৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, শনিবার, ৩:৫২

পাইকারি বাজারের ১০০ গজ দূরত্বে সবজির দাম দ্বিগুণ

শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ আরো কয়েক জায়গায় পাইকারি বাজার থাকলেও পুরনো ও সুবিধাজনক স্থানে হওয়ায় খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই সবজি ক্রয় করতে আসেন রাজধানীর কাওরান বাজারে। এখানে পাইকারি বাজারের মাত্র ১০০ গজ দূরে অবস্থিত সিটি করপোরেশনের কাওরান বাজার সুপার মার্কেট। আশপাশের হাজার হাজার ক্রেতা প্রতিদিন কাঁচাবাজার করতে আসেন এখানে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, পাইকারি বাজার থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে এলেই প্রতি কেজি সবজি বিক্রি হয় পাইকারির দ্বিগুণ দামে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর এমন অরাজকতা চললেও কারো যেন কোনো দায় নেই।
গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আড়তে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা দরে। অর্থাৎ এক কেজি বেগুনের ক্রয়মূল্য পড়ছে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। ১০০ গজ দূরে খুচরা বাজারে একই বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। পাইকারি বাজারে যে আলু ৪০ থেকে ৫০ টাকা পাল্লা দরে, অর্থাৎ ৮ থেকে ১০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করা হচ্ছে, একই আলু খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৬ টাকা। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি।
কারওয়ান বাজার পাইকারি বাজারে গতকাল গাজর (পাঁচ কেজি) ৮০ টাকা, টমেটো (পাঁচ কেজি) ১০০ টাকা, শালগম (পাঁচ কেজি) ৫০ টাকা, উচ্ছে (পাঁচ কেজি) ৮০ টাকা, শিম (পাঁচ কেজি) ১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। সে হিসেবে প্রতি কেজি গাজরের দাম ১৬ টাকা, টমেটো ২০ টাকা, শালগম ১০ টাকা, উচ্ছে ১৬ টাকা ও শিমের ক্রয়মূল্য পড়ছে ২০ টাকা। অথচ ১০ গজ দূরত্বে এনে খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শালগম ২০ থেকে ২৫ টাকা, উচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
এমন অস্বাভাবিক মুনাফা করার কারণ জানতে চাইলে কাওরান বাজার সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারের বিক্রেতা সোলায়মান বলেন, পাইকারি বাজার থেকে এখানে আনতে পরিবহন খরচ নেই এ কথা সত্যি। কিন্তু আমাদের তো খরচ অনেক বেশি। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, পানি-বিদ্যুতের অত্যধিক মূল্য এবং বিভিন্ন ধরনের চাঁদা পরিশোধ করতে গিয়ে পণ্য বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সবজির দাম কমলে বরং আমাদের লোকসান হয়। সবজির দাম বেশি থাকলে বাড়তি দাম নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না বলেও মন্তব্য করেন সোলায়মান।
তিনি বলেন, পাইকারি বাজার থেকে তাদের বেশি দাম দিয়ে ভালো সবজি ক্রয় করতে হয়। এ ছাড়া সবজিগুলো ভালো না হলে বেশি দিন রেখে বিক্রি করা যায় না। ফলে ব্যবসায় লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। সব মিলিয়ে বেশি দামেই তাদের সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। তা ছাড়া বাসাভাড়াসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় সবজি বিক্রি থেকে তাদেরকে অধিক হারে লাভ করতে হয় বলেও জানান বিক্রেতারা।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, সারা দেশেই কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা এখন বেপরোয়া। এর কারণ তাদের নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। বাজারগুলোতে নেই সরকারি তদারকি। যে কোনো পণ্যে পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা ১০ শতাংশ লাভ করলেই চলে। কিন্তু তারা লাভ করছেন শতভাগেরও বেশি। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আসলে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার মনোভাব এত বেড়ে গেছে যে, তারা বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন।
বাজারে গতকাল কাঁচকলার হালি বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, করলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, বরবটি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
মুদিপণ্যের মধ্যে দেশী মসুরডাল প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা এবং আমদানি করা মোটা মসুরডাল ১০০ টাকা, মুগডাল ১১০ টাকা, দেশী আদা ১০০ টাকা ও মোটা আদা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি পাঁচ লিটারের রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৪৫৮ টাকায় এবং পাঁচ লিটারের তীর সয়াবিন তেল ৪৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতারা জানান, খালবিল শুকিয়ে যাওয়ায় কমছে মাছের সরবরাহ। স্বাভাবিক কারণে দামও বাড়তির দিকে। চলতি সপ্তাহে রুই, কাতল, শিং, তেলাপিয়াসহ বেশ কিছু মাছ কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। তবে অন্যান্য মাছ বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দামেই। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হওয়া রুই-কাতল মাছ গতকাল শুক্রবার বিক্রি হয় প্রতি কেজি ২৮০-৩২০ টাকায়। তবে ছোট আকারের রুই-কাতল পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, আকারভেদে প্রতি কেজি গলদা চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় শিং মাছ ৩৬০ থেকে ৪৮০ টাকা, দেশী মাগুর ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, বেলে মাছ ৪০০ টাকা, রুপচাঁদা ৯০০ টাকা, বাটা মাছ ৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
খুচরা বাজারে গতকাল ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয় প্রতি হালি ৩২ থেকে ৩৪ টাকায়, ডজন ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। দেশী মুরগির ডিম হালি ৪৫ টাকা, ডজন ১৩৫ টাকা। হাঁসের ডিমের হালি ৪৬ টাকা, ডজন ১৩৫ টাকা। আকারভেদে দেশী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩৮০ টাকা। পাকিস্তানি মুরগি (পিস) ২০০ টাকায় এবং কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা দরে। গরু ও খাসির গোশত আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরু ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির গোশত ৫৬০ থেকে ৫৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/183311