১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৩০

অজানা উৎস থেকে আসছে মোবাইল নেটওয়ার্কের প্রতিবন্ধকতা

 

প্রতিবেশী দেশ ভারতের শিলিগুড়ির কোনো অজানা উৎস থেকে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক তরঙ্গে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে অপারেটরটিকে সঙ্গে নিয়ে বিটিআরসি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এতে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। কিন্তু উৎস খুঁজে পায়নি সংশ্লিষ্টরা। সীমান্তে তরঙ্গ প্রতিবন্ধকতা এড়াতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাৎসরিক ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিটিআরসির ২০১৫-১৬ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। গতকাল সংসদে প্রতিবেদনটি উত্থাপন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পূর্ব-দক্ষিণের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ছাড়া বাংলাদেশের অবশিষ্ট সীমান্ত ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বেতার তরঙ্গের প্রকৃতিগত কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় তরঙ্গ প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা থাকে। এর আগে ২০১২ সালে সীমান্তবর্তী এলাকায় সেলুলার মোবাইল নেটওয়ার্কে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে প্রতিবন্ধকতা পাওয়া গিয়েছিল। যা ভারতের দূতাবাসকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে সীমান্তবর্তী বি-বাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর জেলায় সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটর এয়ারটেলের অনুকূলে বরাদ্দ করা তরঙ্গে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ পাওয়া যায়। যা বিটিআরসির অনুসন্ধানে ভারতীয় মোবাইল আপারেটর রিলায়েন্স জিও-এর কারণে হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এ ছাড়া রংপুর, নীলফামারি, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নওগাঁ জেলায় সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের অনুকূলে বরাদ্দ করা তরঙ্গে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিটিআরসি ও গ্রামীণফোনের যৌথ তরঙ্গ পরিবীক্ষণে ওই প্রতিবন্ধকতা ভারতের শিলিগুড়ি নামক স্থানের কোনো অজানা উৎস থেকে আসছে মর্মে ধারণা পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে নানা উদ্যোগ নেয় বিটিআরসি। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হযেছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় নেটওয়ার্কের কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত ও সমস্যা সমাধানে আলোচনার জন্য ভারতীয় দূতাবাসের হাইকমিশনারের সঙ্গে বিটিআরসির বৈঠক হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাতে চলমান প্রতিবন্ধকতার একটি বিস্তারিত বিবরণ তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এদিকে অপারেটররা জানিয়েছে সীমান্তের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের ইন্টারফেয়ারেন্স সামপ্রতিক সময়ে অনেক বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বিষয়টি ঝুলে থাকলেও এর সমাধান হচ্ছে না। এ কারণে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সীমান্তের দুই থেকে ছয় কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত তিনটি ভারতীয় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় বলে স্থানীয়রা জানান। হিলি স্থলবন্দরসহ সীমান্তবর্তী অনেক এলাকায় স্থানীয়রা ভারতীয় মোবাইল ফোনে বেশি কথা বলেন। এসব এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরের সংযোগ মিললেও নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল। আবার কোথাও কোথাও ভারতীয় কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্ক এবং স্পেকট্রামের মধ্যেও সাংঘর্ষিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা সরকারি পর্যায়ে কাজ করছেন। খুব তাড়াতাড়ি এর সমাধান হয়ে যাবে বলেও আশা করেন। এর আগে গ্রামীণফোন এবং রবি বিটিআরসির কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করে। অপারেটর দুটি কমিশনে দেয়া তাদের প্রতিবেদনের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকার মাঠপর্যায়ের জরিপের তথ্যও দিয়েছে। বিটিআরসিতে জমা দেয়া গ্রামীণফোনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটারের ভেতরে ভারতীয় ভোডাফোনের নেওটওয়ার্ক পাওয়া যায়। সহজেই সীমান্তের এ দূরত্বের মধ্য থেকে ওই মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে কথা বলা যায়। তাছাড়া এ দূরত্ব পর্যন্ত ভোডাফোনের স্পেকট্রামে গ্রামীণফোনে ইন্টারফেয়ারেন্স হয়। একই অপারেটরের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও নওগাঁর কয়েকটি এলাকায় সাড়ে চার কিলোমিটার পর্যন্ত নেটওয়ার্কে সমস্যা হয়। কুষ্টিয়ার পরাগপুরও সীমান্তের ভেতরে চার কিলোমিটারের বেশি এলাকায় ভোডাফোনের সংযোগ মেলে। চাঁপাই নবাবগঞ্জের সোনামসজিদ এলাকায় তিন কিলোমিটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক মেলে। তাছাড়া সাতক্ষীরার দেবহাটা বা পঞ্চগড়েও অনেক এলাকায় একই সমস্যার কথা উল্লেখ করে গ্রামীণফোন। একইভাবে রবির নেটওয়ার্কেও সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় ইন্টারফেয়ারেন্স হয়। অপারেটররা জানিয়েছে, সীমান্তের অনেক এলাকায় দুই দিকের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক এমন হয়ে গেছে যে, একটি আরেকটির ওপর ওভার ল্যাপ করে। এ সমস্যার কারণে কখনো সীমান্তবর্তী এলাকায় দেশি মোবাইল ফোনে কথা বললেও সেটি ভারতীয় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক হয়ে আসে। যার কারণে সেটি রোমিং কল হিসেবে বিবেচিত হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছুদিন আগ পর্যন্ত ভারতীয়রা সীমান্তের দশ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের অপারেটরগুলো সীমান্তের আট কিলোমিটার দূরে বিটিএস বসাত। কিন্তু ভারতীয়রা এ কড়াকড়ি শিথিল করে সীমান্তের একেবারে কাছে চলে আসে। পরে বিটিআরসিও নীতিমালা শিথিল করে সীমান্তের এক কিলোমিটারের মধ্যে বিটিএস বসানোর অনুমোদন দেয়।
http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=53850&cat=3/%E0%A6%85%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%89%E0%A7%8E%E0%A6%B8-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B2-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%BE