১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ১০:৪১

যশোরে শতবর্ষের পুরনো বসতভিটা উচ্ছেদ: পুলিশের ছোবলে ভিটে ছাড়া ৪১ পরিবার

যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র গাড়িখানা এলাকায় ৪১ পরিবার উচ্ছেদ করে প্রায় দেড় একর জমি দখল করেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। জেলা কালেক্টরেট খাস ও অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে এই জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দিলেও পুলিশের দাবি, এই সম্পত্তি তাদের। এ দাবির বলেই রাতের অন্ধকারে জমিতে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করে পুলিশ। আদালত কিংবা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ ভোগদখলকারীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেয়। ফলে প্রায় শত বছরের পুরনো ভিটায় বসবাসকারী পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব।


এ জমিতে বসবাসকারী কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা দিয়ে আতংক সৃষ্টিরও অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবির এই জমির দখল ছেড়ে দিতে পুলিশ সুপারকে চিঠিও দিয়েছেন। ঘটনা অনুসন্ধান করে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকর লংঘনের অভিযোগ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। উচ্ছেদকৃত পরিবারের পক্ষে সংস্থাটি স্বরাষ্ট্র ও ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিবেদন দিয়ে অধিকতর তদন্তের দাবি জানায়। কিন্তু এক বছরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

