২৩ মে ২০১৮, বুধবার, ১০:২৮

কাজ শুরু না হতেই পদ্মায় রেলসংযোগে ব্যয় বাড়ল

পদ্মা বহুমুখী সেতুতে রেলের সংযোগ কাজ শুরুই হয়নি। অথচ রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ব্যয় এখনই ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বাড়ানো হলো। সেই সাথে বাস্তবায়নকালও বাড়ানো হলো আরো দুই বছর। ফলে রেল সংযোগ প্রকল্প ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকায় পৌঁছাল। অন্য দিকে অর্থায়নকারী দেশ চীন এই প্রকল্পে ঋণ সহায়তা ৩ হাজার ৭১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা কমিয়েছে, যা সরকারি তববিল থেকে পুষিয়ে নেয়া হবে বলে একনেক থেকে জানানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চীনের সাথে ঋণ চুক্তি করতে দুই বছর লেগে যায়। সমঝোতার মাধ্যমে এই ঋণের জন্য বছরে ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটিসহ মোট ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের জানান। তিনি জানান, ১৬ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯৬ হাজার ২৩৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫২ হাজার ৬৮৫ কোটি ৫ লাখ টাকা দেয়া হবে জিওবি খাত থেকে, আর প্রকল্প সাহায্য ৪৩ হাজার ২২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বাকি ৩২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দেবে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো।

একনেকের দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩ মে যখন পদ্মা বহুমুখী সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয়া হয় তখন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সে সময় এই ব্যয়ের মধ্যে চীনের ঋণসহায়তা ছিল ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা, আর সরকারি অর্থায়ন ছিল ১০ হাজার ২৩৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। মূল সেতুর কাজ এখনো অর্ধেকই হয়নি, ইতোমধ্যে রেলসংযোগ প্রকল্পের ব্যয় একদফা বাড়ানো হলো। ফলে বর্ধিত ব্যয় এখন সরকারকে তার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দিতে হবে। ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা বর্ধিত ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা, আর এখন চীন দেবে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। মন্ত্রী বলেন, জমি অধিগ্রহণে চীন টাকা দেবে না। তাই ওই টাকা বাংলাদেশ সরকারকেই দিতে হচ্ছে। ব্যয়বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শক খাত, নির্মাণকাজের ব্যয় বৃদ্ধিতে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে।

এই রেলসংযোগ প্রকল্পে, ১৭২ কিলোমিটার নতুন ব্রডগেজ মেইন লাইন (ঢাকা-ডেমরা ডাবল লাইন ৩ কিলোমিটারসহ) ও ৪৩.২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং লাইনসহ মোট ২১৫.২২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ, ২৩.৩৭৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ১.৯৮ কিলোমিটার র্যাম্প, ৬৬টি মেজর ব্রিজ, ২৪৪টি মাইনর ব্রিজ/কালভার্ট/আন্ডারপাস, একটি রোড ওভারপাস (মাওয়া অ্যাপ্রোচ) এবং ২৯টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ; ১৪টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ ও ৬টি বিদ্যমান স্টেশন ভবন রিমডেলিং, ২০টি স্টেশনে কম্পিউটার বেইজড রিলে ইন্টারলকড্ সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন, ১০০টি ব্রডগেজ কোচ সরবরাহ, সুপারভিশন পরামর্শক সেবা এবং ১৭৮৬ একর প্রাইভেট জমি অধিগ্রহণ ও রিসেটেলমেন্ট প্ল্যান বাস্তবায়ন।
প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন
অন্য দিকে, ৩৮ হাজার ৩৯৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের ২৫ হাজার ৫৯১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার জোগান দেবে সরকার। বাকিটা ৮টি দাতাসংস্থার পক্ষ থেকে ঋণ দেয়া হবে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পাঠ্যসূচিতে নির্ধারিত শ্রেণীভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক শিখন যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিখ-শেখানোর গুণগতমানের উন্নয়ন সাধন, সার্বজনীনভাবে বিস্তৃত একটি সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা যা কিনা শিশুদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সমর্থ হবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী সুশাসনব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থান রাখা ও উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করে একটি কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা বলে মন্ত্রী জানান। তিনি জানান, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো, শিশুদের জন্য কমপক্ষে দুটো ভাষা শেখানো এবং ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুলে আলাদা দরজা করা।

চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার
বর্তমানে দেশের সরকারি মালিকানায় ১৫টি চিনিকল রয়েছে। এগুলোর বার্ষিক গড় উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। চিনিকলগুলোয় চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি উপজাত হিসেবে চিটাগুড়, প্রেসমাড ও ব্যাগাস উৎপাদিত হয়। এর ফলে পরিবেশ দূষণকারী তরল বর্জ্য নির্গত হয়, যা অপরিশোধিত অবস্থায় নিকটবর্তী জমি বা জলাশয়ে পড়ে এগুলোর স্বাভাবিক অবস্থা নষ্ট করছে। এ থেকে উত্তরণে চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করছে সরকার। এ জন্য সরকার প্রতিটি চিনিকলে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে একটি চিনিকলে শোধনাগার নির্মাণের পর এবার বাকি ১৪ চিনি কলে হবে এ শোধনাগার। ১৪টি চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এ লক্ষ্যে ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প হলো, ৮ হাজার ৪৯৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রূপসা ৮ শ’ মে.ও. কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ২ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কন্সট্রাকশন অব নিউ ১৩২/৩৩ কেভি অ্যান্ড ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন আন্ডার ডিপিডিসি (প্রথম সংশোধন) প্রকল্প, ২ হাজার ১০৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল অ্যান্ড এনসিলারি ভবন ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল, নোয়াখালী প্রকল্প, ৮০৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্-এর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প, ৭৫ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তথ্য কমিশন ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৫৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ বেতার, সিলেট কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল সম্প্রচার যন্ত্রপাতি স্থাপন প্রকল্প, ৩৯৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ প্রকল্প, ১৬৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প (১৩ তলা ভবন) প্রকল্প, এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্প, ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প, ৬১২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৭১১ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫টি র্যাব কমপ্লেক্স ও ১টি র্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প এবং ঢাকার জলাবদ্ধতা ঠেকাতে ৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্প।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/11301