২ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ১০:২২

বিনামূল্যে পাঠ্যবই

৮ প্রতিষ্ঠান কালো তালিকায়, ১৩ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত

নির্ধারিত সময়ে বই দিতে না পারায় ৮টি প্রিন্টার্সকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সব শর্ত অমান্য করায় পিএ প্রিন্টার্সের দরপত্রের জামানত ১৩ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই মাধ্যমিক পর্যায়ের বই ছাপার কাজ করে। এর মধ্যে শুধু পিএ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় পর্যায়ে কাজ করে। গত ২৫শে মার্চ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) উৎপাদন কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। যারা আপনাদের তথ্য দিয়েছে তাদের কাছে জেনে নেন। কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা ও জামানত বাজেয়াপ্তের সব ধরনের তথ্য প্রতিবেদকের কাছে আছে তারপরও কোনো মন্তব্য করতে চাননি চেয়ারম্যান।
কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে টাঙ্গাইল অফসেট প্রেস, আবুল প্রিন্টিং প্রেস, মডেল প্রিন্টিং ওয়ার্কস, কাজল প্রিন্টিং প্রেস, দি ক্যাপিটাল প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন, কোয়ালিটি প্রিন্টিং প্রেস, পিএ প্রিন্টার্স, আল মদিনা প্রিন্টিং প্রেস। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের আরো ২৮ দিন পর্যন্ত বই দেয়া যায়। কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান জরিমানা দেয়ার নির্ধারিত সময়ের পরও বই দিতে পারেনি। আর এনসিটিবির অনুমতি ছাড়াই উপজেলায় নিম্নমানের বই দেয়ার পিএ প্রিন্টার্সের কাজ বাতিল করে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করায় এনসিটিবি। এ অপরাধে প্রতিষ্ঠাটির ১৩ কোটি এক লাখ ৬২৬ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। এখন প্রতিষ্ঠানটির টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোষাগারে জমা দেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাগজ, কালি ও বইয়ের মোড়ক দেয়ার অভিযোগ তুলেন পরির্দশন টিম। এরপর তাদের কাজ বাতিল করে এনসিটিবি। এনসিটিবির উৎপাদন শাখার কর্মকর্তারা বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোষাগারে পাঠানো হয়। এ টাকা কোনো প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে আর উঠানোর নজির নেই।

এনসিটিবির সূত্রে জানা গেছে, আল মদিনা চুক্তি করেও কাজ করেনি। আর ক্যাপিটাল ও কোয়ালিটি প্রিন্টার্স মনিটরিং কাজে সহযোগিতা করেনি। এ দুটি প্রতিষ্ঠান নিজে প্রতিষ্ঠানের কাজ না করে অন্যের প্রতিষ্ঠানের কাজ করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কাজল ও মডেল প্রিন্টার্স এক বছরের আগের পুরাতন বইয়ের ওপর নতুন কাভার লাগিয়ে উপজেলায় সরবরাহ করে। আবুল ও টাঙ্গাইল প্রিন্টার্স নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই সরবরাহ ছাড়াও দরপত্রের শর্ত ভঙ্গের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে ফাইন স্টার প্রিন্টার্সকে নির্ধারিত সময়ের পরও বই সরবরাহ করলেও সিডি দিতে দেরি হওয়ার তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়নি। কর্মকর্তারা বলেন, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের আরো ২৮ দিন পর্যন্ত ১০ ভাগ জরিমানা দিয়ে বই দিতে পারেন। তারপরও ব্যর্থ হলে দরপত্রের পারফরমেন্স সিকিউরিটি হিসেবে দেয়া ২০ ভাগ টাকা বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে। তার আলোকেই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সময়মতো বই না দেয়ার জন্য এনসিটিবি দায় এড়াতে পারে না। প্রতিষ্ঠানগুলোকে মনিটরিং করার জন্য প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ইন্সপেকশন টিম নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের গাফিলতি এজন্য দায়ী। এ ছাড়াও এনসিটিবির শীর্ষ ব্যক্তির দায়সারা মনোভাব সময়মতো বই না দেয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এনসিটিবির কর্মকর্তারা বই ছাপার সময় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য চার থেকে ছয়টি বোনাস দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিটি টেন্ডার থেকে কর্মকর্তারা এক থেকে দেড় কোটি অনৈতিক সুবিধা নেন বলেও চাউর রয়েছে। গত বছর বেঁধে দেয়া সময়ে বই পৌঁছাতে না পারায় ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা এবং জালিয়াতির অভিযোগে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে এনসিটিবি।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=111540