খাস ও অর্পিত সম্পত্তি পুলিশ এভাবে দখল করতে পারে কিনা জানতে চাইলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, জেলা প্রশাসক কিংবা আদালতের অনুমতি ছাড়া পুলিশ কিছুতেই ওই জমি দখল করতে পারে না। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। প্রতিমন্ত্রী তাৎক্ষণিক তার একান্ত সচিব (যুগ্মসচিব) প্রদীপ কুমার দাসকে ডেকে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে সর্বশেষ অবস্থা জানার নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, জমির সিএস ও এসএ রেকর্ড পুলিশের নামে। এই জমি নিয়ে ৮ থেকে ১০টি মামলা বিচারাধীন আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরাও মামলা করেছি, পাবলিকও মামলা করেছে। দখলে পুলিশের নাম আছে এখনও। যে জমিতে বিদ্যুৎ অফিস আছে, সে জায়গাটির বিষয়ে মামলায় রায় পেয়েছি আমরা। হালনাগাদ খাজনাও পরিশোধ করা হয়েছে। ১৯০১ সালে তৎকালীন ভারত সরকার পুলিশ বিভাগকে এই জমি দান করে।’ তিনি বলেন, রেকর্ডপত্রে পুলিশের নাম থাকলেও জমি দেখভাল করার মতো কোনো সেকশন ওই সময় পুলিশের ছিল না। যে কারণে সমস্যা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, রাইটস যশোর নামে একটি এনজিওর পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক দুদকের গণশুনানিতে পুলিশের ১১ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসপি বলেন, এ অভিযোগের বিষয়ে দুদক কমিশনার স্যার এখানে ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) দিয়ে গেছেন। যেহেতু এটা আদালতে বিচারাধীন বিষয় তাই এখনই এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না। বিচারাধীন বিষয়ে রায়ের আগেই কিভাবে ৪১টি পরিবার উচ্ছেদ করা হল এ সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে এসপি সরাসরি কোনো জবাব দেননি। উল্টো তিনি বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে নিউজ করবেন করেন, আমি কিছু বলতে পারব না। পুলিশের দায়ের করা মামলা সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রও তিনি দিতে পারেননি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মার্কেট যদি বানাতে হয় সেটি করবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে করা হতে পারে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, দুদকের গণশুনানিতে এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ফজলুর রহমান নামে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি। বিনয়কৃষ্ণ পুলিশের অমানবিক উচ্ছেদের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ছেলেকে ফাঁসাতে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়েছে। যে কোনো অভিযোগ বিষয়ে আমি চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমি যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৩১ সালে তৎকালীন সরকারের কাছ থেকে জমিদার বিজয়কৃষ্ণ মিত্র প্রায় ৪৭ শতক জমি ৩০ বছরের জন্য লিজ নেন। সে সময় তাকে (জমিদার) কর দিয়ে বর্তমান ভোগদখলকারীদের পূর্বপুরুষরা বসবাস করতেন। বিজয়কৃষ্ণ মিত্র বন্দোবস্ত প্রথা ভঙ্গ করে বসবাসকারীদের কাছে ওই জমি বিক্রি করে দেয়ায় তার লিজ বাতিল হয়। এরপর ১৯৫৫ সালে তৎকালীন এমএলএ অবাঙালি আহম্মদ আলী সরদার দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত পান। ওই বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে ভোগদখলকারীরা সে সময় যশোর তৃতীয় মুন্সেফ আদালত ও সাবজজ আদালতে আপিল কেস করেন। সেই মামলা এখনও হাইকোর্টে বিচারাধীন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে একই দাগে আরও কিছু জমি বিভিন্ন ব্যক্তিকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়। উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদেরও। গত বছরের ১৩ এপ্রিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহকারী পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মোহাম্মদ গাজী সালাউদ্দিন ও এম রবিউল ইসলাম পুলিশ কর্তৃক ভোগদখলকারীদের উচ্ছেদের ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করেন। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মোট ৪১টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে তারা এখন নিঃস্ব। তারা ঘটনাটির অধিকতর তদন্তের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহকারী পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মোহাম্মদ গাজী সালাউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে তা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লংঘন। যার দায়িত্ব যশোর জেলা পুলিশ কোনোভাবে এড়াতে পারে না। বিবদমান জমির মালিকানা যথাযথ আইন ও আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তিযোগ্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জমিদার বিজয়কৃষ্ণ মিত্রের কাছ থেকে জমি কিনে নেয়া একটি পরিবারের ওয়ারিশ সুষমা বালা দাস। ভিটেমাটি হারিয়ে তিনি এখন একটি মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ছেলেমেয়ে নিয়ে ৯৫নং দাগে বসবাস করতেন। পুলিশ তাকেও উচ্ছেদ করেছে। সুষমা বলেন, ‘স্বামী পঞ্চান্ন নাথ ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছি।’ তিনি বলেন, ‘১৯৩১ সালে জমিদার বিজয়কৃষ্ণ মিত্র যখন ভারত সরকারের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত পান তারও আগে থেকে এই জমিতে বসবাস করতেন স্বামীর পূর্বপুরুষরা। এই বন্দোবস্তকৃত জমির মধ্যে আমার শ্বশুর রামেশ্বর কর্মকার ১৩ শতক জমি বিজয়কৃষ্ণ মিত্রের কাছ থেকে দলিলমূলে ২৯ বছর মেয়াদি বন্দোবস্ত নেন। এর মেয়াদ ছিল ১৯৬০ সাল পর্যন্ত।’ সুষমা বালা বলেন, ‘এই জমিতে পঞ্চান্ন নাথের পিতা রামেশ্বর কর্মকার একটি গ্যারেজ ও বসতবাড়িসহ ছোট ছোট কয়েকটি দোকান করেন। পরবর্তীকালে আমার শ্বশুর রামেশ্বর কর্মকার পুলিন বিহারি চৌধুরী নামে একজনকে একটি দোকান বরাদ্দ দেন। এ অবস্থায় ১৯৫৫ সালে তৎকালীন অবাঙালি এমএলএ আহম্মদ আলী সরদার নতুন করে সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত পান। পরে পুলিন বিহারি চৌধুরীর ছেলে জগন্নাথ রায় চৌধুরী এই বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মিস মামলা করেন। ওই মামলায় হাইকোর্ট নতুন করে বন্দোবস্ত দিতে সরকারের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর থেকেই আমরা এখানে আছি।’ উচ্ছেদ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আকস্মিকভাবে রাত ১২টার পর বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়ে শত শত পুলিশ প্রবেশ করে বসতবাড়ি তছনছ করে দখলে নেয়।’ ৫ সন্তান নিয়ে ভিটেমাটি উচ্ছেদ হওয়ায় তিনি এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সুষমা বালার মতো এভাবে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৪১টি পরিবার।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, যশোরের ম্যাগপাই আবাসিক হোটেলের উল্টোদিকের এই জমির সীমানা প্রাচীর দিয়ে দখল করে রেখেছে পুলিশ। প্রাচীরের দেয়ালে বড় অক্ষরে লেখা ‘পুলিশ ব্যারাক, পুলিশের নিজস্ব সম্পত্তি।’ গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে বসবাসকারীদের বের করে দিয়ে এই জমি দখলে নেয় পুলিশ। এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে অভিযোগ দেয়া হয়। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ডিসির কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২২ মার্চ যশোরের জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবির জমিটির মালিকানা সংক্রান্ত সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন পাঠান। ওই প্রতিবেদনের একটি কপি যুগান্তরের কাছে আসে। প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, যশোর মৌজার ১৭নং খতিয়ানে ৪টি দাগে মোট চার একর ৩০ শতক জমি রয়েছে। এই জমির সিএস ও এসএ রেকর্ডে ভারত সম্রাট (ভারত সরকার) ও পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের পক্ষে ‘দখলে’ পুলিশ বিভাগের নামে ভুলবশত রেকর্ড প্রচারিত হয়। এই জমি অবস্থানগত দিক দিয়ে পৃথক দুটি দাগে বিদ্যমান। এর মধ্যে এসএ ৮৩নং দাগের ২ একর ৫২ শতক জমি যশোর কালেক্টরেট ভবন কম্পাউন্ডেও ভেতরে। এ ছাড়া এসএ ৯৫, ৯৬ ও ৯৭নং দাগে অবশিষ্ট ১ একর ৭৮ শতক জমির অবস্থান গাড়িখানায়। চলমান আরএস রেকর্ডে মোট ৪ একর ৩০ শতক জমির মধ্যে ৩.২০৬৭ একর (৩ একর প্রায় পৌনে ২১ শতক) জমি সরকারের পক্ষে ‘কালেক্টরেট যশোর’ নামে রেকর্ড হয়েছে। অবশিষ্ট জমির রেকর্ড সংশোধনের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

