২৩ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৭

আট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল

‘প্রশ্নপত্র সংকট ও সমন্বয়হীনতা দায়ী’

ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে আট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের ঘটনা তদন্তে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসন বিন্যাসে অসামঞ্জস্য ও সমন্বয়হীনতার প্রমাণ মিলেছে। ‘ব্যাংকার্স সিলেকশন’ কমিটির সঙ্গে ‘পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা’ বিভাগের চরম সমন্বয়হীনতা, প্রশ্নপত্র সংকট এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছতে দেরি হওয়ায় এ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্ত করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে (এফআইডি) চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কী ব্যবস্থা নেয়া হল সে সম্পর্কে পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতেও চিঠিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, প্রতিবেদনে নিয়োগ পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন খানসহ অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি ভেঙে পুনর্গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাতিল হওয়া পরীক্ষা দ্রুত নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, একসঙ্গে প্রায় তিন লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি সুন্দরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকে অফিসার পদে নিয়োগের জন্য ১২ জানুয়ারি রাজধানীর ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। কিন্তু আসন স্বল্পতার কারণে মিরপুরের একটি কেন্দ্রে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি প্রার্থী পরীক্ষা দিতে পারেননি। অন্য কেন্দ্রগুলোতেও নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া যায়। ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির জরুরি বৈঠকে এ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কমিটি গঠন করে। পাশাপাশি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত শুরু করে। এ বিষয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা শনাক্ত করে গোয়েন্দা সংস্থাটি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে তা জানতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিবকে চিঠি দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার, অফিসার ও ক্যাশ অফিসারের এক হাজার ৬৬৫টি শূন্য পদে নিয়োগ পেতে আবেদন করেন তিন লাখ ২৬ হাজার প্রার্থী। এরমধ্যে দুই লাখ ১৩ হাজার ৫২৫ জন প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞাপন অনুযায়ী আবেদনের পর প্রার্থীকে প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র উত্তোলনের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে অনেকে প্রবেশপত্র তুলতে ব্যর্থ হন। যে কারণে আবেদন করার পরও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি অনেকে।
আসন বিন্যাস প্রসঙ্গে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পরীক্ষার্থীদের জন্য কেন্দ্রে যথাযথ আসন বিন্যাস ছিল না। কক্ষের ভেতর কোনো আসন পরিকল্পনা ছিল না। যে যেখানে পেরেছেন বসেছেন। অনেকে বসার স্থানও পাননি। এছাড়া কোনো কোনো কেন্দ্রে একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবন বেশ দূরত্বে ছিল। কিন্তু নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে শুধু কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে। ভবনের নাম না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েন পরীক্ষার্থীরা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র বণ্টনে অসামঞ্জস্যতা লক্ষণীয় ছিল। বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর পরও অনেক পরীক্ষার্থীর হাতে প্রশ্নপত্র পৌঁছেনি। কিছু কিছু কেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের সংখ্যাও কম ছিল। এছাড়া কেন্দ্রের প্রবেশ পথে তল্লাশির ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস-মোবাইল ফোন সেট, ক্যালকুলেটর নিয়ে হলে প্রবেশ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের পাশাপাশি ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির দায়িত্বহীনতার কারণে এ ধরনের অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীরা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। তাদের আসা-যাওয়া ও থাকায় অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। এ ঘটনায় শুধু রাষ্ট্রের আর্থিক অপচয় বা চাকরি প্রার্থীদের হয়রানি নয় এর সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে লোকবলের ঘাটতি আছে। অন্যদিকে শিক্ষিত বেকারদের রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব। নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংকগুলো জনবল পাচ্ছে না। এতে ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কাজকর্ম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/30663