দৌলতদিয়া ঘাটে গর্তে পড়ে একটি ট্রাক উল্টে আছে
২৩ মে ২০১৮, বুধবার, ১০:৩০

দৌলতদিয়া ঘাটে এবারো ঈদে যাত্রীদুর্ভোগ বাড়বে

এম মনিরুজ্জামান রাজবাড়ী সংবাদদাতা

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। প্রায় সারা বছরই এ ঘাটে দুর্ভোগ লেগেই থাকে। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে তা অসহনীয় মাত্রায় রূপ নেয়। বিশেষ করে দুই ঈদে এ ঘাট দিয়ে চলাচলকারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। এ ঘাটে তিনটি সমস্যার সমাধান করা না গেলে আসন্ন ঈদেও ঘরমুখো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাড়তি মানুষের চাপের কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ প্রতি ঈদেই দুর্ভোগ লাঘবে নানা উদ্যোগ নেয়। কিন্তু দুর্ভোগ কখনো যাত্রীদের পিছু ছাড়েনি। এবারো নৌপরিবহনমন্ত্রী ঘাট পরিদর্শন করে ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী সামাল দিতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। তবে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ফোরলেন মহাসড়কের দুই কিলোমিটার খানাখন্দ সংস্কার, দৌলতদিয়ার ৪টি ফেরিঘাট সর্বক্ষণ সচল রাখা, ঘাটের সংখ্যা বাড়ানো এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অন্তত ২০-২২টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করার পদক্ষেপ না নিলে আসন্ন ঈদেও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে যাত্রীদের সঙ্গী হবে চরম দুর্ভোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরিসঙ্কট দীর্ঘ দিনের। এ রুটে প্রতিনিয়তই যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও ফেরির সংখ্যা বাড়ছে না। তা ছাড়া পুরাতন ও লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা পুরনো ফেরি দিয়ে চলছে যানবাহন পারাপার। সামান্য স্্েরাত বা বৈরী আবহাওয়ায় ঘাটে বসে থাকে ফেরিগুলো। এ ছাড়া রয়েছে ফেরিঘাট সমস্যা। সেই সাথে মহাসড়কে খানাখন্দে ভরে গেছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ ঘরমুখো মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হবেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারিজ পর্যন্ত ফোরলেন মহাসড়কের এক পাশের অংশে বিভিন্ন্ স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এসব গর্তের কারণে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করায় সৃষ্টি হয় যানজট। মাঝে মধ্যে রাস্তায় যানবাহন বিকল হওয়াসহ উল্টানোর চিত্রও চোখে পড়ে। অপর দিকে বর্তমানে দৌলতদিয়া প্রান্তে ৪টি ফেরি ঘাটের মধ্যে দুটি সচল রয়েছে। অন্য ১ ও ৪ নম্বর ফেরিঘাট আংশিক সচল রয়েছে। এ ছাড়া দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরিবহরে ১৫ থেকে ১৬টি ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। তবে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, চলাচলকারী ফেরিগুলো অত্যন্ত পুরনো হওয়ায় তীব্র স্্েরাতে ও দমকা হাওয়ায় অনেকগুলো রাতে চলাচল করতে পারে না। এতে প্রতিনিয়ত ঘাট এলাকায় নদী পারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়।
যানবাহনের চালকরা অভিযোগ করেন, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারিজ পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ফোরলেন সড়কের এক পাশে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। যার কারণে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে যায়। এ সময় গর্তে যানবাহনের চাকা পড়ে উল্টে যায়। সড়ক বিভাগ এসব দেখেও আমলে নিচ্ছে না।
ঘাটে অপেক্ষমাণ পরিবহনের চালক ও কর্মচারীরা জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরিসঙ্কট দীর্ঘ দিনের। প্রতিদিনই এ রুট দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় ফেরির সংখ্যা বাড়ছে না। অন্য দিকে কর্তৃপক্ষ বলছে স্থায়ীভাবে আরো ফেরিঘাট নির্মাণ করা হবে। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ দেখছি না। দৌলতদিয়ায় চারটি ফেরিঘাটের প্রতিটির র্যাম ও পন্টুনের সমস্যা আছে। যার কারণে ফেরিগুলো ঠিকমতো ঘাটে ভিড়তে পারে না।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো: শফিকুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে গত ঈদে ১৯টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করার পরও বেগ পেতে হয়েছিল। এখন গাড়ির সংখ্যা আরো বেড়েছে। সে অনুযায়ী ফেরির সংখ্যা বাড়াতে না পারলে ঈদের চাপ সামাল দেয়া কঠিন হবে। এ ছাড়া দৌলতদিয়ার ৪টি ফেরিঘাট সচল রাখার পাশাপাশি ঘাট আরো বাড়ানো গেলে ভালো হয়। ইতোমধ্যে নৌপরিবহনমন্ত্রী আরো ঘাট নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, ঈদের আগেই ঘাট এলাকায় মহাসড়ক জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসক সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চিঠি দিয়েছেন।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দম হোসেন জানান, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ফোরলেন মহাসড়কের এক পাশে রিপিয়ার, কার্পেটিং সিলকোডের কাজ আগামী দুই সপ্তারের মধ্যে শেষ হবে। আশা করি আসন্ন ঈদে এখান দিয়ে যানবাহন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/11299