১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার, ৯:৪৯

সীমান্তহত্যা চলছেই: এক বছরে নিহত ৩১, আহত ৩৯ অপহৃত ২৪

বন্ধ হচ্ছে না সীমান্ত হত্যা। উল্টো ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের হাতে সমানতালে চলছে বাংলাদেশী হতাহতের ঘটনা। গত সোমবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মাসুদ আলী (২২) নামে এক বাংলাদেশী নিহত এবং আরো অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। গত এক বছরে সীমান্তে ৩১ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৯ জন।
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের হাতে প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ প্রকাশ্যে বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। গত সোমবার রাত পৌনে ১টার দিকেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওহেদপুর সীমান্তের বিপরীতে ভারতীয় এলাকায় গুলি চালিয়ে মাসুদ আলীকে হত্যা এবং তার চাচাতো ভাইসহ আরো পাঁচজনকে আহত করেছে।
গত তিন মাসে একই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চার বাংলাদেশী নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। এভাবে বিভিন্ন সীমান্তে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আইন ও সালিস কেন্দ্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০১৬ সালে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সেখানকার সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন ৩১ জন বাংলাদেশী। এই সময়ে আহত হয়েছেন ৩৯ জন। একই সময়ে অপহৃত হয়েছেন ২৪ জন বাংলাদেশী।
আইন ও সালিস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে গত বছর নিহতদের মধ্যে ২৩ জন গুলিতে, সাতজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একজনের হত্যার ধরন উল্লেখ করা হয়নি। এর মধ্যে খুলনা সীমান্তে সাতজন, রাজশাহী সীমান্তে ৯ জন, রংপুর সীমান্তে ১৪ এবং সিলেট সীমান্তে একজন নিহত হয়েছেন। এই সময়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে খুলনা সীমান্তে ১০ জন, রাজশাহী সীমান্তে চারজন, রংপুর সীমান্তে ২৪ জন এবং সিলেট সীমান্তে একজন আহত হয়েছেন। অপহৃত হয়েছেন আরো ২৪ জন।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে সীমান্তে নিহত হয়েছেন ৪৪ জন, ১৪ সালে ৩৫ জন, ১৩ সালে ২৯ জন এবং ১২ সালে ৩৮ জন। এভাবেই চলছে হত্যার ঘটনা।
এ প্রসঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষক বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) আ ল ম ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘সীমান্তে কেন হত্যা বন্ধ হচ্ছে না সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে হবে বিজিবির বর্তমান ডিজিকে। কারণ তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাবে।’ আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, চীনের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফরে আসার পর থেকে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে। মনে হচ্ছে ভারত বাংলাদেশকে যে চাপে রাখতে চায় এটা তার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি বাংলাদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে চায় ভারত। তাদের প্রস্তাব যাতে বাংলাদেশ গ্রহণ করে সে কারণেও এই সীমান্ত হত্যা অব্যাহত থাকতে পারে।’ আর সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশকে দুর্বল করার একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে মনে করেন তিনি। আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করার আর কোনোই কারণ দেখছি না। তবে বিজিবির ডিজি যখন বলেন, বিএসএফ আত্মরক্ষার্থে সীমান্তে গুলি চালাবে তখনতো ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা হাওয়ায় উড়বে।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/195985