১২ মার্চ ২০১৮, সোমবার, ১০:৩২

শিক্ষার ৪২০০ কোটি টাকার প্রকল্প থেকে ইউটার্ন

আটকে গেল শিক্ষার উন্নয়নে প্রস্তাবিত সাতটি প্রকল্প। পরিকল্পনা কমিশনের ব্যাপক আপত্তির মুখে ৭টি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে পিছু হটলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউটার্ন নেয়া এ সাতটি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে একটি প্রকল্পে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিলেও বাকি ৬টি প্রকল্পের ডিপিপি জমা দেয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

শতবর্ষী ১৬টি কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এক হাজার কোটি টাকা, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশনের জন্য ১৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প, মহীয়সী নারীদের স্মৃতি সংরক্ষণে ‘নারী শিক্ষার স্বপ্নভূমি স্থাপন’- প্রকল্পে জন্য ৫০০ কোটি টাকা, পুরনো ও বড় ২৫টি কলেজ ক্যাম্পাসে বিপন্ন ৫০০ জাতের উদ্ভিদ গাছ লাগানোর জন্য ‘সবুজ শিক্ষাঙ্গন বিনির্মাণে বিপন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণ’- প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা, দুর্গম এলাকার ২৯টি কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক মানের আবাসিক হোস্টেল প্রকল্পে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা এবং রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বিদ্যালয়বিহীন ১১টি উপজেলায় হোস্টেল সুবিধাসহ আধুনিকমানের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ৬৯৪ কোটি টাকার প্রকল্প আটকে গেছে। এই সাতটি প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪২০০ কোটি টাকা।
এরমধ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা গ্রিন ক্যাম্পাস প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন প্রকল্পের ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ব্যাপক আপত্তির মুখে পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল যুগে অ্যানালগ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে কমিশন। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের শিক্ষা উইং-এর উপ-প্রধান মোস্তফা কামাল মানবজমিনকে বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রাষ্ট্রের টাকা নষ্ট ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না বলেও আমরা মনে করি।

এ সাতটি প্রকল্পের মধ্যে সারা দেশে শতবর্ষী ১৬টি কলেজের সার্বিক চিত্র জানতে এসব কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে ঢাকায় দু’টি বৈঠক হয়েছে। সেখানে কলেজে অধ্যক্ষরা তাদের চাহিদা দেয়ার পর কলেজগুলোর সরেজমিন পরিদর্শন করে সক্ষমতা যাছাই করার জন্য মাউশি’র পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হুদা, পরিচালক (মাধ্যমিক) ড. আবদুল মান্নান ও মাউশি’র ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে তিনটি টিম গঠন করা হয়। এসব টিমের সদস্য প্রকল্পের আওতায় কলেজগুলো পরিদর্শন করেছেন। দুর্গম এলাকার ২৯টি কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক মানের আবাসিক হোস্টেল প্রকল্পে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়। এ প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করতে কর্মকর্তারা কয়েকদফা দুর্গম এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদন নিয়ে ডিপিপি তৈরি হয়েছে। একইভাবে ডিপিপি করা হয়েছে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বিদ্যালয়বিহীন ১১টি উপজেলায় হোস্টেল সুবিধাসহ আধুনিকমানের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের। মাউশি’র পরিকল্পনা উইং একাধিক কর্মকর্তা এই তিন পার্বত্য জেলায় সরজমিন পরিদর্শন করে ডিপিপি তৈরি করেছেন। আর মহীয়সী নারীদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ‘নারী শিক্ষার স্বপ্নভূমি স্থাপন’ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা রংপুরসহ যেখানে ৬ জন মহীয়সীর নারী নামে প্রতিষ্ঠান আছে তা সরজমিন পরিদর্শন করে প্রকল্প প্রস্তবনা তৈরি করেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরি করতে কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের নামে বড় অংকের টাকা খরচ হয়েছে। এই মুহূর্তে এসে প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার মানে এই টাকা জলে যাওয়া। যে কোনো প্রকল্প হাতে নেয়ার আগে প্রকল্পের বাস্তবতার দিকে নজর দিলে এমন হতো না। এছাড়া মাউশি’র পরিকল্পনা শাখার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এসব প্রকল্প আটকে যাওয়ার আরেকটি কারণ বলে জানা গেছে। এরমধ্যে শতবর্ষী কলেজ উন্নয়ন, মহীয়সী নারী এবং তিন পার্বত্য জেলায় আবাসিক স্কুল প্রকল্পগুলো সময়যোগী হলেও মাউশি’র পরিকল্পনা উইং গাফিলতির কারণে হচ্ছে না বলে জানা গেছে। আর পরিকল্পনা কমিশনের ‘না করে দেয়া’ ভয় কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=108706