২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১০:২২

পরামর্শক খাতে খরচের মহোৎসব

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প

গাড়ি কেনায় ব্যয় ১০০ কোটি : অফিস নির্মাণ ও সেবা খাতে ব্যয় ৮০ কোটি : সম্মানী ও সহায়ক স্টাফ খাতে ব্যয় ৩৯৩ কোটি টাকা
বিশেষ সংবাদদাতা : পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য পরামর্শক খাতে ব্যয় করা হবে ১ হাজার ৩১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সম্ভাব্যতা যাচাইকালে এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ পরামর্শক খাতে ব্যয় বাড়ছে ৭৯৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বা ৩৩৫ দশমিক ১১ শতাংশ। সূত্র জানায়, প্রকল্পের পরামর্শকের জন্য কেনা হবে ৮১টি গাড়ি। পাশাপাশি ৩০টি মোটরবাইক ও তিনটি অ্যাম্বুলেন্স কেনা হবে পরামর্শকের জন্য। এছাড়া রয়েছে ৬টি স্পিডবোট। সব মিলিয়ে যানবাহন খাতে ব্যয় করা হবে ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া রেলওয়ের সমাপ্ত বিভিন্ন প্রকল্প থেকেও আরও ২৫টি গাড়ি সরবরাহ করা হবে। গাড়ি ছাড়াও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিস নির্মাণ ও তার সাজসজ্জাতে ব্যয় হবে ৫০ কোটি টাকা। এর বাইরে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো থাকছেই। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সংশোধিত উন্নয়ন প্রস্তাবনায় (আরডিপিপি) এসব তথ্য মিলেছে। স¤প্রতি এটি চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রেলওয়ে বা অন্য কোনো সংস্থার অধীনে চলমান কোনো প্রকল্পে পরামর্শকের জন্য এ ধরনের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। এমনকি মূল পদ্মা সেতু প্রকল্পেও পরামর্শক খাতে ব্যয় হবে ৫১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরামর্শক খাতের ব্যয় মূল পদ্মা সেতুর পরামর্শক খাতের দ্বিগুণ। ২০১৬ সালে ঢাকা-মাওয়া-যশোর ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন করা হয়। সে সময় পরামর্শক খাতের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯০৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে খাতটির ব্যয় বাড়ছে ১২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের পরামর্শকের জন্য প্রস্তাবিত গাড়ির মধ্যে রয়েছে ৭টি ভিআইপি জিপ। প্রতিটির জিপের দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। কেনা হবে আরও ৩০টি সাধারণ জিপ। যেগুলোর প্রতিটির দাম ৮৫ লাখ টাকা। ৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ, প্রতিটির দাম ৬০ লাখ টাকা এবং ৭টি মাইক্রোবাস, প্রতিটির দাম ৫০ লাখ টাকা। মোটরযান ক্রয়, নিবন্ধন, ইন্স্যুরেন্স ফি, ভ্যাট-কর, ফিটনেসসহ যানবাহন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। আর এসব যানবাহনের জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকার বেশি। অথচ প্রাথমিকভাবে যানবাহন কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর সেগুলোর জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, পরামর্শকের জন্য অফিস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। অফিসের জন্য আসবাব ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা হবে ১০ কোটি টাকা। আবার কম্পিউটার, সফটওয়্যার ও অন্যান্য অফিস স্টেশনারি কেনায় পৃথকভাবে ব্যয় হবে ১২ কোটি টাকা।

পরামর্শক খাতে ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পরামর্শকের সম্মানী বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আবার সহায়ক স্টাফ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বিদেশি পরামর্শকদের ঢাকায় আসা-যাওয়া, দৈনিক ভাতা/সম্মানী প্রভৃতি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর তাদের দেশে থাকায় আরও ১০ কোটি টাকা ও বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা। দেশীয় পরামর্শকদের সম্মানী, অন্যান্য ভাতা, যাতায়াত বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। এছাড়া স্থানীয় যোগাযোগ খাতে ব্যয় হবে ৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। জাদুঘর, আর্কাইভ, লজিস্টিক ও অন্যান্য সেবার কাজে ধার্য করা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। এছাড়া উপ-পরামর্শক বা এনজিও খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি, স্টাডি ট্যুরে ১০ কোটি ও সমীক্ষা পরিচালনাকারী সরঞ্জাম কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। এছাড়া পরামর্শকের সেমিনার ফি, প্রেজেন্টেশন ফিসহ অন্যান্য অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে পরামর্শক খাতে অনিশ্চিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর পরামর্শকের আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ২১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইকালে প্রতিটি খাতের ব্যয়ই অনেক কম ধরা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। জিটুজি ভিত্তিতে চায়না রেলওয়ে গ্রæপ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। তবে কাজ শুরুর আগেই বাড়ানো হচ্ছে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয়। সংশোধিত প্রস্তাবে রেলপথটির নির্মাণ ব্যয় বেড়ে হবে ৪০ হাজার ৮০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

https://www.dailyinqilab.com/article/118292