২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শনিবার, ১০:০৩

সিএনজি অটোরিকশায় অরাজকতার শঙ্কা

রাজধানীতে সিএনজি অটোরিশার হয়রানি-ভোগান্তির শেষ নেই। দীর্ঘদির ধরে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। বেশিরভাগ সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলে না। বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় যাত্রীদের। তার উপর গ্যাসের দাম বাড়লে কী হবে- সেই চিন্তা এখন ভুক্তভোগীদের। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে সিএনজি অটোরিকশার বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হয়। সেবার এক লাফে প্রায় ৭০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল। প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা এবং প্রথম দুই কিলোমিটারের পরবর্তী কিলোমিটার প্রতি ভাড়া প্রতি মিনিটে ৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১২ টাকা করা হয়। আর ওয়েটিং ভাড়া প্রতি মিনিটে ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে ২ টাকা করা হয়েছিল। তবে ভুক্তভোগীদের মতে, ভাড়া বৃদ্ধি করার পরেও যদি কোনো চালক নিয়ম মানত তাহলে এতোটা ভোগান্তি পোহাতে হতো না। সরকার ভাড়া বৃদ্ধি করার সাথে সাথে চালকরা তার কয়েকগুন বেশি ভাড়া নেয়া শুরু করে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্যাহ বুলু ইনকিলাবকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে অটোরিকশার ভাড়া বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ২০১৫ সালের নভেম্বরে যখন সরকার সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া নির্ধারণ করে তার আগেই গ্যাসের দাম ৫টাকা বেড়েছিল। তারপরেও আমরা সেই ভাড়া মেনে নিয়েছি। এবার এক লাফে ১০ টাকা (আগের ৫ টাকা, মার্চের ৩টাকা এবং জুনের ২টাকা) বাড়ছে। তাতে অটোরিকশার খরচ প্রতি কিলোমিটারে ৬৫ থেকে ৭০ পয়সা বাড়বে।

অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ২০১৫ সালে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছিল, এরপর গ্যাসের দাম বাড়লে আনুপাতিক হারে অটোরিকশার ভাড়াও বাড়ানো হবে। আমরা অপেক্ষায় আছি সরকার এ বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার নিজে থেকে ভাড়া না বাড়ালে আমরা আন্দোলন করতে বাধ্য হবো। তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ানোর সাথে সাথে গোটা পরিবহন সেক্টরে একটা অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে একটা অরাজকতার সৃষ্টি হবে। অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার জন্য তিনি মালিকপক্ষকে দায়ী করে বলেন, সরকার একটা অটোরিকশার জমা ৯শ’ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও মালিকপক্ষ ১৪শ’ টাকা পর্যন্ত নেয়। এটা বন্ধ করা না গেলে চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করতেই থাকবে। জাকির হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে এখন সিএনজি অটোরিকশার তুলনায় চালকের সংখ্যা অনেক বেশি। যে কারণে মালিকরা চালকদেরকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, অরাজকতা প্রতিবারই হয়েছে, আরও হতেই থাকবে। চালকরা যতদিন গাড়ি না পাবে ততোদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর সিএনজি অটোরিকশার বর্ধিত ভাড়া কার্যকর করার সময় একটা সিএনজি অটোরিকশার জমা ৬শ’ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯শ’ টাকা করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ মালিকই সরকার নির্ধারিত ৯শ’ টাকার অতিরিক্ত আদায় করেন চালকদের কাছে থেকে। প্রথমে ১১শ’ থেকে শুরু করে এখন তা ১৪শ’ টাকা পর্যন্ত গড়িয়েছে। শ্রমিকপক্ষের দাবি, মূলত ওই কারণেই চালকরা মিটারে আর যেতে চায় না। মিটারে গেলে তাদের পোষায় না। মালিকপক্ষের এই স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বহুবার অভিযোগ করা হয়েছে কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি-এমন অভিযোগ শ্রমিকদের।

ভুক্তভোগীদের মতে, ঢাকা শহরে মিটার চালু অবস্থায় ঝাঁকে ঝাঁকে অটোরিকশা দেখে প্রথম দৃষ্টিতে যে কারো মনে হতে পারে এই যান বুঝি ‘সহজলভ্য’। তবে প্রয়োজনে ঘাম ঝরিয়েও যখন মেলে না তখন বোঝা যায় সাধারণ মানুষ কতোটা অসহায়। প্রথমত কোথায় যাবেন একথা শোনার পর চালক সোজা বলে দিবে, ওদিকে যাবো না। এরপর যেতে রাজি হলে সর্বনিম্ন আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা ভাড়া দাবি করে বসে থাকবে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। একজন ভুক্তভোগী বলেন, অতিরিক্ত ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশায় ওঠার পর চালকরা আবার আবদার করে বসে। বলে, সার্জেন্ট ধরলে মিটারে যাওয়ার কথা বলবেন। তার মানে তারা যাত্রীদেরকে একেবারে জিম্মি করে ফেলছে। নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ার পর এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। মিরপুরের বাসিন্দা বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী মোশারফ হোসেন বলেন, এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, সরকার ভাড়া নির্ধারণ করতে করতে সময় পেরিয়ে যায়। কিন্তু ভাড়া বৃদ্ধি করার জন্য চালকরা আর অপেক্ষা করে না। প্রথম দিন থেকেই ভাড়া বাড়ানো হয়। সেটা বাস, মিনিবাস ও অটোরিকশা সব ক্ষেত্রেই।

http://www.dailyinqilab.com/article/66330