২৭ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:১২

‘স্বাধীনতাটাকে খুজছি’

-ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম

বাংলাদেশ আজ স্বাধীনতার ৪৭ তম দিবস উদযাপদ করছে। স্বাধীনতা একটি জাতির জন্য বিরাট গৌরবের, অনেক বেশী আনন্দের। স্বাধীনতা আমাদের অর্জিত সম্পদ। কৃষক-শ্রমিক, জেলে-তাঁতী, সাংবাদিক-সাহিত্যিক, আলেম-উলামা, বুদ্ধিজীবীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের আত্ম-ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি গৌরবের মায়াগাঁথা এই লাল সবুজের পতাকা। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমারা লাভ করি মহান বিজয়। মাত্র নয় মাসের সংগ্রামে অর্জিত স্বাধীনতা বিশ্বের ইতিহাসেও বিরল। এজন্য জে.আর. লাওয়েল বলেছেন- “আমি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক; এর চাইতে বড় গৌরব আর কিসে হতে পারে?”

ভারত ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে চল্লিশ বছরের ওপর আন্দোলন করে অর্জন করেছে স্বাধীনতা। ভিয়েতনামের স্বাধীনতা লাভ করতে সময় লেগেছে ২৬ বছর। ফরাসী শক্তির বিরুদ্ধে নয় বছর ধরে লড়াই করে আলজেরিয়া পায় স্বাধীনতা। ইরিত্রিয়া রক্তাক্ত সংগ্রাম করে আজও ইথিওপিয়া থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারেনি। একইভাবে কাশ্মীরসহ ভারতের সাত রাজ্য অব্যাহত রেখেছে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। সুতরাং অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা আমাদের জন্য গৌরব ও অহংকারের। জর্জ হাবাট-এর উক্তি ছিলো- দেশ মাতৃকার জন্য যারা জীবন দান করেন, তারাই সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী।

আমরা স্বাধীন ভূ-খন্ড পেয়েছি, কিন্তু পায়নি তার আয়তন। আমরা স্বাধীন একটি রাষ্ট্র পেয়েছি বটে, কিন্তু পাইনি আমাদের সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকার। আমরা পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পেলেও এখনও নিজ দেশেই যেন বন্দী!। স্বাধীনতা শব্দটির মাঝেই লুকায়িত প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ের চাওয়া পাওয়া আর আত্মার প্রশান্তি। সেই পাওয়া অঢেল সম্পদ আর ক্ষমতার মালিকানা নয়। কিংবা আভিজাত্য আর বিলাসিতাপূর্ণ জীবনও নয়। স্বাধীনতা মানে আমার কথা বলার অধিকার, স্বাধীনতা মানে আমার মা-বোনের জান-মাল, ইজ্জত, আব্রুর নিরাপত্তা। স্বাধীনতা মানে আমার পরাধীনতার বেড়াজাল থেকে মুক্তি। স্বাধীনতা মানে আমার ছোট্ট একটি সংবিধান। স্বাধীনতা মানে আমার, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি।

কিন্তু আজ আমাদের মানচিত্র খন্ডবিখন্ডিত। বিডিয়ারকে হত্যা করে সীমান্ত অরক্ষিত, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার আজ ভূলুন্ঠিত। প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নির্বাসিত। মানুষের জান-মাল, ইজ্জত, আব্রুর নেই কোন নিরাপত্তা। কিন্তু কেন? আমার দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় স্বাধীনতা আমার সাংবিধানিক অধিকার, কোন দল বা গোষ্ঠীর করুণা কিংবা দয়া নয়!।

একটি জাতির আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য সাতচল্লিশ বছর কম সময় নয়। কিন্তু আমরা যে গণতন্ত্র, মানবিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ইনসাফের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছি তা সবই আজ আওয়ামী নখরে ক্ষতবিক্ষত। আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? এখনো আমাদের গণতন্ত্রের জন্য ভিন দেশের দিকে কেন করুণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হয়। এজন্য জে.আর. লাওয়েল বলেছেন- যে দেশে গণতন্ত্র নেই সে দেশে নিরাপত্তা নেই।

এখনো আমাদের কানে বাজে ইজ্জত রক্ষায় জালপরা বাসন্তীদের হাহাকার!! দু’মুঠো খাবারের জন্য মা তার সন্তান বিক্রির খবর আসে এখনো পত্রিকার পাতায়, এটি জাতির জন্য লজ্জাকর। আকাশে-বাতাসে আজ লাশ আর বারুদের গন্ধ। রাস্তা-ঘাট, বনে-জঙ্গলে, ডোবা-নালায়, নদীতে প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মাখলুকাতের মৃতদেহ। এস. বলডউইন এর কথা হলো- গণতন্ত্র যেখানে নেই,স্বস্তি সেখানে থাকার কথা নয়।

