২৪ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ১২:২৯

ভোগান্তির নাম প্রিপেইড মিটার

*বিদ্যুৎতের দামের বাইরে ২০ ভাগ অর্থ কেটে নিচ্ছে *সারা দেশে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎবিভ্রাট বেড়েছে

বিদ্যুৎতের বিল পরিশোধে ভোগান্তি, বিদ্যুৎ চুরি এবং বকেয়া বিলসহ নানা অনিয়ম-হয়রানি দূর করার জন্য প্রিপেইড মিটারকে ভালো সমাধান মনে করেন এই খাতের গ্রাহক ও সরবরাহকারীরা। আগাম অর্থ পরিশোধ করে বিদ্যুৎ কেনা হলেও সনাতনী পদ্ধতির পোস্টপেইডের মতই নিরাপত্তা জামানত হিসেবে টাকা জমা রাখতে হচ্ছে। প্রিপেইড মিটারে বিল আদায়ের নামে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ডাকাতি শুরু করেছে। বিদ্যুৎতের দামের বাইরে ভ্যাট ছাড়াই রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিটি ২০ ভাগ বেশি অর্থ কেটে নিচ্ছে। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎবিভ্রাট বেড়েছে। ঢাকায় ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াটসহ সারা দেশে লোডশেডিং হচ্ছে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। আর বিদুৎবিভ্রাট থাকায় যখন-তখন পাঁচ-দশ মিনিটের জন্য বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এর নির্ধারিত সীমার বাইরে অর্থ আদায় অন্যায় হলেও বিতরণ কোম্পানিটি গ্রাহকের সঙ্গে নতুন এই প্রতারণার শুরু করেছে। দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৭০ লাখের কাছাকাছি। এর বাইরে প্রতিমাসেই প্রায় সাড়ে তিন লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যমান ও নতুন মিলিয়ে সকল গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বিদ্যুৎত চুরি ও বিল খেলাপ রোধে সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হিসেবে বাস্তায়ন করতে চায় সরকার।

জানা গেছে, গত কয়েকদি ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎবিভ্রাট বেড়েছে। ঢাকায় ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াটসহ সারা দেশে লোডশেডিং হচ্ছে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। আর বিদুৎবিভ্রাট থাকায় যখন-তখন পাঁচ-দশ মিনিটের জন্য বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে। ঢাকাসহ প্রধান প্রধান শহরে লোডশেডিং অপেক্ষাকৃত কম। তারপরও দিন-রাত মিলিয়ে তিন-চারবার লোডশেডিং হচ্ছে অনেক এলাকায়। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের নতুন নতুন লাইন হচ্ছে। প্রতি মাসে কয়েক লাখ নতুন গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন খুব কম। সেখানে কখনো একটানা কয়েক ঘণ্টা, আবার কখনো ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার বাসিন্দার আব্দুর রফিক মাস্টার ইনকিলাবকে বলেন, গত ৯ বছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা প্রায় তিন গুণ হয়েছে, এর দামও চারগুন বেড়েছে তার প্রতিফলন গ্রামে নেই। গ্রামে সকালে বিদ্যু যায় আসে বিকালে। অথচ বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার এক বাসিন্দার জাহিদ হাসান তার মিটার পহেলা নবেম্বর গ্রাহক এই মিটারে ১০০০ টাকা রিচার্জ করেন। এখানে প্রিপেইড মিটারের বিল পরিশোধের কাগজে দেখা যায় এনার্জি কস্ট (মূল বিদ্যুতের দাম) দেখানো হচ্ছে ৬৫২ দশমিক ৩৮ টাকা। এখানে সার্ভিস চার্জ কাটা হয়েছে ২০ টাকা ডিমান্ড চার্জ নেয়া হয়েছে ৬০ টাকা মিটার ভাড়া নেয়া হয়েছে ১২০ টাকা। আর ভ্যাট ৫ ভাগ হারে নেয়া হয়েছে ৪৭ দশমিক ৬২ টাকা। এখানে বিদ্যুত ব্যবহারের আগেই গ্রাহকের কাছ থেকে ২৪৮ টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহক যে পরিমাণ বিদ্যুত ব্যবহার করবে সেই টাকারই সে ভ্যাট প্রদান করবে। কিন্তু এখানে অতিরিক্ত ভ্যাট আদায়ের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। গ্রাহকের কাছ থেকে ডিমান্ড, চার্জ সার্ভিস চার্জ এবং অন্যখরচ আদায় করা হচ্ছে তার ওপরও ভ্যাট কেটে রাখা হচ্ছে। প্রথম মিটারের ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা রিচার্জে ৫ ভাগ হারে নেয়া হয়েছে ৪৭ দশমিক ৬২ টাকা। একই অঙ্কের অর্থ কাটা হয়েছে দ্বিতীয় মিটারের ক্ষেত্রে। পুরো এক হাজার টাকায় ৫ ভাগ হারে ভ্যাট কেটে নেয়া হলে তার পরিমাণ দাঁড়াত ৫০ টাকা। আবার শুধু মূল বিদ্যুৎত ব্যবহারের ওপর কাটা হলে দাঁড়ায় প্রায় ৪০ টাকা। কিন্তু ডিপিডিসি কোন ভিত্তিতে এই ভ্যাট কাটছে তাও স্পষ্ট নয়। আবার এখানে সার্ভিস চার্জের দ্বিগুণ আদায় করা হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের এক ফেজ মিটারের বিদ্যুৎত ব্যবহারকারীর সার্ভিস চার্জ ১০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু নেয়া হয়েছে ২০ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হয়তো কোন গ্রাহকের কাছ থেকে ১০০ বা ১৫০ টাকা অতিরিক্ত কেটে নেয়াকে খুব বেশি মনে হয় না। কিন্তু পুরো গ্রাহকের কাছ থেকে এভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে এর অঙ্ক শত শত কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ঢাকার ধানমন্ডী, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, আজিমপুর, কাওরান বাজার, রাজাবাজার, ফার্মগেট, লালবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় এক লাখ ১২ হাজার গ্রাহক ডিপিডিসির প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন। সরকারের পরিকল্পনা বলছে পর্যায়ক্রমে সব গ্রাহকে প্রিপেইড মিটার দেয়া হচ্ছে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যমান ও নতুন মিলিয়ে ২ কোটি ২০ লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। বিদ্যুৎত চুরি ও বিল খেলাপ রোধে সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হিসেবে এটি বাস্তায়ন হচ্ছে। নতুন কাজ করতে কিছু সমস্যা হবে। এ সমস্যা আস্তে আস্তে ঠিক হবে। তিনি বলেন, ঢাকার আজিমপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ১২ হাজার গ্রাহকের জন্য ২৫টি ভেন্ডিং স্টেশন রয়েছে ডিপিডিসির। ডেসকোর আওতাধীন উত্তরা, উত্তরখান, বারিধারা, পল্লবী, কাফরুল ও আগারগাঁওয়ে রয়েছে ৮৫ হাজার প্রিপেইড মিটার গ্রাহক। ওজোপাডিকোর এলাকায় ৬১ হাজার ৪১৭ এবং নওজোপাডিকোর (নেসকো) এলাকায় ২০ হাজার প্রি-পেইড মিটারের বিপরীতে ভেন্ডিং স্টেশন রয়েছে যথাক্রমে আটটি ও চারটি।

https://www.dailyinqilab.com/article/122966