অনেক সতর্কতার পরও ঈদে ট্রেনের ছাদে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ। ছবিটি গতকাল কমলাপুর স্টেশন থেকে তোলা : আবদুল্লাহ আল বাপ্পী
১৪ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:৩৩

আনন্দযাত্রায় ভোগান্তি

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ; ঢাকা থেকে বের হতেই তিন ঘণ্টা ; মহাসড়কেও যানজট

আনন্দ যাত্রায় সঙ্গী ভোগান্তি। পথে পথে ভোগান্তি। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি যেন ছাড়ছেই না। এই সেক্টরের সর্বোচ্চ কর্তা যোগাযোগমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের নানা আশ্বাসেও কোনো ফল মিলছে না। বাসা থেকে বের হওয়ার পরই শুরু হয় ভোগান্তি। তারপরও ছুটছে ঘরমুখো মানুষ। বাড়তি ভাড়া, রাস্তায় যানজট এবং ঠিক সময়ে গাড়ি না পাওয়ার ঝামেলা অনেকের ঈদের আনন্দ মাটি করে দিয়েছে।
রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে গতকাল ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। সকাল থেকে রাত অবধি হাজার হাজার যাত্রীর ভিড়ে কোনো কোনো টার্মিনালে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সকালে বাস টার্মিনালগুলোতে তেমন শিডিউল বিপর্যয় না ঘটলেও বিকেল থেকে অনেক যাত্রী দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও গাড়ি না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।

এ দিন সকাল থেকেই রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। তবে ব্যতিক্রম ছিল মহাখালী টার্মিনালে। সেখানে তেমন ভিড় ছিল না। টার্মিনাল সূত্র জানায়, এই টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের গাড়িই বেশি ছেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম টিকিট লাগে না। এখানে বাসেরও কোনো সঙ্কট নেই। যে কারণে যখন যে যাত্রী আসছেন তারা তাৎক্ষণিক টিকিট সংগ্রহ করে চলে যাচ্ছেন। তবে রাজধানীর অন্যান্য বাস টার্মিনাল, লঞ্চ স্টেশন এবং ট্রেন স্টেশনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছেন ট্রেনের জন্য। বিকেলের পর তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না স্টেশন চত্বরে। সায়েদাবাদ টার্মিনাল সূত্র জানায়, এখানে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটছেন গ্রামের উদ্দেশে।
টিকিটের জন্য হাহাকার : ঘরমুখো মানুষের অনেকেই এখনো টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। গতকালও তাদের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয়। কামাল উদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, আর আছে মাত্র দুই দিন। অথচ টিকিট সংগ্রহ হয়নি। কামাল বলেন, ঈদের ছুটির সাথে সাপ্তাহিক ছুটি মিলে যাওয়ায় এবার টিকিটের ওপর চাপ বেশি। কিন্তু টিকিট পেতে এত ভোগান্তি হবে তা বুঝতে পারেননি। তিনি বলেন, বেশির ভাগ পরিবহন কোম্পানির টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় বেশির ভাগ টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে এবং সেখান থেকে এখন অতিরিক্ত মূল্যে যাত্রীদের টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

স্টেশনে ভোগান্তি : গতকাল রাজধানীর বাসস্টেশনগুলোতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় যাত্রীদের। গাবতলী টার্মিনাল থেকে সিদ্দিক নামে এক যাত্রী বলেন, তিনি স্টেশনে গিয়ে দেখেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যতটুকু সময় টার্মিনালে অপেক্ষা করেন ততটুকু সময়ই ভোগান্তির শেষ ছিল না। মানুষের গাদাগাদিতে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন।
ঢাকা থেকে বের হতেই ৩ ঘণ্টা : ঢাকা-মাওয়া সড়কের বেহাল দশা চলছে কয়েক মাস ধরেই। রাস্তা সংস্কারের কাজ চলার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরানীগঞ্জের ওপর দিয়ে যাওয়ার রাস্তাটি একেবারেই অকেজো। বেশির ভাগ গাড়ি তাই যাতায়াত করে পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু হয়ে। কিন্তু সেখানেও রাস্তা সংস্কারের জন্য এখন মূল রাস্তায় বিশাল বিশাল গর্ত, যে কারণে গতিতে গাড়ি চলতে পারে না। এক দিকের রাস্তা বন্ধ করে আরেক দিকের রাস্তা সচল রাখতে হয়। দিনভর এই রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। আর কেরানীগঞ্জের রাস্তার তো আরো বেহাল দশা। সিফাত নামে এক যাত্রী গতকাল বলেছেন, পোস্তগোলার রাস্তাটি পার হতে তার সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা।
ভুক্তভোগীরা জানান, গাবতলী, পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, আবদুল্লাহপুর এবং আশুলিয়ায় গতকাল দুপুরের পর থেকেই তীব্র যানজট লক্ষ করা যায়। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজধানীতে আটকে থেকেই অনেকের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে যায়। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, ওই সব এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ একেবারেই নির্বিকার। যাত্রাবাড়ী থেকে এক যাত্রী জানান, চারিদিক থেকে যানবাহন এসে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় জড়ো হয়ে যানজট সৃষ্টি করে রেখেছে। আর এভাবেই কেটে গেছে প্রায় দুই ঘণ্টা।

গলাকাটা ভাড়া : প্রতিটি রুটেই গলাকাটা ভাড়া আদায় করছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখের সামনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা ঘটলেও তারা নির্বিকার। সাইদুর নামে এক যাত্রী বলেন, ঢাকা থেকে মাওয়ার ভাড়া ৭০ টাকা। অথচ এখন ভাড়া আদায় হচ্ছে এক শ’ বিশ টাকা থেকে দেড় শ’ টাকা। প্রতিটি রুটেই এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট : মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজটের খবর পাওয়া গেছে। গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সকালে সৃষ্ট এ তীব্র যানজটে ঈদের ছুটিতে ঘরে ফেরা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বুধবার থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন কলকারখানা ও গার্মেন্ট ছুটি হয়ে যাওয়ায় গাজীপুর ছাড়তে শুরু করেন শ্রমিকেরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তার পাশে কোনো যানবাহনকে পার্কিং করতে দেয়া হয়নি। তারপরও যানজট ছিল তীব্র। তবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল থেকে প্রবল বৃষ্টির কারণে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সদরঘাটে উপচে পড়া ভিড় : বিকেলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছেন লঞ্চে যাওয়ার জন্য। লঞ্চযাত্রীদের ভিড়ে পল্টন থেকে সদরঘাট যাওয়ার রাস্তাটিতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে লঞ্চযাত্রীদের অনেককেই পল্টন থেকে হেঁটে সদরঘাটের উদ্দেশে যেতে দেখা যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার জন্য প্রায় ১২৫টি লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। এই লঞ্চগুলো পর্যায়ক্রমে ছেড়ে যাবে। ঘাট সূত্র জানায়, এবার অতিরিক্ত যাত্রী বহন যাতে না হয় সে জন্য কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। সকালের দিকে কয়েকটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ছেড়েও গেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/325449