১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ৫:১১

দাম বেড়েছে কিছু ওষুধের, কোনো ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ

কয়েক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কিছু ওষুধের। ওষুধ উৎপাদন, দাম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ওষুধ প্রশাসনের নেই। দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ওষুধের নিয়মিত ক্রেতাদের সাথে মাঝে মাঝে দোকানদারদের ঝগড়া লেগে যাচ্ছে।
ওষুধের দাম বেড়েছে এমন অভিযোগ ওষুধ শিল্প সমিতি কখনোই স্বীকার করে না।
ওষুধের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভোক্তারা নয়া দিগন্তে ফোন দিয়ে জানতে চাইছেন। তারা জানতে চাইছেনÑ কী এমন হলো যে অস্বাভাবিক হারে ওষুধের দাম কেবল বাড়ছেই? এ প্রশ্নের উত্তর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর দিতে পারেনি। ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘এসেনশিয়াল বা অত্যাবশ্যক’ ওষুধের দাম বাড়েনি। এ ওষুধের দাম বৃদ্ধি করতে হলে উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হয়। আর ইনডিকেটিভ ওষুধের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসনের করার কিছু নেই।
অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আর নির্ধারিত দামে বিক্রি হয় না। কিনতে গেলে ফার্মেসির লোকজন আগে থেকেই জিজ্ঞাসা করেন ‘দাম বেশি, নেবেন কি না?’ নিতে চাইলে বলা হয় কিছুক্ষণ পরে আসতে হবে, অন্য জায়গা থেকে এনে দিতে হবে।
দাম বেড়েছে ডায়াবেটিসের ওষুধ ইনসুলিনের, রক্তচাপ কমানোর ওষুধ, ব্যথা-বেদনা উপশমের ওষুধ, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, ক্যাফেইনযুক্ত প্যারাসিটামল, গোল্ড ভিটামিন, অ্যান্টিবায়োটিক, ব্রেইন স্টিমিউলেটিং ওষুধসহ নির্দেশক মূল্যের (ইনডিকেটিভ প্রাইস) প্রায় সব ওষুধ।
সবগুলো কোম্পানির ৩০ ট্যাবলেটের গোল্ড ভিটামিন বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়। এর আগের দাম ছিল ১৮০ টাকা। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রায় সব ওষুধের আগের দাম ছিল পাঁচ টাকার নিচে। এখন প্রায় সবগুলো ট্যাবলেটই বিক্রি হয় আট টাকা অথবা এর চেয়ে কিছু বেশি দামে। রক্তে গ্লুকোজ কমানোর জন্য মুখে খাওয়ার টাইপ-২ ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টের ওষুধ কিছু দিন আগেও ৩০ টাকায় এক পাতা পাওয়া যেত। এখন এগুলো কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকায়। অ্যান্টিসেপটিক ও ডিসইনফেকট্যান্ট মলম কিছু দিন আগে ২৫ টাকায় পাওয়া যেত। এখন কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকায় অথবা এরচেয়ে বেশি দামে। ৩২ টাকার গ্যাস্ট্রিকের সাসপেনশন এখন ৬০ টাকার বেশি দামে কিনতে হয়। অঙ্গ পিচ্ছিল করার জন্য ব্যবহৃত জেসোকেইন জেলি বিক্রি হতো ৪০ টাকায়, পরে ৬০ টাকায় কিন্তু এখন প্যাকেটের গায়ে ৮০ টাকা দাম লেখা তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ওষুধটি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। এ ছাড়া দাম বেড়েছে ইনহেলারের, স্যালাইনের, বিভিন্ন ধরনের নাক অথবা চোখের ড্রপের, প্যারাসিটামল ও কাশির সিরাপের।
ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের প্রায় সব কোম্পানির মধ্যে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি কোম্পানি কোনো ওষুধের দাম বাড়ালে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই অন্যান্য কোম্পানি দাম বাড়িয়ে নেয়। এর একটি কারণ অন্যরা নিচ্ছে আমরা কেন নেব না। আরেকটি কারণ হলোÑ দাম কমিয়ে রাখলে ক্রেতারা মনে করেন এ কোম্পানির ওষুধ ভালো না, এ জন্য দাম কম। এ কারণে কিনতে চায় না। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অন্য কোম্পানি বাধ্য না হলেও দাম বাড়িয়ে দেয়।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/195138