প্রতিবেদনে ৯৫নং দাগের মোট ১ একর ২০ শতাংশ জমিরও ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ভারত সরকারের পক্ষে ‘দখলে’ পুলিশ বিভাগ এবং পূর্ব পাকিস্তানের নামে রেকর্ড হলেও টাউন খাস ল্যান্ড হিসেবে জেলা প্রশাসন অফিস থেকে ১৯৩২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিজয়কৃষ্ণ মিত্রকে ৩০ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেয়া হয়। পরবর্তীকালে বিজয়কৃষ্ণ শর্ত ভঙ্গ করায় ওই লিজ বাতিল করে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেন। ডিসির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই ৯৫ দাগে ১ একর ২০ শতক জমির মধ্যে ৩১ শতক জমিতে রয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণের কার্যালয়। এছাড়া ৪২ শতক জমিতে আছেন বৈধ লিজ গ্রহীতারা। আর ৯৬ ও ৯৭ দাগে ৫৮ শতক জমি ডোবা ও পুকুর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা কাউকে লিজ দেয়া হয়নি। তবে ডিসির প্রতিবেদনে ৯৫ দাগে ভোগদখলকারী হিসেবে বেশ কয়েকজনের নামও উল্লেখ করা হয়। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, ১৯৫৫ সালের ১৩ অক্টোবর সাবেক এমএলএ মরহুম আহম্মদ আলী সরদারকে ৯৫ দাগ থেকে প্রায় ০.৪৬৫০ একর (সাড়ে ৪৬ শতক) জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে অন্তত ২০টি পরিবার অবৈধভাবে দখলে থাকায় তিনি ওই জমি ভোগদখল করতে পারেননি। তিনি জমির দখল বুঝে দেয়ার আবেদন করলে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য অত্র দফতর থেকে নোটিশ করা হয়। তারা আদালতে দেওয়ানি মামলা করেন। এ কারণে তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি। আহম্মদ আলীকে বন্দোবস্ত দেয়ার আগে থেকেই সেখানে অবৈধ দখলদাররা ওই জমি ভোগ করছিল। বর্তমানে জেলা জজ ও সহকারী জজ আদালতে বর্ণিত ৯৫ দাগের এক একর ২০ শতক জমির মধ্যে আহম্মদ আলীকে বরাদ্দ দেয়া সাড়ে ৪৬ শতক জমি নিয়ে দুটি মামলা বিচারাধীন আছে।

