১৩ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:০৬

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়ছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

দেশের ব্যাংকিং খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়ছে, যার বেশির ভাগই বড় ঋণখেলাপি। আর এ বড় ঋণখেলাপির কারণে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণ ও তা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশের ব্যাংকিং খাতে অবলোপনসহ মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশির ভাগই আদায় অযোগ্য বা কুঋণে পরিণত হয়েছে। এসব ঋণ আদায়ে মামলাও করা হয়েছে। কিন্তু অর্থঋণ আদালতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বেঞ্চ ও বিচারক না থাকায় মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আবার সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশের হাইকোর্ট ডিভিশনে অর্থ ঋণ আদালতের জন্য পৃথক কোনো বেঞ্চ নেই। সব মিলে খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না। খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবলোপনকৃত ঋণের ক্ষেত্রে কিছু কিছু খেলাপি গ্রাহক আংশিক ঋণ পরিশোধ করে অবশিষ্ট অংশ বিশেষ করে সুদ ও আসলের একটি অংশ মওকুফের আবেদন করছে। তবে আসল মওকুফের সুযোগ না থাকায় এ ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে বন্ধকীকৃত সম্পত্তি বিক্রয় বা ব্যাংকের অনুকূলে মিউটেশন করা যাচ্ছে না। সব মিলেই শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, একজন ঋণখেলাপি অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না। এমনকি জাতীয় কোনো নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ের সবচেয়ে বড় জটিলতা দেখা দিয়েছে আইনগত জটিলতা। শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে আইনি জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। খেলাপি গ্রাহকেরা ঋণ পরিশোধ না করার জন্য বিভিন্ন আইনি ফাঁকফোকর বের করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খেলাপি গ্রাহকেরা শ্রেণীকরণ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে শ্রেণীকরণের ওপর স্থগিতাদেশ নিচ্ছেন। এ সুবাদে তারা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আইনগত বাধা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো প্রকৃতপক্ষে একজন ঋণখেলাপিকেই গ্রাহক হিসেবে গ্রহণ করছে। ওই গ্রাহক আবার খেলাপি হয়ে আবার আদালতে মামলা দায়ে করছেন। এভাবে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তারা আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করছেন। এতে ব্যাংকগুলোর জন্য খুবই ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে দেখা দিচ্ছে। একই সাথে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অর্থঋণ আদালতসহ বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। খেলাপি গ্রাহকদের ঠিকানায় সশরীরে গিয়ে ঋণ আদায়ের প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আদেশ খারিজ করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে দুদকসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা নিতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/301294