২৪ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ১২:৩১

নদীজুড়ে বালুচর

ভারতের বৈরী আচরণে তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীর বেহাল দশা

ভারতের বৈরী আচরনে-তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদী এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। নদীজুরে পানির বদলে এখন বালুর চর। ভারতের নদ-নদী বিষয়ক আলোচিত বিষয় হচ্ছে এখন তিস্তার পরে মহানন্দা। এখন ব্যাপক আলোচনায় এসেছে মহানন্দা নদীর নাম। ভারতের হিমালয় হতে বয়ে আসা নদী বাংলাদেশের সর্বোত্তরে বাংলাবান্ধা জিরো লাইন ঘেষে বয়ে আসা মহানন্দা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

তেঁতুলিয়া সদর হতে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত নদীপথে দুরত্ব হচ্ছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এ নদী খনন করে উত্তোলন করা হচ্ছে পাথর। এর আগে পানিতে ডুবে উত্তোলন করা হতো পাথর। আর বর্তমানে পানি না থাকায় বালু কেটে মাটি খনন করে উত্তোলন করা হচ্ছে পাথর।
মহানন্দা, ডাহুক, গোবরা,ভেরসা চাওযাই,করতো তিরনই, রনচন্ডি নদী এসেছে সরাসরি ভারত থেকে। সবগুলো নদীর মুখে বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছে নদীর পানির স্রোত ধারাকে। পঞ্চগড়ের সবচেয়ে বড় নদী হল মহানন্দা আর করতোয়া। নদী গুলো এখন আর সেই নদী নেই। পরিনত হয়েছে মরা খালে।
এ নদীর উৎস মুখে ভারতের পানি জল্লাদরা শতশত ব্যারেজ ড্যাম আর ক্যানেলের মাধ্যমে পানি সরিয়ে নিয়ে এর দফারফা করে ফেলেছে। এসব বাঁধ ব্যরেজ পেরিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে যে টুকু পানি এসেছে তার উপরও খড়গ বসাতে একটুও দ্বিধা করেনী। মানেনি কোন আন্তর্জাতিক আইন কানুন নীতি মানবাধিকারের বিষয়গুলো।প্রায় সীমান্তে ঘেষা মহানন্দার উপর ফুলবাড়ি এলাকায় ব্যরেজ দিয়ে পানি আটকে কয়েকটি শাখা নদী হত্যা করেছে। বাংলাদেশকে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলকে শুকিয়ে মারার চক্রনীতি নিয়ে এগিয়ে চলেছে।যার কু-প্রভাবে তেঁতুলিয়ার কয়েকটি নদী তার অস্তিত্বকে হারিয়েছে।

নদী তীরবর্তী প্রবীণরা বলেছেন এইতো ষাট সত্তর বছর আগের কথা যেখানে ছিল বিস্তৃত পানির ধারা। যার বিশাল স্রোতধারা আমাদের করতো সঞ্জিবিত সিক্ত। যা ছিল জীবন দায়িনী। কৃষি যোগাযোগ ,মৎস আর জীব বৈচিত্রতা ও আর্থিক উৎসের আধার। সব যেন কোথায় হারিয়ে গেল। কি ছিল আর কি হল। কি ভয়ংকর বৈপরিত্য। এক সময়ের চাঞ্চল্য চির যৌবনা আর দুরন্ত হয়ে ছুটে চলা পদ্মা তিস্তা এখন মরা নদীর নাম। অথচ একদিন যেখানে ছিল ছড়িয়ে পড়া আদিগন্ত বিস্তৃত পানির ধারা। এখন যেখানে একই রুপের মরীচিকা সাদৃশ্য বালিচরের বিস্তার। চলতি শুষ্ক মৌসুমে মহানন্দার পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় নদীটি ইতোমধ্যে মরা নদীতে পরিনত হয়েছে। ভরা বর্ষায় মাস তিনেক পানি থাকার পর ফের দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে।

ভারতের অগ্রাসী পানি নীতি আর এ অঞ্চলের মানূষের কাছে মরন বাঁধ হিসাবে খ্যাত। এক সময়ের অন্যতম নদী হিসাবে পরিচিত মহানন্দা নদী এখন বিশাল বালি চড়ের নিচে চাপা পড়ে হাহাকার করছে। দেখলে মনে হয় নদী নয় নদীর জীবাশ্ম ফসিল।
মহানন্দা নদীর উপর ভারতের ফুলবাড়িতে বিশাল ব্যরেজ নির্মাণ করে ভারত সরকার। এ ব্যরেজ দিয়ে বিশাল আকারে বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্রোত ধারাকে একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। এ নদীর পানি বিকল্প নদী খনন করে নিজ দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত করে আবার ভারতের অভ্যন্তর গিয়ে পানিকে নিস্কাশন করে । এতে করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে মূল নদী তা এখন বালুচরে পরিনত হয়ে গেছে।
সারা বছর এ নদীতে একুল-ওকুল ভরা ছিল পানিতে। মহানন্দা নদীর মাছ ছিল খুবই প্রিয়। প্রতিদিন এলাকার মানুষ দুপুর বেলা গোছল করতে নামতো নদীতে। গোসল করতে গিয়ে শোল, বোয়াল, রুই কাতলা আরো দেশী মাছ ধরা পড়তো জালে। কিন্তু আজ সেই মাছ কোথায় জানি হরিয়ে গেছে।
ভারত তার পানি আগ্রাসী নিতিতে গঙ্গায় ফারাক্কা ব্যরেজ দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের পরিবেশের মহা বিপর্যয় ডেকে এনে ক্ষ্যান্ত হয়নি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও মহানন্দা নদীর উপর ব্যরেজ নির্মাণ করে পঞ্চগড় জেলাকে মরুভুমিতে পরিনত করে দিয়েছে। সীমান্তের এলাকার লোকজনদের কখনো মাছ কিনে খেতে হতো না সে সময়। মহানন্দা নদীর মাছ এলাকার মাছের চাহিদা পুরণ করে বিক্রিও করতো এলাকার বাইরে জেলা শহরেও।

এ ব্যাপারে পরিবেশবিদরা বলেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ভারতের একগুয়েমী সিদ্ধান্ত। নদীর উপর ব্যরেজ নির্মাণ করে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিনত করা। ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে অভিন্ন নদীর পানি সরানোর অধিকার রাখেনা। পানি বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার। আইনী লড়াই করে যেমন সমুদ্র অধিকার আদায় করেছি। তেমনি নদীর উৎস্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে আলাপ করে নদীর পানির সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে অভিন্ন নদীগুলোর প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। আর এমন দাবি এখন সর্বত্রই।

https://www.dailyinqilab.com/article/122959