জেলা প্রশাসকের দুই পৃষ্ঠা চিঠির শেষাংশে পুলিশের দখলের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়, ‘বর্তমানে উক্ত জমি কারও নামে নতুন করে ইজারা দেয়ার কোনো আবেদন নেই। ‘৯৫ দাগের জমিতে পুলিশ বিভাগের নিজস্ব সম্পত্তির ব্যানারে পুলিশ ক্লাব নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। মালিকানা সংক্রান্ত পুলিশ বিভাগের দাবি মোটেও সঠিক নয়। অত্র অফিস থেকে বর্ণিত দাগের জমি পুলিশ বিভাগের নামে কোনো ইজারা বা বরাদ্দ দেয়া হয়নি। উক্ত জমিতে পুলিশ বিভাগ কর্তৃক কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করে থাকলে সাইনবোর্ডসহ তা অপসারণ করে নেয়ার অনুরোধ করছি।’

জমির সর্বশেষ অবস্থা জানতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে যশোরের ডেপুটি কালেক্টরেট রেভিনিউ নাজনিন সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, ‘জমিটির দখল এখনও পুলিশ ছাড়েনি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মন্ত্রণালয়ে দাফতরিক যে চিঠি দিয়েছেন সে ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

যেখানে রহস্য : ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য শেখ ফজলুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘অবৈধ দখলদার একজনকে সুবিধা দিতেই অসহায় পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখানে বিশেষ সুবিধা আদান-প্রদান হয়েছে। এ বিষয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে এসপির বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ দেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মরহুম সামছুল আলম মূল্যবান এই জমি দখল করতে প্রথমে ১৯৭৩ সালের ১১ জুলাই তারিখে স্বাক্ষরিত সন্দেহজনক একটি দলিল উপস্থাপন করেন। ওই দলিলে এমএলএ আহম্মদ আলী যে সাড়ে ৪৬ শতক জমি বন্দোবস্ত পেয়েছিলেন তার পুরোটাই ৬০ হাজার টাকায় সামছুল আলমের পিতা মোন্তাজ উদ্দিন লিজ গ্রহীতার কাছ থেকে দলিলমূলে কিনেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। মোন্তাজ উদ্দিন মারা যাওয়ার পর এই দলিল প্রকাশ্যে আনেন। তিনি আরও বলেন, ’৭৩ সালে যদি আহম্মদ আলী এই জমি বিক্রি করে থাকেন তাহলে সামছুল আলম ১৯৯২ সালের ১১ জুলাই ওই দাগের ২২ শতক জমি বন্দোবস্ত পেতে কেন তৎকালীন ভূমিমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন? এক প্রশ্নের জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, ’৯২ সালে পুলিশ একবার এই জমি ছেড়ে দিতে নোটিশ দেয়। তখন পুলিশের নোটিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করি। ’৯৮ সালে আমি মামলার রায় পাই। পরে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করে। এ অবস্থায়ই আমাদের উচ্ছেদ করা হল। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মরহুল সাইফুল আলম পাটোয়ারীর ছেলে শরিফুল আলমের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
http://www.jugantor.com/first-page/2017/02/19/102269/%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9B%E0%A7%8B%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A7%87-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE-%E0%A7%AA%E0%A7%A7-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE