২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ১১:২৯

জোরালো হচ্ছে মাদকবিরোধী অভিযান : ১২ দিনে নিহত ৭৮

শুক্রবার রাতেও সারা দেশে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১২ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ জন। এদের মধ্যে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির এক আত্মীয়ও রয়েছেন। এ অভিযান আরো জোরালো করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ দিকে এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়ে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা বলছেন, নিহতেরা অপরাধী ও মাদক কারবারের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, তালিকা ধরে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় আবার লাশ উদ্ধারের ঘটনাও ঘটছে। যাদের লাশ উদ্ধার হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগ রয়েছে। ওই সব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দুই দল মাদক কারবারির মধ্যে গোলাগুলিতে তারা নিহত হয়েছে।’

এ দিকে চলমান মাদকবিরোধী এ অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক আরো জোরালো হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনো সমাধান নয়। এদের ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে। পক্ষান্তরে, অভিযানকারীরা বলছেন, যুগ যুগ ধরে মাদক কারবারিরা গ্রেফতার হয়ে এসেছে। যারা নিহত হয়েছে তাদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদকের মামলা রয়েছে। এরা অনেকবার গ্রেফতারও হয়েছে। কিন্তু দু-চার সপ্তাহ পর এদের আর আটকে রাখা যায় না। কেননা এদের কাঁচা টাকা ও খুঁটির জোর অনেক বেশি। এরা অনেকেই সহজেই কিনে ফেলতে পারে। সে জন্য এদের নির্মূলের কোনো বিকল্প নেই। দেশবাসী অচিরেই এ অভিযানের সুফল ভোগ করবে।

গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাবুল (৪০) ও আলমাস (৩৬) নামের দুই ব্যক্তি নিহত হন। রাত দেড়টার দিকে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাঁজা ও একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির জানান, নিহত বাবুলের বিরুদ্ধে ১৬টি ও আলমাসের বিরুদ্ধে আটটি মাদকের মামলা রয়েছে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের আঠাবাড়ি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহজাহান মিয়া (৩০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহত শাহজাহানের বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে আটটি মামলা রয়েছে।

চাঁদপুরের কচুয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাবলু (৪২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বাবলু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশ।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন ও সদর উপজেলার রামসাগরে দুই দল মাদক বিক্রেতার মধ্যে গুলিবিনিময়ে আরো এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন বীরগঞ্জ উপজেলার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা সাবদারুল ইসলাম (৪২) ও আবদুস সালাম। দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ওসি রেদওয়ানুর রহিম জানান, রাতে রামসাগর এলাকায় দুই দল মাদক বিক্রেতার মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি টহল দল সেখানে গেলে আবদুস সালামকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ভীমপুর এলাকায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রেন্টু মিয়া (৩৫) নামে এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। রেন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে সাতটি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

বরগুনায় ছগির খান নামে এক মাদক কারবারির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সদর উপজেলার ৪ নম্বর কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের জাকিরতবক এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। বরগুনা থানার ওসি মাসুদুজ জামান জানান, মাদক কারবারিদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে ছগির খান মারা গেছেন। গতকাল শনিবার ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোবারক হোসেন কুট্টি (৪৫) নামে এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কুট্টির বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় মাদকের প্রায় ১৫টির মামলা রয়েছে। ফেনীর রুহিতিয়া এলাকা থেকে কবির হোসেন (৫০) নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কবির রুহিতিয়া ব্রিকফিল্ড এলাকায় নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। ফেনী মডেল থানার ওসি রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, ভোর ৪টার দিকে সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের রুহিতিয়া ব্রিকফিল্ড এলাকায় গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার পরিচয় মেলে। নিহত কবির একজন ডাকাত। পাবনা সদর থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আব্দুর রহমান নামে একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহত আবদুর রহমান চিহ্নিত মাদক কারবারি।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দক্ষিণ বাঁশজানি সীমান্তে শনিবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইব্রাহিম হোসেন (৩৭) নামে এক মাদক চোরাকারবারি নিহত হয়েছেন। পুলিশ এ সময় ৫ কেজি গাঁজা, দেশীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে।

মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে গত ১২ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ জনে। গত ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ১৮ জন। পরে ২১ মে ৯ জন, ২২ মে ১১ জন, ২৩ মে ৯ জন, ২৪ মে ৯ জন, ২৫ মে ১০ জন ও গতকাল ২৬ মে ১২ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়। কয়েকজনের পরিবার নিহতদের নির্দোষ বলে দাবি করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এরা অপরাধের সঙ্গে জড়িত এবং মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
তবে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে সারা দেশে মাদক কারবারি ও সেবীরা চরম আতঙ্কে পড়েছে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। অভিযানকারীদের বক্তব্য এ অভিযান নিয়ে কিছু সমালোচনা এলেও অচিরেই দেশের জনগণ এর সুফল ভোগ করবে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/320449