১২ মার্চ ২০১৮, সোমবার, ১০:২৬

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নামে ভুয়া নিয়োগপত্র

বেপরোয়া প্রতারক চক্র। ভুয়া চাকরির পরীক্ষার পর এবার চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগপত্র ইস্যু করেছে চাকরিপ্রার্থীর নামে। এতে ব্যাংকের লোগো এবং ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব মো. মোশাররফ হোসেন খানের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব মো. মোশাররফ হোসেন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো জনবল নিয়োগ দেয় না। এ ছাড়া নামের ওপর স্বাক্ষর দেয়া হয় না নিয়োগপত্রে। তিনি বলেন, এটি পুরোটাই ভুয়া। এখন কেউ না বুঝে জালিয়াত চক্রের খপ্পরে পড়লে আমার কী করার আছে?’
তিনি বলেন, ‘কিছু দিন আগে এ ধরনের দুই জালিয়াত চক্র পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। চক্রের হোতাদের ধরার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের খুব বেশি কিছু করার নেই।’
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের জনবল নিয়োগে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা ব্যাংকে নিয়োগের প্রলোভন দেখায়। কখনও সরাসরি নিয়োগ আবার কখনও পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে সহজ-সরল মানুষদের ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।

রোববার দুপুরের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসিপশনে আসেন একজন মেয়ে। তার নাম আলিফ লায়লা। তিনি বলেন, আমাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা অফিসে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার নিয়োগপত্রেও তাই লেখা আছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকৃত নিয়োগপত্রের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। নিয়োগপত্রের শুরুতে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয় লেখা। পাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো। নিচে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব মো. মোশাররফ হোসেন খানের নাম এবং স্বাক্ষর। তার পাশে নিয়োগপ্রাপ্তের বিস্তারিত ঠিকানা দেয়া। নাম-আলিফ লায়লা, পিতার নাম : মো. আফজালুল হক, গ্রাম : আলী মাসুদপুর, ডাকঘর : গোপীনাথপুর, উপজেলা আক্কেলপুর, জেলা : জয়পুরহাট।
আলিফ লায়লা যুগান্তরকে বলেন, ‘সেলিম নামের একজন আমাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি দিয়েছেন। ব্যাংকের খুলনা অফিসে আজ (১২ মার্চ) আমার যোগদান করার কথা। বিষয়টি একটু যাচাই-বাছাই করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এসেছি।’ নিয়োগপত্রটি ভুয়া বলার পর তিনি অনেকটা ভেঙে পড়েন। কোনো টাকার লেনদেন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আলিফ লায়লা বলেন, ‘চার লাখ টাকা দেয়া কথা। তবে এখনও দিইনি।’

সেলিমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার নাম মজিদ। আমি এর কিছুই জানি না।’
এর আগে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে ভুয়া চাকরি পরীক্ষা নেয়ার ঘটনা ঘটে। তখন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে প্রবেশ করে ‘ভুয়া চাকরি’র মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছে একটি প্রতারক চক্রের সদস্যরা। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নকল ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সিল-স্বাক্ষর জাল করে ওই ওয়েবসাইটে চাকরিপ্রার্থীদের ফল প্রকাশ করেছে। এর আগে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও জানিয়ে দেয়া হয়েছিল মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগপত্রও অফিস আদেশ আকারে দেয়া হয়েছে নকল ওয়েবসাইটে। এভাবে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।
এ ঘটনায় চক্রের দুই সদস্য তোফায়েল আহমেদ (৩৫) এবং আবদুর রাজ্জাক শেখ ওরফে রিপনকে (৩৬) আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/26527