রাতের অন্ধকারে বন্দুকের একটি আওয়াজ মানেই অজানা এক আতংক। না জানি ক্রসফায়ারের নামে ঝড়ে পড়লো কোন তাজা প্রাণ? আজীবনের জন্য নিভে গেল কোন উজ্জল প্রদীপ! এটি কোন সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। এ যেন কোন মায়ের নাড়ী ছেঁড়া সন্তানের বুকে গুলি ঝাঁজরা করা মৃত লাশের খবর!। কোন স্ত্রীর বিধবা হওয়ার এক মহা-দুঃসংবাদ। এতিম সন্তানেরা পৃথিবীতে বাবা বলে আর কাউকে ডাকতে না পারার পরিসমাপ্তি। এর কোন জবাব আছে কি আমাদের রাষ্ট্রের কাছে? আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? ক্রসফায়ারের খবর শুনলেই যেন বুক কেঁপে উঠে। প্রিয়জনের সন্ধানে হাসপাতালের মর্গে কিংবা অজ্ঞাতনামা লাশের মিছিলে খোঁজাখুঁজি। বুলেট আর পেট্রোল বোমার আঘাতে এ জনপদে লাশের মিছিল এখন অনেক দীর্ঘ। বলতেয়ার বলেছেন- “অস্ত্রের জোরে তুমি সারা পৃথিবী জয় করতে পার, কিন্তু পারবে না একটি গ্রামের মানুষেরও মন বশীভূত করতে।

বাংলাদেশে এখন বেওয়ারিশ লাশের স্তূপ দিন দিন বাড়ছে। এটি মানবতার জন্য বড়ই অবমাননাকর। কিন্তু অনেকের ভাগ্যে লাশটিও জুটছে না। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শিবির নেতা অলি উল্যাহ আর মোকাদ্দাস, চৌধুরী আলম, আর ইলিয়াস আলী আজও ফিরেনি। ফিরেনি রাষ্ট্রের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান-আল আযমী ও ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান)সহ আরো অনেকেই। এরকম হাজারো গুম-খুন, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, পঙ্গু, হাতহারা- চোখহারাদের সারি এখন অনেক লম্বা। কিছুতেই যেন তা আর থামছে না তাদের পিতা-মাতা স্ত্রী ও সন্তানদের আহাজারির ক্রন্দন রোল। দেশীয়-আন্তর্জাতিক কোন সমালোচনাই যেন আওয়ামী শাসক গোষ্ঠী তোয়াক্কাই করছে না। তাহলে এর অবসান আসলে কবে হবে? কবে বন্ধ হবে এই কান্নার আওয়াজ? কবে বন্ধ হবে হুংকার আর নিষ্ঠুরতা। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- ”নাগনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস, শান্তির লতিত বাণী শোনাইবে ব্যার্থ পরিহাস..।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, মানুষের জীবনহানি, সম্ভ্রমহানি ও আইনের শাসনের বোধের উপলব্ধির অভাব দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাছাকাছি পৌঁছিয়ে দিয়েছে। জনগণ এখন অগ্নিকুন্ডের কিনারে দন্ডায়মান। এক ব্যক্তির খেয়াল-খুশিই যেন ১৬ কোটি মানুষের জীবন নিয়ে এক চরম তামাশায় লিপ্ত। আজ রসিকতা চলছে মানুষের জীবন, সম্ভ্রম, নিরাপত্তা আর বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আশরাফুল মখলুকাত হিসেবে। তার অধিকার, মর্যাদা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। এটি কারো করুণা নয়। আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে সে প্রয়োজনবোধে জীবন দেবে, কিন্তু অন্যায়-অবিচার, জুলুম আর অবিচারের কাছে মাথা নত করবে না। যে বান্দা কপাল দিয়ে এক আল্লাহকে সিজদা করে, সেই সৈনিক এক আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করে না। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়-

“যে মাথা নোয়ায়ে সিজদা করেছ এক প্রভূ আল্লারে/

নত করিও না সে মাথা কখনো কোনো ভয় কোনো মারে !/

আল্লাহর নামে নিবেদিত শির নোয়ার না।

-কাজী নজরুল ইসলাম

পাহাড়সম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, সহিংসতা, আগ্রাসন, নাশকতা ও রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যা নাটক জনসমর্থনহীন এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার শূন্যের কোঠায় সঙ্কুচিত করেছে। বিরোধীদলীয় জোটের আহ্বানে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনে এদেশের ৯৫ ভাগ মানুষের সাড়া আর উপজেলা নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন সরকারকে ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুকতর জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। একের পর এক সরকারের অপকৌশল বুমেরাং হচ্ছে। নিজের অপরাধের বোঝাই এখন আওয়ামী লীগের জন্য অসহনীয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন, দমন-নিপীড়ন, গণহত্যা, দুর্নীতি, তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর সর্বশেষ একদলীয় নির্বাচনের আয়োজনের কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব মিডিয়ার খোরাক।

জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেরটেলসমান স্টিফটুং এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে বাংলাদেশ বিশ্বের নতুন একনায়কতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশসহ ওই পাঁচটি দেশ গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদন্ড পূরণ করছে না।” (প্রথম আলো)

বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ভিত্তি ও একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক এটা ভারত কখনো চায়নি। যার কারণে ভারত পৃথিবীর এত বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়েও বিগত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের মূল মদদদাতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে । গণতন্ত্র হরণ করে স্বার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে তো?

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহরু কখনো ছোট ও ক্ষুদ্র দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন না। তিনি মনে করতেন, ক্ষুদ্র দেশগুলোর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে এবং একদিন এসব ক্ষুদ্র দেশ ভারতে যোগদান করবে। ‘দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’র ৫৫০ নম্বর পৃষ্ঠায় নেহরু লিখেছেন:- Small nation state is doomed. It may survive as a cultural and autonomous area but not as an independent political unit. অর্থাৎ ক্ষুদ্র জাতি-রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। এটি সাংস্কৃতিক ও স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হিসেবে টিকে থাকতে পারে তবে স্বাধীন রাজনৈতিক ইউনিট হিসেবে নয়। তাহলে ভারত কি সেই থিওরি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে? তবে একথা সত্য অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় এদেশের মানুষের মধ্যে এন্টি ইন্ডিয়ান সেন্টিমেন্ট বিরাজমান। সুতরাং ভারত-চীনের উচিত হবে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা, জনগণের মতকে শ্রদ্ধা করা।

সোনার বাংলা বৃটিশদের দু’শো বছরের গোলামী শাসন, পাকিস্তানীদের শোষণ থেকে অনেকেই মুক্তি পেলেও তাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত হয়নি এখনো। সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে অনেকেই প্রভূ সেজে হাঙ্গরের মত তার আসল চরিত্র নিয়ে হানা দিচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্রের ওপর। এর অন্যতম কারণ আওয়ামী লীগের অতিমাত্রায় ভারত-প্রীতি, আওয়ামী লীগারদের-ই সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ভালো লাগে না। এক মন্ত্রী তো সেদিন বলেই ফেললেন “ভারত ও বাংলাদেশ চেতনায় এক ও অভিন্ন”।

ইটালীয় বংশোদ্ভুত সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাচির ”ইন্টারভিউ উইথ হিষ্টরী” গ্রন্থে। যিনি ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করেছিলেন- আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ আপনার কাক্সিক্ষত মিত্র হবে। ইন্দিরা গান্ধী উত্তর দিলেন- ”বাংলাদেশ ও আমাদের বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। অবশ্য একতরফা বন্ধুত্ব হবে না। প্রত্যেকেরই কিছু দেবার ও নেবার থাকে আমরা আমাদের পাওয়ার ব্যাপারে সব সময়ই সচেষ্ট ।”

বাংলাদেশ আজ উন্ননয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেছে। এটি আওয়ামী লীগের অর্জন নয়, এ কৃতিত্ব এ দেশের জনগণের। আওয়ামী লীগ এভাবে লুটপাট না করলে দেশ আরো ৫-৭ বছর পূর্বে এ খেতাব অর্জন করতো। এ অর্জন আমাদের তরুন প্রজন্মের। সম্প্রতি এনটিভিতে বাংলাদেশে মানব সম্পদ তথা তরুন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনার ওপর এই তথ্যবহুল রিপোর্ট দেখানো হয়েছে, পৃথিবীর মধ্যে বড় অংশ কর্মক্ষম তরুন এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তা প্রায় ১১ কোটির মতো। এই সম্ভাবনাকে আগামী ৩০/৩৫ বছরের মধ্যে কারিগড়ি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশ ১-২শ’ বছর এগিয়ে যাবে।

কিন্তু এই মানব সম্পদকে কাজে লাগাতে না পারলে বাংলাদেশের জনবিস্ফোরণ একটি বোঝায় পরিণত হবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিকল্পনা আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিতরা এই তরুন প্রজন্মকে নিয়ে কি আদৌ ভাবেন?

