২৩ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১২

গণপরিবহনে যাত্রীসেবার মান চরমে : জিম্মি যাত্রীরা

সিট নেই, সিটের ওপরের আবরণ নেই, আবার সিট আছে তো হাতল নেই। জানালার গ্লাস ভাঙা, হেড লাইট-ব্যাক লাইট নেই, উঠতে-নামতে জামাকাপড় ছিঁড়ছে ভাঙা দরজায় লেগে। বাসের গায়ে ঘষাঘষিতে রঙের কোনো অস্তিত্ব নেই। বডির সামনে পেছনে বাম্পার খসে পড়েছে বহু আগে। দেখলে মনে হবে শত বছরের পুরনো এন্টিক পিস। এই হচ্ছে রাজধানীর গণপরিবহনের অবস্থা। প্রতিদিন জানমালের ঝুঁকি নিয়ে ওই বাসেই চড়তে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সবুর বলেছেন, প্রতিদিন গুলশানে কাজের জন্য যেতে হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠলেই কর্মস্থলে যাওয়ার কথা মনে উঠতে গা কাঁটা দিয়ে ওঠে। সবুর জানান, তার অন্তত পাঁচ দিন বাসের দরজায় লেগে জামা ও প্যান্ট ছিঁড়েছে। তিনি বলেন, নতুন বাজার নেমে গুলশান-২ নম্বরে যেতে হয় নির্ধারিত বাসে। ঢাকার চাকা নামের ওই বাসের মান অনেকটাই ভালো। ভুক্তভোগিরা বলেছেন, রাজধানীতে ভালোমানের গণপরিবহন সঙ্কট দীর্ঘ দিনের। কোনো কোনো সময় নি¤œমানের ওই গাড়িগুলোতেও চড়া যায় না। বিশেষ করে সকালে এবং অফিস-আদালত ছুটির পরে এই সঙ্কট চরম আকার ধারণ করে। পরিবহন সঙ্কটের কারণে এই সময় হাজার হাজার যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। ভুক্তভোগিরা জানান, অনেক আকাক্সক্ষার এই পরিবহনগুলো এখন আর চলাচলের উপযুক্ত নেই। তারপরও মানুষকে বাধ্য হয়ে চড়তে হয় ওইসব পরিবহনে। হেমায়েত নামের এক যাত্রী বলেন, সেই ’৯০-এর দশকের ‘৮ নম্বর’ গাড়িগুলোতে বাদুরঝোলা হয়ে সকালে তাকে ফার্মগেট এলাকায় যেতে হয়। বেশির ভাগ বাসের সিটগুলো বসার উপযুক্ত না। এরমধ্যে কোনো কোনো বাসের বেশির ভাগ সিট ভাঙা। বাসে উঠতে-নামতে অনেক সময় জামা-প্যান্ট ছিঁড়ে যায়। অনেক সময় শরীরেও আঘাত লাগে। সিটি, মৈত্রী, এটিসিএলসহ অনেক কোম্পানির বাসে এখন আর যাত্রী চলার মতো পরিবেশ নেই; কিন্তু তারপরও পরিবহন সঙ্কটের কারণে ওইসব পরিবহনেই যাত্রীরা চলছে। যাত্রীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বেশির ভাগ বাসের জানালার গ্লাস ভাঙা। বৃষ্টির দিনে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে, শীতে ভাঙা গ্লাস দিয়ে ঠাণ্ডা লাগে। এমনকি বাসের বাইরের রঙও ওঠে গেছে অনেক আগে। কোনো কোনো বাসের নম্বর প্লেটও ঝলসে গেছে। কোনো গাড়ির নম্বর কত তা বোঝা যায় না। কোনো কোনো গাড়ির হেডলাইট-ব্যাকলাইট না থাকায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে ওগুলো চলছে। বাসের গায়ে অসংখ্য ক্ষত চিহ্ন। দেখেই বোঝা যায় দুর্ঘটনার দাগ ওগুলো। একাধিক চালক ও হেলপার বলেছেন, এখানে সেখানে আছড়ে পড়ার দাগ ওগুলো। হয়তো অন্য কোনো গাড়ি মেরে দিয়েছে অথবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্য কোনো গাড়ির ওপর আছড়ে পড়েছে। মৈত্রী পরিবহনের এক চালক জানান, তাদের কিছু করার নেই। মালিকেরা যে গাড়ি দিচ্ছে সেই গাড়িই রুটি-রুজির জন্য চালাতে হয়। যাত্রীদের কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকল কিনা তা দেখার মতো সুযোগ তাদের নেই।
একই অবস্থা লেগুনা ও হিউম্যানহলারগুলোর। গতকাল সকালে রাজধানীর দৈনিক বাংলা থেকে মুগদা বাসাবোর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ১৫টি লেগুনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একটিও লুকিং গ্লাস নেই। পেছনের লাইট নেই। কখন গাড়িটি রাস্তার ওপর থামলো, কখন চলা শুরু করল তা বোঝার কোনো উপায় নেই।

তবে পরিবহন মালিকেরা বলেছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহন মালিক বলেন, তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার দশা হয়েছে। গাড়ি রাস্তায় নামলেই বিভিন্ন স্থানে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। তারা যাত্রীদের দিকে তাকাবেন, না চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালাবেন? এই হচ্ছে মালিকদের অবস্থা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, জেলা প্রশাসক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্ব রয়েছে যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করা; কিন্তু এই সংস্থাগুলো সেক্ষেত্রে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/304046