৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৫

শুরুতেই আস্থা-অনাস্থার দোলাচলে নতুন ইসি

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেবেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রধান কে এম নুরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। ওই দিন বেলা ৩টায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে তাদের শপথ পড়াবেন। সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত সোমবার নতুন ইসি নিয়োগের পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সরকার সমর্থকরা নতুন ইসির বিষয়ে ইতিবাচক মত দিলেও সমালোচনা করেন বিএনপি নেতারা। ৫ সদস্যের ইসিতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি না থাকায় আশ্চর্য হয়ে যান খোদ সার্চ কমিটির সদস্যরা। এর সমালোচনা করছেন বিশিষ্টজনেরাও। ফলে শুরুতেই আস্থা-অনাস্থার দোলাচলে পড়ে যান নতুন ইসি।
আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি ২৬টি রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত ১২৮টি নাম থেকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে। এই ১০ জনের মধ্য থেকে ৫ জনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ।
এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নাম প্রস্তাব করেছিল তরিকত ফেডারেশন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে বিএনপি, বেগম কবিতা খানমকে আওয়ামী লীগ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীকে গণতন্ত্রী পার্টি। আরেক নির্বাচন কমিশনার মো: রফিকুল ইসলামকে অন্য একটি দল প্রস্তাব করে।
১৯৭৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকারি চাকরি জীবনের শুরু নতুন সিইসির। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকার উৎখাতে প্রশাসনের একাংশের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠিত হয় জনতার মঞ্চ। সেই মঞ্চের অন্যতম নেতা হওয়ায় ২০০১ সালে বিএনপি মতায় এসে তাকে প্রথমে ওএসডি এবং পরে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। হাইকোর্ট বিএনপি সরকারের ওই আদেশ বেআইনি ঘোষণা করেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভূতাপে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন নুরুল হুদা।
ইসি নিয়োগে সার্চ কমিটির ১০ জনের তালিকায় নাগরিক সমাজের তিন প্রতিনিধির নাম থাকলেও তাদের কাউকেই নেয়া হয়নি। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা।
সার্চ কমিটির সদস্য সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রস্তাবিত ১০ জনের মধ্যে যে কাউকে রাখতে পারেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু নাগরিক সমাজের কাউকে না রাখায় অবাক হয়েছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নতুন ইসিকে সবার আগে ভোটের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় ভোটাররা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনÑ সেই পথে যেতে হবে নতুন কমিশনকে। আমরা চাই, আগামীতে সব দল নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক ড. আবদুল আলিম বলেন, কাজী রকীবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন বিদায়ী কমিশনের মেয়াদের শুরুতে ২০১৩ সালে চার সিটি এবং শেষে এসে ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ছাড়া তাদের সময়ে হওয়া সব নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ। এর ফলে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার ওপর দেশের মানুষের আস্থা কমে গেছে। তাই ভোটের ওপরে মানুষের আস্থা অর্জন করাই হবে নতুন কমিশনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ২০১৯ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য বারবার বিদেশী দাতারা বলছেন, তাই সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সবার আস্থা অর্জন করা উচিত।
নির্বাচন কমিশনার নিয়ে তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যারাই প্রশাসন থেকে নির্বাচন কমিশনার হয়ে আসছেন তাদের ভিতরে সবসময় আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা থাকার কারণে সরকারের ওপর এক ধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি হয়ে যায়। ফলে যখন তারা নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করতে যায়, তখন তারা সেই কাজে ব্যর্থ হয়।
নব গঠিত নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেটি মন্দের ভালো। আমি খুশি হতাম যদি সেখানে সুশীলসমাজের প্রতিনিধিত্ব আরো থাকত।
এ দিকে ক্ষমতাসীন দল নতুন ইসিকে স্বাগত জানালেও লোকদেখানো ইসি গঠন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা।
গতকাল বুধবার এক সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার রার নামে সরকার লোকদেখানো নির্বাচন কমিশন গঠন করে মতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, সরকার সমর্থিত নির্বাচন কমিশনার দিয়ে সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার রা পাবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচনও হবে না। তাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার দ্রুত পদত্যাগ চায় বিএনপি।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/194290