দিকে ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। ফলে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়ে গেলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আরো কমে যাবে, যা কর্মসংস্থানের বাধা সৃষ্টিসহ জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/358205