৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার, ১০:০৫

রকিব কমিশনের আমলে তছনছ হওয়া নির্বাচন ব্যবস্থা উদ্ধারে কতটা সফল হবে নয়া ইসি?

গত ২৮ এপ্রিল ২০১৫ তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জালিয়াতির রেকর্ড সৃষ্টি হয়। তার কয়েকটি নমুনা। বাম থেকে : (১) একটি ব্যালট বইয়ের প্রতিটি পাতায় আ’লীগ মেয়র প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারা হয়েছে, (২) নির্বাচন কর্মকর্তা নিজেই ব্যালটে সিল মারলে তা প্রতিপক্ষের লোকেরা ধরে ফেলে, (৩) একজন যুবক অবিরাম ব্যালট পেপারের পাতা ছিড়ছেন আর আরেকজন সিল মেরে বাক্সে ঢোকাচ্ছেন, ভোটার নম্বর দেখে ব্যালটের পাতায় পাতায় সিল দিচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তা ও দলীয় কর্মীরা -ফাইল ফটো

বিদায়ী রকিবউদ্দীন কমিশনের আমলে তছনছ হয়ে যাওয়া দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে উদ্ধার করতে কতটা সফল হবে নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নয়া নির্বাচন কমিশন- সেদিকে গভীর দৃষ্টি এখন দেশের মানুষের। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে রকিব কমিশন যে প্রবল দলবাজির পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে তা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। উল্লেখ্য, সাবেক সচিব নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অপর চারজনকে কমিশনার করে নয়া নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছেন বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত রকিবউদ্দীন কমিশন।
ভাষ্যকাররা বলছেন, ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীনদের নানা অপকৌশলে তছনছ হয়ে গেছে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা। ভোটের প্রতি আস্থা উঠে যাবার উপক্রম হয়েছে দেশবাসীর। যেকোন প্রকারে জয় ‘নিশ্চিত’ করার আগাম ও প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে ভোটের মর্যাদাকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। ৮০-৯০-এর দশকে স্বৈরাচারী এরশাদ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ‘দশটা হোন্ডা বিশটা গুণ্ডা, ইলেকশন ঠাণ্ডা’ করার যে ফরমূলা চালু করেছিলেন তা আবারো বাস্তবায়ন হয়ে চলেছে বলে ভাষ্যকারদের অভিমত। উল্লেখ্য, সেই ‘স্বৈরাচারী এরশাদ’ এখন মহাজোটের গুরুত্বপূর্ণ শরীকের মর্যাদা পেয়ে ক্ষমতার সঙ্গী হয়েছে। এর সঙ্গে সাম্প্রতিককালে যুক্ত হয়েছে ‘এইচ টি ইমাম ফরমূলা’। এর মধ্য দিয়ে দেশ ‘ম্যানেজড’ নির্বাচনের যুগে প্রবেশ করার উপক্রম বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
একনজরে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের পেছনে যে সব প্রক্রিয়া-অপকৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিরোধীদের প্রচার-প্রচারণায় অব্যাহত বাধা প্রদান, হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক বজায় রাখা, পাড়া-মহল্লায় গিয়ে বিরোধী ভোটারদের হুমকি দেয়া, আগের রাতেই দলীয় প্রতীকে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা, কেন্দ্র দখল করে প্রতিপক্ষকে ভিড়তে না দেয়া, আইনপ্রয়োগকারীদের নগ্নভাবে দলের পক্ষে ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনকে কেবল হুকুমের দাস করে রাখা, বিরোধী নির্বাচনী এজেন্টদের অনুপস্থিতি নিশ্চিত করা, সাংবাদিক-পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া, অনিয়ম-অভিযোগ আদৌ আমলে না নেয়া, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও কর্মীদের সর্বদা ভীতি ও চাপে রাখা, ব্যালট ছিনতাই করে গণহারে সিল মারা, সাধারণ ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা দেয়া, ভোটের অংকে ইচ্ছেমত হেরফের ঘটানো প্রভৃতিসহ রয়েছে সবধরণের অপকৌশল। ‘নির্বাচন কমিশন’ নামক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ও জন-আস্থা ধূলিস্মাৎ হয়ে গেছে বলেও অভিমত দিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত তিনটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা ‘এরশাদ-ইমাম ফরমূলা’ প্রয়োগ করে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে নতুন ‘মাইলফলক!’ যোগ করে। যার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হয়েছে দেশের গণমাধ্যম ও দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক মহল।
বিগত ইসি’র ভূমিকা ও কলঙ্কজনক অধ্যায়