বর্তমানে বিরোধ, বিভেদ, অপরাজনীতি আর শাসক গোষ্ঠীর জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই বন্দুকের নলের জোরে ক্ষমতায় থাকার অপপ্রয়াস দেখে কি দেশের জনগণ তাই মনে করে না? একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস করে একটি মেরুদন্ডহীন অজ্ঞ প্রজন্ম তৈরি কারো স্বার্থে হচ্ছে নাতো?

আমাদের সোনার বাংলার প্রতি বিদেশী শকুনদের এখন লোলুপতা। অপরূপ ও অবারিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশসহ বহির্বিশ্বের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে। এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আর গণতান্ত্রিক পরিবেশ অনেকেই চায় না। স্বনির্ভর অর্থনীতি আর আত্মনির্ভর বাংলাদেশ অনেকের কাছেই এখন চক্ষুশূল। এ দেশের গণতন্ত্রকে ভারত রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন সেই পরিকল্পনারই অংশ।

দেশের অর্থনীতি এখন পঙ্গু হতে চলেছে। তার মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রই বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশী সুবিধা নিচ্ছে। পোশাক শিল্পের একচেটিয়া সুবিধা এখন ভারত নিচ্ছে। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তো বলেই ফেলেছেন বাংলাদেশের জন্য সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কোন ব্যাপারই না। তার এই দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় ও লালনকর্তার পরিচয় বহন করে।

‘বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্তরবর্তীকালীন পর্যালোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি আরো বলেছে, বিনিয়োগ তো হয়নি, উল্টো বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে দেশ থেকে। টাকার অঙ্কে যা বৈদেশিক সাহায্যের চেয়েও বেশি। আমেরিকান গবেষণা সংস্থার পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১২ সালে দেশ থেকে ১৪০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এ সংখ্যা এখন আরো অনেক গুণ বেশী। ভারতীয় পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে বাংলাদেশ থেকে রেমিট্যান্স আকারেই ২০১৩ সালে ভারতে চলে গেছে ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার। সিপিডি বলেছে, ভারত পঞ্চম প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে বাংলাদেশ থেকে।

অথচ বাংলাদেশে বিপুল শিক্ষিত বেকার রয়েছে। আমাদের দেশে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। অথচ দেশে এখন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা নারী ও পুরুষ উভয় মিলে প্রায় ২৬ লাখ। সুতরাং আজ আমাদেরকে ভাবতে হবে নিজেদের প্রয়োজনেই।

দেশ, জাতি, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কোনো আওয়াজ তুলতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতের শীর্ষনেতাদের ফাঁসি দিয়েছে। রাজনৈতিক কারণেই এখন বাংলাদেশের ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতার ঘোষকের পত্নী ৭২ বছর বয়স্কা খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। এতে ব্যবহার করছে আদালতকে। এজন্য বেকন বলেছেন- ”আইনের মাধ্যমে অত্যাচার করার চেয়ে বড় অত্যাচার আর নেই।” হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাকলোয়েন চার্লস মানুষের দুর্দশার চিত্র আঁকতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘ইতিহাসের কোন যুগেই কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এত কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়নি, প্রশাসনের সামনে বিচার বিভাগ কখনো এতটা অসহায়ত্ত বোধ করেনি”।

দেশপ্রেমিক শক্তিকে নির্মূল করে আওয়ামী সরকার একদলীয় বাকশাল কায়েম করে বাংলাদেশকে একটি করদ রাজ্যে পরিণত করেছে। বিরোধীমত শূন্য করে আরেকটি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করে তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ইসলাম ও গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের এ লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। আজ আওয়ামী দুঃশাসনের এই মানবরুপী অক্টোপাসের জুলুম নির্যাতনের নিষ্পেষণে ক্ষতবিক্ষত আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগার! দেশের ১৭ কোটি মানুষ সকলেই যেন সেই কারাগারে আবদ্ধ! আমরা যেন আজ স্বাধীন দেশের বন্দী নাগরিক! তাই স্বাধীনতার ৪৭ বছরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সন্তানহারা মায়ের ক্রন্দন,স্বামীহারা বিধবা স্ত্রীর করুণ চাহনী, এতিম শিশুর অবোলা কান্না, মজলুমের গগণবিদারী আর্তনাদে বাংলার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত! তাইতো জনপ্রিয় শিল্পী হায়দারের গানের কন্ঠে সুর মিলিয়ে বলছি-”আমি স্বাধীনতাটাকে খুজছি!!

  • লেখক: সহকারী সম্পাদক, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা
  • mrkarim_80@yahoo.com

 

http://www.dailysangram.com/post/324192