২৩ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫৪

এবারো হজযাত্রায় সঙ্কটের আশঙ্কা

নিবন্ধনের সময় বাড়ল আরো ১০ দিন

দুই দফা সময় বাড়ানোর পরও হজযাত্রীদের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়নি। এ কারণে আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিন সময় বাড়িয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ সময়ের মধ্যে নিবন্ধন না করলে নির্দিষ্ট সিরিয়ালের মধ্যে থাকার আর সুযোগ পাবেন না হজযাত্রীরা। পরবর্তী সিরিয়াল থেকে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হবে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ দিকে বারবার সময় বাড়ানোর পরও নিবন্ধনে ধীরগতির জন্য ভুয়া হজযাত্রীদের আইডি ব্যবহার করে প্রাক-নিবন্ধন করাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নিবন্ধনে দেরি হওয়ায় হজ ব্যবস্থাপনায় নানা সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ১ মার্চ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের মূল নিবন্ধন শুরু হয়। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন শুরু হয় ৬ মার্চ থেকে। প্রথম দফা ১১ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ সময়ে খুব অল্পসংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধন করেন। এ জন্য ১৮ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ায় মন্ত্রণালয়। কিন্তু তাতেও নির্ধারিত কোটার হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন হয়নি। এ কারণে আরেক দফা সময় বাড়িয়ে ২২ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়া হয় নিবন্ধনের। কিন্তু গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাঁচ হাজার ৮৩৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৩০৫ জন নিবন্ধন করেছেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ বছর সাত হাজার ১৯৮ জন হজে যাবেন। এর মধ্যে হজগাইডসহ সরকারি বিভিন্ন টিমের সদস্য সরাসরি নিবন্ধন করবেন। ফলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আর নিবন্ধন করতে তেমন বেশি বাকি নেই। তবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ বছর মোট হজযাত্রী যাবেন এক লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে হজগাইড যাবেন তিন হাজার ৪০০ জন। হজগাইডরা সরাসরি নিবন্ধন করবেন। ফলে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১৬ হাজার ৬০০ জন পূরণ হতে এখনো ৩৮ হাজার ২৯৫ জন বাকি। এ জন্য আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত আরো ১০ দিন সময় বাড়িয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১ এপ্রিলের পর নির্দিষ্ট ক্রমিকের মধ্যে থাকা হজযাত্রীরা নিবন্ধন না করলে তারা আর এ বছর হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না। এ বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রাক-নিবন্ধনের তিন লাখ ৫২ হাজার ২৯২ ক্রমিক পর্যন্ত নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। ১ এপ্রিল পর্যন্ত কোটার সমান নিবন্ধন সম্পন্ন না হলে এর পরের ক্রমিক থেকে নিবন্ধন করা হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ) এস এম মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন। তবে কত ক্রমিক পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে তা এখনো নির্দিষ্ট হয়নি বলে তিনি জানান।
হজযাত্রী নিবন্ধনে বিলম্বের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে পাসপোর্ট না পাওয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তবে দুই দফা সময় বাড়ানোর পরও কোটার সমান নিবন্ধন সম্পন্ন না হওয়ায় ভুয়া হজযাত্রীদের আইডি ব্যবহার করে প্রাক-নিবন্ধন করাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিগত বছরগুলোতে এভাবে ভুয়া হজযাত্রীর নামে প্রাক-নিবন্ধন করে পরে রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ নিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা আয় করার অপচেষ্টা করেন গুটিকতক বেসরকারি এজেন্সি মালিক। এবারো সে রকম অপচেষ্টা হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এবার ভুয়া হজযাত্রীর নামে প্রাক-নিবন্ধন করলে তারা ধরা পড়ে যাবেন বলে মনে করেন বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, এবার মাত্র চার শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট করা যাবে। এর বেশি এ বছর আর কোনোভাবেই রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেবে না মন্ত্রণালয়। এ কারণে যদি কেউ এভাবে করে থাকেন তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এ দিকে জানা যায়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের ইতোমধ্যে সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া, মোয়াল্লেমের সাথে চুক্তিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা সৌদি আরব সফর করে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। কিন্তু বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এখনো নিবন্ধন সম্পন্ন না হওয়ায় তারা এখনো বাড়ি ভাড়া, মোয়াল্লেমের সাথে চুক্তি করেননি। নিবন্ধনে দেরি হলে বেসরকারি এজেন্সিগুলোর বাড়ি ভাড়া ও মোয়াল্লেম পেতে সমস্যা হবে। এতে হজ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করেন হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. আবদুল্লাহ আল নাসের। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, এখন অন্য দেশের পক্ষ থেকে বাড়ি ভাড়া, মোয়াল্লেমের সাথে চুক্তি হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে দেরিতে নিবন্ধন হলে পরে ভালো বাড়ি ও মোয়াল্লেম পেতে সমস্যা হবে। এতে দেখা যাবে গত বছরের মতো ফাইট বিপর্যয়সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/304041