বর্তমান সরকারের আমলে আয়োজিত বিভিন্ন নির্বাচনে একেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির সংসদ ও ৫ এপ্রিলের তিন সিটির নির্বাচনে এসব ছিলো সাধারণ চিত্র। সংসদ নির্বাচন একতরফা হওয়া সত্ত্বেও ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ, সর্বনি¤œ ভোটার উপস্থিতি, জাল ভোটের মহোৎসব ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সেগুলো পূরণ করা, একেকজন শত শত ভোট দিয়ে উল্লাস প্রকাশ, সর্বাধিক সংখ্যক কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হওয়া, বহু সংখ্যক প্রার্থীর ভোট বয়কটের ঘোষণা দেয়া প্রভৃতি ঘটনা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে চরমভাবে কলঙ্কিত করে। অন্তত ৪১টি কেন্দ্রে আদৌ কোন ভোট পড়েনি- এমন ঘটনাও ঘটে। আবার বেলা ১টার মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ ভোট কাস্টিং হলেও বিকেল ৪টায় তা হয়ে যায় ৭০ ভাগের ওপরে। দলের একেকজন কর্মী ১শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ পর্যন্ত ভোট দেবার ‘গৌরব’ অর্জনে সক্ষম হয়। অনেক স্থানে পুরো একটি পরিবারের ভোট অন্যরা দিয়ে দেয়। বিভিন্ন কারণে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৫শ’ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করতে হয়। তিনশ’ আসনের মধ্যে অর্ধেকেরও কম আসনে ভোট করতে গিয়েও এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগ এনে ভোট গ্রহণের দিনে অন্তত ২০ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তাঁদের মধ্যে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ছিলেন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রাণহানীর ঘটনাও একটি রেকর্ড। শুধু নির্বাচনের দিনই ২১ জনের মতো লোক নিহত হবার খবর পাওয়া যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এ নির্বাচনকে ঘিরে যে সহিংসতা হয়েছে তা অতীতের কোনো নির্বাচনে দেখেনি দেশবাসী। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত প্রায় দেড়শ’ লোকের প্রাণহানী ঘটে। এছাড়াও সেই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতার বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি হয়। সেই সংসদ নির্বাচনকে কোন কোন ভাষ্যকার ‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ তামাশা’ বলে আখ্যায়িত করেন। কোন নির্বাচন ছাড়াই ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জিতিয়ে দেয়া হয় ভাগবাটোয়ারার হিসেব অনুযায়ী। এসব আসনে কাউকে ভোট দেয়ার জন্য ভোট কেন্দ্রে যেতে হয়নি। বাকি ১৪৭ আসনে কেবল নির্বাচনের মহড়া দেয়া হয় ৫ জানুয়ারী। এগুলো শুধু পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের জোটের শরীকদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়। একজন বিশ্লেষকের মতে, একদিকে ১৫৩টি আসনের জন্য ৪ কোটি ৬৮ লক্ষ ৬৯ হাজার ভোটারকে ভোট দেয়া তো দূরের কথা, ভোট কেন্দ্রে যেতেও হয়নি। আর বাকি ১৪৩টিতে ভোটের নামে কী করা হয়েছিলো দেশবাসী তা প্রত্যক্ষ করেছে। এই নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যাও ছিল ইতিহাসের সর্বনি¤œতম। অন্যদিকে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে অপব্যবহারের ক্ষেত্রে এবার এক নয়া রেকর্ডও স্থাপিত হয়। নির্বাচন কমিশন কার্যত সরকারের আজ্ঞাবহ একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে, বিরোধী দলবিহীন এই নির্বাচনে সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন অনেক ক্ষেত্রেই অনিয়মকে নিয়ম হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ‘লাঙ্গল’ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া, আ’লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের ‘বেআইনি’ চিঠিকেও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন বেশ কিছু আসনের প্রার্থীর তালিকা বারবার রদবদল করা প্রভৃতি। আ’লীগের সঙ্গে শরিকদের সমঝোতা রক্ষা করতে গিয়ে তারা এই অনিয়ম করে। বিভিন্ন জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তারা ১৩ ডিসেম্বরের তারিখ দিয়ে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধভাবে প্রার্থীদের কারো মনোনয়নপত্র বাতিল, আবার কারো মনোনয়নপত্র বৈধ দেখায়। যে কারণে জাপার বেশ কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেয়ার পরও তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হন। আ’লীগের নির্বাচনী জোটের অনুকূলে ‘নৌকা’ প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রেও কমিশন আইন মানেনি। জাতীয় পার্টি সরে পড়ায় অনেক আসনে প্রার্থীসংকট দেখা দিলে কমিশনের পরামর্শে রিটার্নিং কর্মকর্তারা অনেক প্রার্থীকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে মনোনয়নপত্র শুদ্ধ করে দেন।
