১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ১০:২১

গাছ বিক্রির দরপত্রে সমঝোতার অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় সামাজিক বনায়নের গাছ বিক্রির দরপত্রে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে (ডিএফও) একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন বিভাগের কুলাউড়ার সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের (এসএনএফটিসি) উদ্যোগে বিভিন্ন সড়ক ও রেলপথের দুই পাশে ২০০২-০৩ ও ২০০৩-০৪ অর্থবছরে আকাশমণি, মেনজিয়াম, রেইনট্রি, কদম, মেহগনি, অর্জুন, জাম ও শিশু প্রজাতির বনজ গাছের বাগান করা হয়। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর কুলাউড়া-জুড়ী সড়কের ভূঁয়াই বাজার থেকে মানিক সিংহ এলাকা পর্যন্ত সড়কের ১ কিলোমিটার জায়গায় দুটি লটে ৪৮৫টি গাছ, কৌলা-চৌধুরীবাজার সড়কের ২ কিলোমিটার জায়গায় একটি লটে ১৭১টি, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথের আছুরিঘাট থেকে মানিক সিংহ এলাকা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার জায়গায় একটি লটে ১০০টি এবং গাজীপুর-বিজয়া সড়কের গাজীপুর থেকে চেংছড়ি পর্যন্ত ১ কিলোমিটার জায়গায় একটি লটে ৫২টি গাছ বিক্রির জন্য সিলেটের ডিএফও দরপত্র আহ্বান করেন। ২৯ ডিসেম্বর দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। ২০ জন ওই দরপত্র কেনেন।
গত ৫ জানুয়ারি পাঠানো আলমগীর হোসেন নামের কুলাউড়া পৌর শহরের এক ব্যক্তির করা ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রতি লটের বিপরীতে তিন-চারটি করে দরপত্র বিক্রি হয়। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনের আগে অর্থাৎ গত ২৮ ডিসেম্বর দরপত্র ক্রেতারা কুলাউড়া পৌর শহরের একটি বাসায় গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকে কম দরে পাঁচটি লটের গাছ কিনে লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চারটি লটে একটি এবং একটি লটে দুটি করে দরপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়, সমঝোতার কারণে সরকার রাজস্ব হারাবে। এ ছাড়া উপকারভোগী ব্যক্তিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেওয়া তিনজন ব্যবসায়ী বলেন, সমঝোতায় কুলাউড়া পৌর শহরের জয়পাশা এলাকার বাসিন্দা ও পৌর কাউন্সিলর হারুনুর রশীদ একটি, চৌধুরীবাজার এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ শামীম একটি ও কুলাউড়া পৌর শহরের বিছরাকান্দি এলাকার আসবাব ব্যবসায়ী আফতার হোসেন তিনটি লট পান। সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাঁরা দরপত্র দাখিল করেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আফতার হোসেন সমঝোতার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী সমঝোতার বিষয়টি স্বীকার করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন বিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জের এক কর্মকর্তা মুঠোফোনে বলেন, তাঁর ভাষায়, ‘শুনেছি পাঁচটি লটের গাছ কিনতে ব্যবসায়ীদের সমঝোতা হয়ে গেছে। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।’
বন বিভাগের একটি সূত্র জানায়, দরপত্রের ক্ষেত্রে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ বিক্রির পূর্ববর্তী তিন বছরের গড়মূল্য হিসেবে আকাশমণি ও শিশু প্রজাতির গাছের প্রতি ঘনফুট কাঠ ৩০০ টাকা, মেনজিয়াম ২৫০ এবং রেইনট্রি, কদম, মেহগনি, অর্জুন ও জামগাছের প্রতি ঘনফুট কাঠ ১৫০ টাকা করে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
স্থানীয় কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রতি ঘনফুট কাঠের দাম বন বিভাগ নির্ধারিত দামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। দরপত্রে সমঝোতা হওয়ায় গাছ বিক্রি করে বন বিভাগের ক্ষতি হবে।
সিলেটের ডিএফও আর এস এম মুনিরুল ইসলাম গত শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কুলাউড়ায় সড়কের পাঁচটি লটের গাছ বিক্রির ব্যাপারে দরপত্রের চূড়ান্ত অনুমোদন এখনো হয়নি। দরপত্র-প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ ওঠায় বিষয়টির তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দরপত্র বাতিল করে পুনরায় তা আহ্বান করা হবে।
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1080249/%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%9B-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%9D%E0%A7%8B%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%87