২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার, ১০:০৯

পাঠ্যপুস্তকে ভুল বানানে শব্দ

শামসুল করীম খোকন : স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এনসিটিবি প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের নানাবিধ ভুল হতচকিত করেছে বোদ্ধাজনসহ দেশের সচেতন সব মহলকে। কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ কলেজের ডিগ্রি পর্যায়ের বইতেও ভুলের ছড়াছড়ি দেখে বিস্মিত হয়ে বলতে হয়, বাংলা ভাষার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি দরদে সবাই মাতোয়ারা হলেও বাংলা বানানের দিকে কারো কোনো গুরুত্ব না থাকা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ও হতাশাব্যঞ্জক।

অষ্টম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইটি থেকে আমি এসব ভুলের কিছু তথ্য উপস্থাপন করছি। ১৩২ পৃষ্ঠার এ বইয়ের প্রথম দিকের প্রসঙ্গ কথায় চেয়ারম্যান সাহেবের বক্তব্যের ৬ নং লাইনে অন্ত্য-য দিয়ে ছাপা হয়েছে... চেষ্টা করা ‘হয়েছে’। ৯ নং লাইনে মূধন্য বাদ দিয়ে ছাপা হয়েছে সম্যক ‘ধারণা’। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার যেটি তা হলো, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব সিরাজউদ্দৌলা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নাম দুটো বইয়ের তৃতীয় ও ৮ম পৃষ্ঠায় এভাবে ছাপা হয়েছে- সিরাজদ্দৌলা ও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। বইতে মূধর্ন্য ষ-এ ট দিয়ে খ্রিষ্ট, খ্রিষ্টাব্দ, খ্রিষ্টধর্ম খ্রিষ্টপূর্ব লেখা হয়েছে ছয়টি স্থানে। ক্ষতিগ্রস্ত বানানটি স-এ থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছাপা হয়েছে ১৪টি স্থানে। গ্রীনহাউস বানান ‘গ্রীনহাইস, গ্রীণহাউস’ রূপে ছাপা হয়েছে পাঁচটি স্থানে। ২৪ শে, ২৫ শে, ২৬ শে মার্চ ‘২৪এ ২৫এ ২৬এ’ এই অদ্ভুতরূপে ছাপা হয়েছে দশটি স্থানে। দু’টি বানান ‘দুইটি’ রূপে নয়টি স্থানে, বাধাগ্রস্ত ‘বাঁধাগ্রস্ত রূপে দু’টি স্থানে, ত-এ ম দিয়ে প্রতœতত্ত্ব তিনটি স্থানে, অবদান, ‘আবদান’ রূপে দু’টি স্থানে, পাকিস্তানি পাকস্তানি’ রূপে তিনটি স্থানে ছাপা হয়েছে।

এছাড়া যে সব শব্দ ভুল বানানে ছাপা হয়েছে তা হচ্ছে- ছাত্রি (পৃ:২৯), হৃদপি- (পৃ:২৭), তরান্বিত (পৃ:৩০); বারোভুঁইয়াদের (পৃ:৩), কর্মচারীদের (পৃ:৪) ইংলান্ডের রাজা (পৃ:৪), নিমর্ম মৃত্যু (পৃ:৪), মন্বত্তর (পৃ:৭), দানা বাধতে (পৃ:৯) ঘরে ঘরে দূর্গ (পৃ:১২), জমায়েতে ইসলামি (পৃ:২৭), বদ্ধভূমিতে (পৃ:২৭) আঙ্গুলে (পৃ:২৭), সংর্স্পশই (পৃ:৩৩), আত্মসমর্পন (পৃ:৩০), ঊর্ধ্বগতি, উর্বরাশক্তি, উবর্বর (পৃ: ৩৩,৮১,১১৯,১২১) আয়ত্ব (পৃ:৪৮), প্রবিষ্ঠ (পৃ:৪৯), ইলেক্ট্রনিক কর্মাস (পৃ:৫২), ইদানিং (পৃ : ৫৪, ৮৩), চাকরীসূত্রে (পৃ:৭১), পাঁচশালাসহ (পৃ:৭৪), বৈশ্বিষ্ঠ্য (পৃ:৬৬), দায়ি (পৃ:৬৬), নঁকশা (৬৮), রাষ্টপ্রধান (পৃ :৭১), বিস্ফোরন (৭৮), বিষ্ময়কর (৭৮), রেস্তোঁরা, বিমা (৫৭), প্রবৃদ্ধির হার (৫৭), আর্থবছরের (৫৭), যাদুঘর (৪৭), বাঁধা পরিস্কার (৫৯), কারিগরী (৫৯), কল্যাণমূখী (৫৯), মাপকাটিতে (৬০), দুরাবস্থা (৬০), গৃহিনীর (৬২), দাবিদ্রের (৬৩), অভ্যন্তরীন, পরিমান (৬৩), নদীভাঙ্গন (৮২,৮৫), ঘূণিঝড় (৮২), বাঁধার সম্মুখীন (৮৬), বেস্টনির (৮৭), পরিস্কার (৯১), বাধাগ্রস্ত (১২১), বনউজার (৯২), কার্বণডাই অক্সাইড (৯২), লক্ষভ্রস্ট (১০২) প্রধান কারণ (১০৪), উদ্ভুত (১১১), লুঙ্গি পড়ে (১১৩), রপ্তানী (১১৫), খাদ্যাভাসে (১১৫), জীববৈচিত্র্য (১২১), হাটাছল, হঠাৎ ভীড় (১২৬), হীনমন্যতার (১০০,১০৩) এছাড়া দুর্যোগ (৯৩) হিসেবে চার স্থানে এবং সূচিপত্রে ‘এগার’ ও ‘বার’ ছাপা হয়েছে।

বইয়ে এক শব্দকে ভেঙে দু’শব্দ করে কিছু শব্দ ছাপা হয়েছে যেমন হত দরিদ্র, কিছু সংখ্যক, নব বর্ষকে, গুণগত মান। অন্যদিকে দুই শব্দকে এক শব্দ হিসেবে ছাপা হয়েছে ভাগকর, নি¤œমাধ্যমিক, মুখস্থনির্ভরতা।

আবার ফিরে যাচ্ছি- প্রসঙ্গ কথায়, যেখানে লেখা হয়েছে- “যৌক্তিক মূল্যায়ন ও ট্রাই আউট কার্যক্রমের মাধ্যমে সংশোধন ও পরিমার্জন করে পাঠ্য পুস্তকটিকে ত্রুটিমুক্ত করা হয়েছে- যার প্রতিফলন বইটির বর্তমান সংস্করণে পাওয়া যাবে।

এ কথার রেশ ধরে তাই উপসংহার টানতে হয়- এ কেমন যৌক্তিক মূল্যায়ন ও ট্রাই আউট কার্যক্রম যাতে ১৩২ পৃষ্ঠার বইতে কম করে ১২৬টি শব্দ সংশোধন ও পরিমার্জনবিহীনভাবে ছাপা হলো?

বাংলা ভাষার জন্য জীবনদানকারী জাতির পাঠ্যপুস্তকে বাংলা বানানে এত ভুল ছাপিয়ে ভাষার মর্যাদা কি সমুন্নত না ক্ষুণœ হলো সেটাই জিজ্ঞাসা।্

http://www.dailysangram.com/post/273142