২৭ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৪৪

প্রথম পাতা

মামলা থেকে রেহাই নেই নেতাকর্মীর আত্মীয়দেরও

 ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলা যুবদলের একজন নেতা তিনি। মামলার কারণে এখন এলাকা ছাড়া। তিনি পালিয়ে থাকলেও পুলিশের নজর পড়েছে তার পরিবারের দিকে। এলাকায় তার পরিবারের ব্যবসায় রয়েছে। ওই ব্যবসায় পরিচালনা করছেন যুবদল নেতার এক ভাই। পুলিশ এখন রোজ তাকে টানা-হেঁচড়া করছে। কখনো থানায় দেখা করতে বলে, কখনো ফোন করে খবর জানতে চায়Ñ এভাবে নানা হয়রানি। ভয়ে তিনিও এখন এলাকা ছাড়া। শুধু ঝালকাঠি নয়, দেশের সর্বত্রই এখন একই অবস্থা। কোনো কোনো এলাকায় নেতাকর্মীদের পরিবার-পরিজনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অজুহাতে মামলা হচ্ছে। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা বলেছেন, এই পরিস্থিতি অতীতে ছিল না। নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের এভাবে কখনো মামলার আসামি করা হয়নি।
রাজধানীর শাহবাগ থানার এক বিএনপি নেতা জানান, তার বিরুদ্ধে এখন অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি ঘিরে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১৯টি। কোনো কোনো মামলায় তার পরিবারের সদস্যদেরও আসামি করা হয়েছে। পুলিশ প্রায়ই তার বাসায় অভিযান চালায়। তাকে না পেয়ে স্বজনদেরকে ধরে নেয়ার চেষ্টা করে কয়েকবার। এখন তার পরিবারের সদস্যরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রমনা এলাকার চঞ্চল নামের এক যুবদল নেতা জানান, কোনো মামলা হলেই সেই মামলায় তাকে আসামি করা হয়। এখন তার পরিবারের সদস্যদেরও বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হচ্ছে।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সভাপতি মনির চেয়ারম্যান জানান, তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা সাজানো হচ্ছে। নতুন করে তার আত্মীয়স্বজনকেও বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হচ্ছে। তার অনেক আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা এখন পলাতক। পুলিশ তাদেরও গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে।

৮ ফেব্রুয়ারি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বেশির ভাগ মামলার বাদি থানা পুলিশ। ঝিনাইদহ সদর থানায় আটটি মামলা হয়। প্রতিটি মামলায় এজাহারনামীয়সহ প্রায় ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। প্রতিটি মামলায় অভিন্ন কিছু আসামির নাম রয়েছে। একাধিক নেতা বলেছেন, মামলা হলেই এই নামগুলো চলে আসে। এমনকি তাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন, যারা ৮ ফেব্রুয়ারির আগে-পরে দেশে ছিলেন না। কিন্তু তার পরেও তারা নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলার এজাহারনামীয় আসামি হয়েছেন। এসব মামলায় সরকার উৎখাত, জননিরাপত্তা বিপন্ন করার উদ্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমে বিঘœ সৃষ্টিসহ উসকানি দেয়ার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র ও ককটেল বোমা সহকারে গোপন বৈঠকের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় নেতাদের স্ত্রী-সন্তানেরাও আসামি।

৮ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ থানায় দায়েরকৃত ১৭ নম্বর মামলার ৭২ নম্বর আসামি দাউদ দীর্ঘ দিন ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমানের ছেলে বাবু (২৭) লেখাপড়ার জন্য চীনে রয়েছেন। কিন্তু ঝিনাইদহ থানায় ২০ ফেব্রুয়ারি দায়েরকৃত ৪৩ নম্বর মামলার ৭২ নম্বর আসামি হলেন বাবু। মশিউর রহমানের স্ত্রী শিখা রহমানের নামেও পুলিশ মামলা করেছে। স্থানীয় যুবদল নেতা আহসান হাবিব রনককে গ্রেফতার করতে গিয়ে তাকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেছেন পুলিশ সদস্যরা। এমনকি তার বৃদ্ধা মায়ের সাথেও পুলিশ দুর্ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক নেতাকে না পেয়ে পুলিশ তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, তার স্ত্রী কোনোদিন রাজনীতি করেননি। তার পরও কেন তাকে আসামি করা হলো তা বুঝতে পারছেন না তিনি। হয়তো তাকে হাতের নাগালে পাওয়ার জন্যই পুলিশ এই কৌশল করেছে বলে তার মন্তব্য। আঞ্জুমান আরা নামের আরেকজনকে পুলিশ আসামি করেছে, যার স্বামীর নাম লেখা রয়েছে অজ্ঞাত।

বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় এক নেতা বলেন, অতীতে কোনোদিন এই পরিস্থিতি দেখা যায়নি। নেতাকর্মীদের না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যদের মামলায় আসামি করার ঘটনা এখন ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। কোনো নেতাকে খুঁজে না পেলে তাকে মানসিকভাবে আঘাত করতে পুলিশ তার পরিবারের সদস্যদের আসামি করে দিচ্ছে।
এভাবে নেতাকর্মীর স্বজনদের কেন মামলায় আসামি করা হচ্ছে এবং তাদের কেন হয়রানি করা হচ্ছে, তা জানতে চেয়ে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/305242