এছাড়া গতবছর প্রথম দিকে কয়েক দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি ও সহিংসতা ঘটে ব্যাপক হারে। এই নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পঞ্চম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির হার ছিলো ৫৩ শতাংশ। এ ছাড়া ৫০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা ঘটে, ৭৬ শতাংশ ভোটারকে ভয়ভীতি দেখানো হয়, ২০ শতাংশ ভোটারকে ভোট প্রদানে বাধা দেয়া হয়, ৫৯ শতাংশ পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয় এবং ৩৮ শতাংশ পর্যবেক্ষককে গণনা পর্যবেক্ষণ করতে দেয়া হয়নি। এছাড়া কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই বক্সে সিল মারা ব্যালট পাওয়া ও ব্যালট ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশের পর হাতে কালি লাগিয়ে দিয়ে বলা হয় তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। ভোট না দিয়েই ওই ভোটারদের ফিরে আসতে হয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে, ৫ দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে তাদের টনক নড়ে। ফলে তারা পুকুর চুরির পরিবর্তে সাগর চুরির পরিকল্পনা করে। এ কথার প্রমাণ মেলে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্য থেকে। দুই দফা উপজেলা নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের লেজেগোবরে অবস্থা হওয়ার পর তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের ‘যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে’ নির্বাচনে খারাপ ফল করেছে। আগামী নির্বাচনগুলোতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে ফলাফল নিজেদের অনুকূলে নেবে।
‘ম্যানেজড’ নির্বাচনে অভ্যস্ত হবার আশঙ্কা
বিগত সময়ে দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের মতে, কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতিসহ ব্যাপক জালিয়াতি ও ভীতিকর পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রমাণ করে, দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রাখার আর কোনো সুযোগ থাকেনি। তখন নির্বাচন কমিশন নিজেই একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দেশ ‘ম্যানেজড’ নির্বাচনের যুগে প্রবেশ করছে এবং অদূর ভবিষ্যতে যতো নির্বাচন হবে সবই এ ধরনের ‘ম্যানেজড’ নির্বাচন হবে বলে বোদ্ধা মহলে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষ তাদের ক্ষোভ, অভিযোগ, অসন্তোষ প্রভৃতি নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় প্রকাশ করার একটি সুযোগ পায়। কিন্তু সেসব নির্বাচনে মানুষ সে সুযোগ পায়নি। ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম তার একটি বিশেষ মন্তব্য প্রতিবেদনে ‘ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনই কি আমাদের নিয়তি’-এর প্রশ্ন উত্থাপন করেন ক্ষোভের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নাগরিকদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের কোনো লক্ষণই নির্বাচন কমিশনে দেখা যায়নি।
এদিকে জাতীয়, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়নসহ প্রায় ৮ হাজার নির্বাচন সম্পন্ন করে বিদায়ী কমিশন। ইউনিয়ন নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় ১৩২ জনের মৃত্যু এবং দশ হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে সর্বকালের রেকর্ড ভাঙে। এ ছাড়াও উপজেলা এবং পৌরসভা নির্বাচনেও ব্যাপক সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও)কে ইচ্ছেমত ব্যবহার করার অভিযোগ উঠে বিদায়ী কমিশনের বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অংশ না করা, সরকারের সঙ্গে এমপিদের ব্যবসা না করার বিধান প্রভৃতির প্রয়োগ হয় সরকারী পক্ষের অনুকূলে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সেনা মোতায়েনের বিধান বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিধান ছিল গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও)। রকিব কমিশন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা থেকে ‘সশস্ত্র বাহিনী’ শব্দটি বাদ দিয়ে সেনা মোতায়েনের বিধানটি রহিত করে দেয়। সরকারের সঙ্গে এমপিদের ব্যবসা না করার বিধান থাকলেও বিদায়ী নির্বাচন কমিশন তার প্রতি কোন আমল দেয়নি। ফলে বিধানটি কাজির গরু হয়ে কিতাবে থেকে গেছে। নয়া নির্বাচন কমিশন এসব বিষয় দলমত, পক্ষ-বিপক্ষের উর্ধে উঠে কতটা নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হবে- সে প্রশ্নই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
http://www.dailysangram.com/post/270850-%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A6%9B%E0%A6%A8%E0%A6%9B-%E0%A6%B9%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BE-%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%AB%E0%A6%B2-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF