১২ মার্চ ২০১৮, সোমবার, ১০:১৭

৬০ ভাগ যাত্রীভাড়া বাড়লেও শৃঙ্খলা ফেরেনি পরিবহন সেক্টরে

 রাজধানীতে শতকরা ৯৬ ভাগ অটোরিকশা চুক্তিতে চলে। মিটারে চলা অটোরিকশার ৯১ শতাংশ ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া বা বকশিস দাবি করে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে যেতে রাজি হন না ৮৭ ভাগ অটোরিকশাচালক। চাহিদামতো ভাড়া বৃদ্ধির পরও রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের ৯৬ শতাংশ চুক্তিতে চলেন। বকশিশ চান ৯১ শতাংশ চালক। এ ছাড়া ৮৭ শতাংশ চালক যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যেতে চান না।

পর্যবেক্ষণকালে প্রাইভেট অটোরিকশা ভাড়ায় যাত্রী বহন, ঢাকা জেলার অটোরিকশাগুলো বেআইনিভাবে ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রবেশ এবং এসব গাড়ির ৪৮ শতাংশ মিটারবিহীন অবস্থায় চলাচল করে।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ‘ইকোনমিক লাইফ শেষে কেমন চলছে অটোরিকশা?’ শিরোনামে এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির সদস্যরা গত ১ থেকে ১০ মার্চ সপ্তাহব্যাপী রাজধানীর ১১টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ২৩০টি অটোরিকশার যাত্রীসেবার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এবং ওই সময়ে ৪২২ অটোরিকশার যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করেন।
সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের যাত্রীসাধারণের বাহন হিসেবে পরিচিত দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসে নামমাত্র খরচে পরিচালিত হলেও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক, চালক, সরকার মিলে যাত্রীস্বার্থ ক্ষুণœ করছে।
চার দফা ইকোনমিক লাইফ ও চার দফা যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির পরও এ সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করে মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সর্বশেষ ভাড়া নির্ধারণে এক লাফে যাত্রীভাড়া ৬০ ভাগ বাড়িয়েও এ সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরানো যায়নি।

জানা গেছে, পর্যবেক্ষণকালে ঢাকা মহানগরীর যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, গুলিস্তান, প্রেস ক্লাব, পল্টন, কাকরাইল, বাড্ডা, মতিঝিল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, খিলগাঁও চৌরাস্তা, ফকিরাপুল, ফার্মগেট, মালিবাগ, মিরপুর-১০, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ, বিমানবন্দর ও মহাখালী এলাকা ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিভিন্ন অনিয়ম প্রতিরোধে পর্যবেক্ষণের সময় সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ওই এলাকাগুলোতে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার তৎপরতা চোখে পড়েনি।
পর্যবেক্ষণকালে যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, রাত ৯টার পর এবং সকাল ৮টার আগে কোনো অটোরিকশা মিটারে চলে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া বা অটোরিকশাচালকের পছন্দের গন্তব্যের সঙ্গে মিললেই কেবল যাত্রীর পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হয়।
চুক্তিতে চলাচলকারী অটোরিকশাগুলো মিটারের ভাড়া থেকে সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৭১০.৮১ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে।

পর্যবেক্ষণকালীন প্রতীয়মান হয় যে, যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় এ বাহনের সংখ্যা কম। ফলে চালকদের ইচ্ছার কাছে যাত্রীরা বছরের পর বছর ধরে জিম্মি হয়ে আছে। অটোরিকশা সংকটের কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি ভাড়া দিয়েও গোপন চুক্তিতে যাতায়াত করছে যাত্রীসাধারণ।
সিটি কর্পোরেশনের টোলের নামে নেয়া চাঁদা, ফ্লাইওভারের টোল, যানজটের জরিমানা এবং ওয়েটিং বিল- পুরোটাই যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীসাধারণ অত্র সংগঠনের পর্যবেক্ষকদের কাছে অভিযোগ করেন।
অটোরিকশার সংকট নিরসনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সুপারিশমালাও প্রণয়ন করেছে। সুপারিশমালার মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় মহানগরীতে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার নতুন অটোরিকশা নামানোর উদ্যোগ গ্রহণ, গণমালিকানার পরিবর্তে কোম্পানিভিত্তিক অথবা অ্যাপসভিত্তিক অটোরিকশা পরিচালনার ব্যবস্থা, মিটারবিহীন ও প্রাইভেট অটোরিকশা চলাচল বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ, জমা ও ভাড়া বৃদ্ধি, সিলিং নির্ধারণ, মনিটরিং কমিটিতে যাত্রীসাধারণের প্রতিনিধিত্ব রাখা, নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলা অটোরিকশা এক বছর জব্দ রাখার বিধান, আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মুনাফা সরকার কর্তৃক নির্ধারণ এবং নতুন অটোরিকশা নিবন্ধনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা।

সংগঠনটি প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও করে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘নৈরাজ্য বন্ধে মিটার বাদ দিয়ে অ্যাপসে চলে আসা উচিত। কোনো একটি প্রাইভেট কোম্পানির অধীনে দিয়ে অটোরিকশাগুলো চালালে মনিটর করা সহজ হবে। নানান অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ও বন্ধ হবে।’ এ ছাড়া অটোরিকশা আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার চান। তিনি বলেন, শুল্কের কারণেই মালিকেরা চালকদের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে বেশি ভাড়া নেন।
সম্প্রতি অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন আসায় অটোরিকশাচালকদের অভিযোগ তাঁদের চাহিদা কমে গেছে। এ বিষয়ে মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কিছুটা চাপে রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ভাড়া কিছু কম রাখলেও মিটারে চলে না। তিনি জানান, যাত্রীদের প্রতি দুর্ব্যবহার কিছু কমেছে।

http://www.dailysangram.com/post/322244