২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ১১:২৬

ঈদে ভারতীয় শাড়িতে বাজার সয়লাব

বাঙালি নারীর পছন্দের ভূষণ শাড়ির কদর বিশ্বজোড়া। ফ্যাশনের জগতে শাড়ি নারীকে বৈচিত্র্যময় রূপে ফুটিয়ে তুলতে শতভাগ সক্ষম হয়েছে। আর তাই তো ঈদের সাজে নতুন পোশাক হিসেবে শাড়ির গুরুত্ব আগাগোড়া। শাড়ি মানে কটন, সিল্ক, মসলিন, বেনারসি এবং জর্জেটের ফেব্রিকে হালকা কিংবা ভারি কাজ। সঙ্গে লাবণ্যময় একটু সাজ! ব্যস উৎসবকে রাঙিয়ে তুলবে রঙিন আদলে। ঈদ উপলক্ষে নারী ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে শাড়ির দোকানগুলোতে। ভিন্নধর্মী নকশা, চোখ ধাঁধানো রং আর মনকাড়া কারুকাজের শাড়িগুলো নজর কাড়ছে নারীদের। বিশেষ করে এবার ঈদে ঐতিহ্যবাহী ও ভারি কাজের শাড়ির প্রতিই নারীদের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। ঈদের বাজারে সপিংমল গুলোতে ভারতীয় শাড়িতে সয়লাব। ভারতীয় শাড়ির দাপটে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর মাথায় হাত। দেশীয় শাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হারানোর আশঙ্কা।
ঈদে ভারতীয় শাড়িতে বাজার সয়লাব: গতকাল শনিবার রাজধানীর ঢাকার সপিংমলগুলোতে ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়। বিক্রেতারা বলেন, দেশের সীমান্তপথে অবৈধভাবে আসা ভারতীয় শাড়ি-কাপড়ে সয়লাব হয়ে গেছে রাজধানী ঢাকার ঈদের বাজার। সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযানের সুযোগে এবার ভারতীয় শাড়ি দেশে বেশি ঢুকেছে।

স্বনামধন্য বিপণি বিতানের প্রতিটি দোকানে এখন শোভা পাচ্ছে দৃষ্টি কাড়া ভারতীয় শাড়ি-কাপড়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বিপণি বিতানগুলো ইতোমধ্যে ঈদের কাপড়ের সাজ-সজ্জায় রঙিন হয়ে উঠেছে। এসব বিপণি বিতানের প্রতিটি দোকানে দেশীয় কাপড়ের পাশাপাশি ভারতীয়, পাকিস্তানী ও চায়না কাপড় শোভা পাচ্ছে। বিশেষ করে কাপড়ের পাইকারী বাজার খ্যাত সদরঘাট, গুলিস্থান, বঙ্গবাজার, রাজধানী সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, গাউসিয়া, বসুন্ধরা, ইস্টানপ্লাজা, চন্দ্রিমা মার্কেটসহ সবকটি বিপণি বিতান সয়লাব হয়ে গেছে ভারতীয় শাড়ি ও কাপড়ে।

সরেজমিন দেখা যায়, ভারতীয় শাড়ি কাপড়ের মধ্যে থ্রীপিচ, শটপিচ, লেহেঙ্গা, কামিছ, শাড়িসহ নানারকম কাপড় রয়েছে। যেগুলো রংয়ে চকচক করলেও মানে তেমন ভাল নয়। আর এসব কাপড়কে ভারতীয় কাপড় না বলে বিক্রেতারা দেশীয় কাপড় অথবা শুধুমাত্র বিদেশী কাপড় বলে বিক্রি করছে। ফলে দেশীয় শাড়ি কাপড়ের মান সম্পর্কে ক্রেতাদের মধ্যে খারাপ ধারণা জন্মাচ্ছে। দেশীয় কাপড়ের ঐতিহ্য নিয়ে দেশীদশ, অঞ্জনস, আড়ংসহ নগরীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতারা জানান, বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে নিম্মমানের ভারতীয় শাড়ি-কাপড়কে দেশী কাপড় আর আমাদের শপিং সেন্টারে এসে দেশী কাপড়কে ভারতীয় বা বিদেশী কাপড় বলে ক্রেতারা। এ নিয়ে তাদের বিপাকে পড়তে হয়।

বিক্রেতারা জানান, এ পর্যন্ত ভারতীয় বিভিন্ন কাতান শাড়িই বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রির তালিকায় এগিয়ে আছে আদি জামদানি। ভরা বর্ষায় ঈদ উদযাপনে গরম ও বৃষ্টির কথা মাথায় রেশে দেশীয় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস এনেছে হালকা ও আরামদায়ক শাড়ি। আধুনিকতার সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উৎসব পালনে তরুণীরা বেছে নিচ্ছেন জর্জেট, শিফন ও সিল্কের কাপড়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরাবরের মতো কাঞ্জিভরম, পঞ্চমকলি, অপেরা কাতান, কাঁঠাল কাতান, আলাপ কাতান, ভোমকা কাতান, খাদি কাতান, শিফন, ক্র্যাফট, জর্জেটসহ বিভিন্ন নামের ভারতীয় শাড়ির দখলে এ দেশের বাজার। শাড়ি আমদানিকারকরা জানালেন, এবার ঈদ বাজারকে লক্ষ্য রেখে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার শাড়ি আমদানি হয়েছে। বিক্রেতাদের মতে, ভারতীয় শাড়ির প্রতি এ দেশের ক্রেতাদের দুর্বলতা থাকলেও আগে এর বাজার ছিল সীমিত। কিন্তু গত এক দশকে বাংলাদেশে ভারতীয় শাড়ির বাজার বড় হয়েছে কয়েকগুণ, একই সঙ্গে ভারতীয় শাড়ির চাহিদা তৈরি হয়েছে সব শ্রেণী ক্রেতার মাঝেই।

