২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১০:১১

বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের সময় বাড়ল ৬ মাস

ব্যবসায়ীদের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক নমনীয়

আগ্রাসী ব্যাংকিং বন্ধের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণসীমা কমিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাপে সে অবস্থানটি ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনা দেয়ার মাত্র ২০ দিনের মাথায় তা পরিবর্তন করা হয়েছে। গতকাল ব্যাংকগুলোকে দেয়া নতুন নির্দেশনায় ঋণসীমা সমন্বয়ের সময় ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে ঋণসীমা সাড়ে ৮৩ শতাংশ এবং ইসলামি ব্যাংকগুলোকে ৮৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের নির্দেশনা দেয়ার পর বাজারে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয় এবং টাকার প্রবাহের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে তারল্যের ওপর চাপ কমাতে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।

জানা গেছে, বাস্তব বিনিয়োগ চোখে না পড়লেও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে এ বিনিয়োগ প্রবাহ। গত নভেম্বরে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপনের হার (এলসি খোলার হার) ৩০ শতাংশ অতিক্রম করে। আর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ২০ শতাংশে উঠে যায়। আগ্রাসী এ ব্যাংকিংয়ের কারণে ঋণ আমানতের অনুপাত কোনো কোনো ব্যাংকে এমনকি শতভাগ অতিক্রম করে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে ৮৫ ভাগ। ব্যাংকগুলোর এমন আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। কারণ দীর্ঘ দিন ধরে আমানতের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১০ শতাংশের নিচে। সাধারণত ঋণের প্রবৃদ্ধি আমানতের চেয়ে কম হওয়ার কথা, সেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধির চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হয়ে যায়।
তহবিল ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে গত ৩০ জানুয়ারি ব্যাংকগুলোর জন্য এ বিষয়ে এক সার্কুলারে বলা হয়, ঋণ আমানতের অনুপাত প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে ৮৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৮৩ শতাংশ এবং ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ শতাংশের পরিবর্তে ৮৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এর জন্য সময় দেয়া হয় ছয় মাস। অর্থাৎ যেসব ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ থাকবে তাদের ৩০ জুনের মধ্যে পুনর্নিধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর ব্যাংকিং খাতে অনেকটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। যেসব ব্যাংকের ঋণসীমা নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ছিল তারা আর নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছে না। আবার রাতারাতি বাড়তি বিনিয়োগ গ্রাহকের কাছ থেকে আদায়ও করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে কোনো কোনো ব্যাংক আমানত বাড়িয়ে ঋণসীমা সমন্বয় করার উদ্যোগ নেয়। এতে আমানতের সুদ হার বেড়ে যায়, তবে এর চেয়ে বেশি হারে বাড়তে থাকে ঋণের সুদহার। ইতোমধ্যে কোনো কোনো ব্যাংক শিল্প ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়। যেখানে আগে ছিল সাড়ে ১২ শতাংশ।

ঋণের সুদহার বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ী সমাজ। কারণ ঋণের সুদহার বেড়ে গেলে ব্যবসায় ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাবে। এমনি অবস্থায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ দিতে থাকেন।
সূত্র জানিয়েছে, সামনে জাতীয় নির্বাচন। সে দিকে খেয়াল রেখে ও ব্যবসায়ীদের দিক চিন্তা করে বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব ঋণ গত ৩০ জানুয়ারির আগে অনুমোদন দেয়া হয়েছে, অথচ বিতরণ হয়নি ওই সব ঋণ ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতরণ করতে পারবে। এতে ঋণ আমানতের অনুপাতের সীমা অতিক্রম করলেও ব্যাংকগুলোকে কোনো জরিমানা গুনতে হবে না। তবে পরিবর্তিত সীমার আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সমন্বয় করতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/295709