১২ মার্চ ২০১৮, সোমবার, ১০:১২

বে-পরোয়া ছাত্রলীগ

খান মহাম্মদ ইয়াকুব আলী : বাংলাদেশের একজন বুদ্ধিজীবী বলেছিলেন “রবিন্দ্র সংগীত চর্চা করাই আমার ইবাদত”। অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইতে একটি কবিতার নাম “মানব ধর্ম”। মানব ধর্ম ‘আর কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের প্রধান রনপোদ্দার সাহা বা আর পি সাহা বলেছিলেন “আমি মানবতার ধর্মগ্রহণ করেছি”। এমন অনেক বুদ্ধিজীবী বা মহান ব্যক্তিরা নিজেদের ভালো লাগা বিষয়কে তাদের তৈরি ধর্ম বলে থাকেন। মাদার তেরেসা ডাস্টবিন থেকে একটি নবজাতককে তুলে নিয়ে বলেন “ও কোন ধর্মের নয় ও মানুষ। মানুষ হিসেবে তাকে বাঁচাতে হবে, তার খেদমত করতে হবে, ধর্ম এখানে বড় নয়।” যেভাবেই হোক মানব সেবা করাই মানুষ হিসেবে অন্যদের দায়িত্ব। যিনি যে ভাবে এ কাজ করতে ভালোবাসেন, যিনি যে ভাবে জীবন যাপন করে আনন্দ পানি, তিনি সেটাকেই ধর্ম বলে চালিয়ে দেন। অনেকেই আবার বলে থাকেন “আমি ও কাজ করি না ওঠা আমার ধর্মও নয়। এখানে তারা ধর্ম বলতে আসলে কি বুঝাতে চান তা আমার বুঝে আসে না। কোন একজন মহান ব্যক্তিকে পেলে বা কারো নিকট থেকে উপকার পেলে সনাতন ধর্মের লোকেরা বলে থাকেন ‘আপনি মানুষ নন আপনি দেবতা।’ মুসলিম সমাজের লোকেরা বলে থাকেন আপনি মানুষ নন আপনি ফিরিশতা।” প্রিয় পাঠক এতক্ষণে অবশ্য রাগ করে ফেলেছেন আসল কথা বলেন। হ্যাঁ বলবো। আমাদের কোন একজন রাজনৈতিক নেতা ছাত্রলীগকে বলেছিলেন “সোনার ছেলে সে থেকে আমরাও তাদেরকে সোনার ছেলে বলেই চিনি। আবার যখন বলা হয় জাহাঙ্গীর নগর, সিলেট মেডিকেল কলেজ, বিশ্বজিৎ হত্যা তখনও হৃদয়পটে ভেসে আসে ছাত্রলীগ। যখন বলা হয় ছিনতাই, টেন্ডারবাজি বা চাঁদাবাজি তখনও বর্তমান দেশের মানুষ একটি ছাত্র সংগঠনকে বুঝে। নারীদের শ্লীলতা হানি ঘটানোর ক্ষেত্রে এখন কেবলই একটি ছাত্র সংগঠনের কথা উচ্চারিত হয়। টিএনও বা ওসিকে থাপ্পড় দেওয়া তাও কেবল একটি ছাত্র সংগঠনের নামই বলা হয়। পুলিশের সাথে একাকার হয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মিদের পেটানো এবং জেলখানায় গিয়ে নিজ হাতে বিরোধী নেতাদের মারধর করা তাও একটি ছাত্র সংগঠনের দ্বারাই হয়ে থাকে। বর্তমানে ক্ষমতার মসনদ চিরস্থায়ী হওয়ার উপক্রম দেখে, ছাত্রলীগ আর নিচের দিকে তাকায় না। এক সময়ের রাজা বাদশাহদের সন্তানেরা যেমন নিজেকে অপ্রতিরোধ্য মনে করতো, অনেকটা তাই। অথচ এ সংগঠনটি অনেক পুরাতন এবং ঐতিহ্যবাহী। এরপরেও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষাণী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন “ছাত্র লীগ থামাও”। বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন “ছাত্রলীগ থামান”। ৮০’র দশকের ছাত্র নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন “ছাত্র লীগ থামান”। অবস্থা খারাপ দেখে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন “ছাত্রলীগ এর বিষয় আমাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই।” আওয়ামী লীগ এর সাথে একই ইস্যুতে আন্দোলন করার সময় জামায়াত নেতা জনাব কামারুজ্জামান জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন “ছাত্র লীগ থামান।” নেত্রী উত্তর দিয়েছিলেন ওরা কথা শুনে না আপনাদের ছেলেরা তো কথা শুনে।” বাইতুল মোকাররম উত্তর গেটে এক সভায় জনাব কামারুজ্জামান বলেছিলেন “ম্যাডাম আমাদের ছেলেরা যে সব সময় কথা শুনে তাও কিন্তু নয়”। বর্তমানে ছাত্রলীগ যে বে-পরোয়া তার ফিরিস্তি বর্ণনা করা একেবারেই বাহুল্য। অথচ আমার জেলা শরীয়তপুরের গৌরব বিএম মোজাম্মেল হক এমপি এক টকশোতে বলেন “দেখেন ছাত্রলীগ অন্যায় কার্যক্রম চালালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিশ্বজিৎ হত্যার ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কি সাজা দেয়া হল।” জনাব মোজাম্মেল হক বিশ্বজিৎ হত্যার কথা বললেন সে বির্তকে না গেলাম তবে আরামবাগের আওয়ামী লীগ নেতা মিল্কি হত্যার বিচার কতটুকু হয়েছে তা জানতে ইচ্ছে করে। মিল্লিকে হত্যা করে তার জুনিয়র নেতা। সেটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর হত্যাকারীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল “তুমি টুপি পাঞ্জাবী পরে এ হত্যাকাণ্ড কেন ঘটালে? সে উত্তর দিয়েছিল দোষটা জামায়াতের উপর চাপাতে চেয়েছিলাম। এরপর র্যা ব তাকে ক্রস