বিমান হামলায় পা হারানো এক ইয়েমেনি শিশু
২৭ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৩২

ইয়েমেন সংকটের শেষ কোথায়?

ইয়েমেন থেকে হুতি বিদ্রোহীদের ছুড়ে মারা সাতটি মিসাইল গুলী করে ভূপাতিত করেছে সৌদি আরব।
এর তিনটি মিসাইল সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। মিসাইলের টুকরো নীচে পড়ার সময় একজন নিহত হয়েছে। গত রবিবারই ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি জোটের হস্তক্ষেপের তিনবছর পূর্তি হয়েছে। আর সেই উপলক্ষেই এই হামলা। হুতি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, তারা সৌদি আরবের বেশ কয়েকটি লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে, তার মধ্যে রিয়াদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে।

ইয়েমেন সংকট: কে কার সঙ্গে লড়াই করছে?
মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন বসতি আর আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরীব দেশ ইয়েমেন। গৃহযুদ্ধে দেশটি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কে কার সঙ্গে লড়াই করছে?
যুদ্ধ কিভাবে শুরু হলো?
ইয়েমেনের লড়াইয়ের শুরুটা হয় আরব বসন্ত দিয়ে, যার মাধ্যমে আসলে দেশটিতে স্থিতিশীলতা আসবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু ঘটেছে উল্টোটা। ২০১১ সালে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহকে তার ডেপুটি আবদারাবুহ মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট হাদিকে অনেকগুলো সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। আল কায়েদার হামলা, দক্ষিণে বিছিন্নতাবাতী আন্দোলন, মি. সালের প্রতি অনেক সামরিক কর্মকর্তার আনুগত্য। এর বাইরে দুর্নীতি, বেকারত্ব আর খাদ্য সংকট তো রয়েছেই।

আর নতুন প্রেসিডেন্টের দুর্বলতার সুযোগে ইয়েমেনের যাইডি শিয়া মুসলিম নেতৃত্বের হুতি আন্দোলনের কর্মীরা সাডা প্রদেশ এবং আশেপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এ সময় অনেক সুন্নিরাও তাদের সমর্থন যোগায়। এরপর বিদ্রোহীরা সানা অঞ্চলেরও নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয়। পরের মাসে দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর এডেন থেকে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট হাদি। হুতি আর নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহের প্রতি অনুগত। এরপর তারা পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে। তাদের পেছনে ইরান সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। এ পর্যায়ে মি. হাদি দেশের বাইরে পালিয়ে যান। কিন্তু হাদিকে ইয়েমেনে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে সৌদি আরব আর অন্য আটটি সুন্নি দেশ একজোট হয়ে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে। এই জোটকে লজিস্টিক আর ইন্টেলিজেন্স সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর ফ্রান্স।

এরপর কি হচ্ছে?
তিনবছরের এই লড়াই দুই পক্ষকেই পর্যুদস্ত করে তুলেছে। একটি যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের তিনটি সংস্থার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। চারমাসের লড়াইয়ের পর সরকারপন্থী বাহিনী এবং দক্ষিণাঞ্চলের সুন্নি উপজাতীয় গোত্রগুলো বিদ্রোহীদের এডেনে আসা ঠেকিয়ে দিয়েছে। ২০১৫ সালে অগাস্টে এডেনের অবতরণ করে এবং হুতিদের তাড়িয়ে দেয়। প্রেসিডেন্ট হাদি নির্বাসনে থাকলেও, তার সরকার অস্থায়ীভাবে এডেনে কার্যক্রম শুরু করে। তবে হুতিরা সানা এবং টিয়াজে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং সেখান থেকেই সৌদি আরবে মর্টার আর মিসাইল ছুড়ে মারছে। আর দুপক্ষের এই বিরোধে সুযোগ নিচ্ছে আল কায়েদা ইন দি আরব পেনিনসুলা আর ইসলামিক স্টেট গ্রুপ। তারা দক্ষিণে বেশ কিছু স্থান দখল করে নিয়েছে। ২০১৭ সালে নভেম্বরে রিয়াদে ইয়েমেনের মিসাইল পড়ার পর দেশটির চারদিকে অবরোধ জোরালো করে সৌদি আরব। তবে জাতিসংঘ বলছে,এর ফলে দেশটিতে কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ দেখা দিচ্ছে।

ইয়েমেনের বিদ্রোহী আর সরকারি বাহিনীর মধ্যে ফাটলগুলো কোথায়?
হুতি আর সালেহ একটি জোট গঠন করলেও সেখানে এর মধ্যেই ফাটল দেখা দিয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে সানার বড় মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে বহু মানুষ হতাহত হয়। সালেহ তখন সৌদি আরবকে প্রস্তাব করেন যে, তারা যদি অবরোধ তুলে নেয় আর ইয়েমেনে হামলা বন্ধ করে, তাহলে নতুন সম্পর্ক হতে পারে। হুতিরা পাল্টা জবাবে তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের অভিযোগ আনে যে, তিনি এই জোটে কখনোই বিশ্বাস করতেন না।
হুতিরা সানার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য অভিযান শুরু করে। ৪ঠা ডিসেম্বর তারা ঘোষণা দেয় যে, সালেহ রাজধানী থেকে পালানোর সময় নিহত হয়েছেন।
এর এক সপ্তাহ পরে সরকারি বাহিনীর মধ্যেও লড়াই বেধে যায়। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দাবি করে, ১৯৯০ সালে যে উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের যে ইউনিয়ন তৈরি হয়, সেটি ভেঙ্গে আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠন করা হবে। এ নিয়ে হাদির পক্ষের সৈন্যদের সঙ্গে তাদের বিরোধ তৈরি হয়।

 

http://www.dailysangram.com/post/324162