বিভিন্ন শাড়ির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শাড়িগুলোতে এমব্রয়ডারি ও ডলার ব্যবহার করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে শাড়িতে ব্লক ও কারচুপির কাজ বেশি দেখা গিয়েছিলে। এবারের ঈদ বাজারে ৪০০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে সুতি ও সিল্ক শাড়ি। আর জামদানির দাম পড়বে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। এবারের ঈদ উপলক্ষে মসলিন শাড়িতে করা হয়েছে বির্টস, দপকা, জরি কম্বিনেশনে হাতের কাজ। জামদানি শাড়িতে করা হয়েছে পাল্স, বিটস দিয়ে হাতের কাজ। এছাড়া আছে শিপন ও জর্জেট শাড়ি। গরমের কারণে শাড়ির রং হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে হালকা রং। গরমের কারণে শাড়ির রং হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে হালকা কালার। গোলাপি, বেগুনি, হালকা নীল, জলপাই, এ্যাশ, অফহোয়াইট কালার ব্যবহার করা হয়েছে শাড়িতে। মসলিন শাড়ির দাম পড়বে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা, জামদানি, জর্জেট ও শিপন শাড়ির দাম পড়বে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। সুতি, সিল্ক, হাফসিল্ক ও মসলিন শাড়িতে ব্যবহার করা হয়েছে ঈদ উৎসবের রং। ডিজাইনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এ্যাপ্লিক, সুতার কাজ, কারচুপি, ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্টসহ নানা মাধ্যম। তবে এবারের শাড়ির বাজারে দামটা বেশ চড়াও বলেছেন এমন অনেক ক্রেতা। আর তা স্বীকার করলেন অনেক বিক্রেতাই।

দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর শাড়িতেও লাল, কালো, নীল ও সবুজ রংকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শাড়ির মধ্যে রয়েছে জামদানি, টাঙ্গাইল ও পাবনার তাঁতের শাড়ি এবং মিরপুরের কাতান। টাঙ্গাইলের সুতি শাড়ি এক হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা, রাজশাহী সিল্ক চার হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা এবং সুতি শাড়িতে ব্লক, বাটিক, হাতের কাজ ও এ্যাপ্লিক করা এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে বলে। তবে ঈদকেন্দ্রিক শাড়ির বাজার এখনও ভারতীয় শাড়ির দখলে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারীরা জানান, গরম এবং বৃষ্টিকে মাথায় রেখে এবারের শাড়ির ডিজাইন করা হয়েছে। শাড়িতে আনা হয়েছে নানা কাটিং ভেরিয়েশন। কন্ট্রাক্ট এবং কালারের কম্বিনেশন এবার চোখে পড়ার মতো। হাফ সিল্কের সঙ্গে এন্ডি, আবার সুতির সঙ্গে এন্ডি মিলিয়ে ডিজাইনে নতুনত্ব আনা হয়েছে। রং হিসাবে প্রধান্য পেয়েছে সবুজ, টিয়া, পেস্ট, গোলাপি, বেগুনি, কালো ইত্যাদি রং। ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে মিশ্র মাধ্যম ও প্যাচ ওয়ার্ক। দাম পড়বে ১২০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত ।
বয়স ও উৎসবকে মাথায় রেখে শাড়ি ডিজাইন বিন্যাস করা হয়েছে। এসব শাড়ির দাম পড়বে সুতি ১০০ থেকে ৫ হাজার টাকা, সিল্ক ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, মসলিন ৪ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, হাফসিল্ক ২৫ শ’ থেকে ৬ হাজার টাকা।
ঢাকার এমন কিছু বিশিষ্ট দোকান আছে যাদের প্রিন্টের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। বিদেশ থেকেও মানুষ আসেন এসব প্রিন্টের খোঁজে। সেই সব ব্লক, কালার কম্বিনেশন আজও অমলিন। তাই গড্ডলিকার স্রোতে গা না ভাসিয়ে নিজস্বতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। সচেতন থাকুন, আধুনিক স্টাইল সম্পর্কে অবহিত থাকুন।

দর্জিবাড়ি প্রধান ফ্যাশন ডিজাইনার বলেন, ‘ঈদে নারীর পছন্দের ভূষণ বরাবরের মতোই শাড়ি। হালকা এই পোশাকটি যেমন পরতে আরাম, তেমনি দেখতেও ভালো এবং স্নিগ্ধ লাবণ্যময়। আর ঈদের সময়টায় আটপৌরে শাড়িতে স্টাইলিং করতে পারলেই কিস্তিমাত।’ সাজগোজ তো শুধু শাড়ি বা অন্য পোশাক নয়। সঙ্গে আছে মানানসই অ্যাক্সেসরিজও। নারীরা শাড়ির সঙ্গে কখনো চিরায়ত বাঙালি সাজ আবার কখনো বিচিত্র সমাবেশ আনেন। বর্তমানে বোট নেক, হাই নেক, স্লিভলেস নানা কাটের ও নানা রকমের ব্লাউজ, চুলের সাজ ও গয়নায় নারী হয়ে উঠতে পারেন আকর্ষণীয়। আড়ং, বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশ, অঞ্জন’স, কে-ক্রাফট, সাদাকালো প্রভৃতি ফ্যাশন হাউস এবং নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, মৌচাক মার্কেট থেকে শুরু করে রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, মেট্রো শপিং মল, পুলিশ প্লাজায় পাবেন ঈদের শাড়ি।

http://www.dailysangram.com/post/332006