ফায়ারে দেয়। এই তো কদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন করলো ছাত্র ইউনিয়নের ও ছাত্র মৈত্রীর ছেলেরা সে আন্দোলনে লাঠি পেটা করলো ছাত্রলীগ এবং বলে দিলো এ আন্দোলন ছাত্রদল আর শিবিরের ছেলেরা করেছে। এমনিভাবে সারাদেশে বিভিন্ন রকম ঘটনা ঘটায় ছাত্রলীগ আর তাদের সমমনা খালাতো ভাইয়েরা অথচ দোষ চাপানোর চেষ্টা করে ছাত্র শিবির এর উপর। ছাত্রলীগে যে সোনার ছেলে নেই আমি তাও বলতে পারবো না। ছাত্র লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বাহাদুর বেপারী কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ার পূর্বেই জননেত্রী শেখ হাসিনা শরীয়তপুর সফরে যান এবং জনসভায় বলেন “আপনারা আমার ছেলেটাকে দেখে রাখবেন।” সত্যিই শেখ হাসিনার এত কাছের এবং মাতৃস্নেহে লালিত এই বাহাদুর ব্যাপারীর চরিত্র সম্পর্কে বিরোধী দলের কোন লোকেরাও অভিযোগ করতে পারেনি। শরীয়তপুরের ছেলে আরেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক শামীম ও সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম কোতওয়াল তারাও গঠনমূলক রাজনীতি করে যাচ্ছেন। ছাত্রলীগ হলেই সব খারাপ ক্ষমতা পেলেই সব পাগল হয়ে যাবে বিষয়টি এমনও নয়। তাই আমরাও বলবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার ছাত্র লীগ থামান বা বাহাদুর বেপারীর মতো করে তৈরি করেন এতে আপনারও যেমন লাভ হবে লাভ হবে দেশের জনগণের আর সস্তিতে থাকতে পারবে সাধারণ মানুষ। তাহলে আর কাউকে বলতে হবে না ছাত্রলীগ “থামান” ইতিহাসে ছাত্রলীগের নামে কালো অধ্যায় অম্লান হয়ে থাকবে না। ঐ যে শুরুতে কিছু অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছিলাম কে কি চর্চা করে ইবাদতের শান্তি পায়। এমনিভাবে কেউ হয়তো বলবে “ছাত্রলীগের ছেলেদের ভালোবাসাই আমার ইবাদত। তারা ৫২,৫৪ ৬৯,৭১ এ দেশের জন্য নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে স্বৈরাচারী এরশাদ ‘বিরোধী আন্দোলনে এ ছাত্র লীগের ভূমিকা ছিলো ঐতিহাসিক। সাহসী ভূমিকা পালন করেছে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও যদি তার কবর রচনা করেছে আওয়ামী লীগ কেবলই ক্ষমতায়টিকে থাকার জন্য। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগ নেতা মরহুম আবদুর রাজ্জাক শরীয়তপুর জেলারই নন তিনি বাংলাদেশের গৌরব। অথচ এ নন্দিত নেতাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছিল এই ইনুরা যারা সব সময় ইসলাম আর আলেম উলামাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো। সে কারণেই “৬৯ সালে শাহবাগ মোড়ে ইসলামী ছাত্রনেতা আবদুল মালেককে নির্মমভাবে শহীদ করে দেওয়া হয়েছিল। কেবলই ইসলামের জন্য। আবদুল মালেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। ছিলেন তিনি ইসলামী শিক্ষার পক্ষে এক অসাধারণ বক্তব্য দেওয়ার পর ইসলাম বিরোধীরা তাকে এই বলে হত্যা করে যে “যদি এ মালেকের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শুনে, তাহলে আমাদের রাজনীতি ভেস্তে যাবে।” আবদুল মালেকের সাথী ও উত্তরসূরি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব দেখে এবং মন্ত্রীত্ব চালানোর দক্ষতা আর সততা দেখে এই চাটুকরাই ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে। যদি দুনিয়ার মানুষ এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণ জেনে যায় নিজামী সাহেবরা এতটাই দক্ষ আর যোগ্য তখনও ওদের রাজনীতির প্রতি মানুষ ধিক্কার জানাবে। তাই আবদুল মালেক ও নিজামীর প্রতি আচরণের ধারাবাহিকতা একই সুতোয় গাঁথা। এ কাজগুলো করেছে মস্কো পন্থীরা ইসলাম বিরোধীরা আজও যাদের আষ্টেপৃষ্টে বাধা স্বাধীনতার নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগ। অথচ দোষটা চাপানোর চেষ্টা করে রাজ্জাক আর তোফায়েল সাহেবদের মতো বিজ্ঞ রাজনীতিবীদদের ঘাড়ে। একইভাবে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের নামে অপকর্ম করে দোষটা ছাত্রলীগের উপর চাপানোর চেষ্টা করে দাদা বাবু আর লেলিন পন্থীরা। এটা বুঝতে হবে ছাত্রলীগ কে। কিছু একটা হলেই ছাত্রদল আর ছাত্রশিবির করেছে এ বাতিক থেকে সরে আসলে ছাত্র লীগকে হয়তো ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে স্থান পেতে হবে না। হয়তো বা কেউ আবার বলতেও পারে এদেরকে ভালোবাসাটাই আমার ইবাদত।

http://www.dailysangram.com/post/322274