২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১০:১০

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে ক্যাম্পাস রণক্ষেত্র

অস্ত্র উদ্ধার, গাড়ি ভাঙচুর, আটক ৮ ; অনির্দিষ্টকালের অবরোধ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুইপক্ষে এবং পুলিশের সাথে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সোমবার বেল ৩টা থেকে এ সংঘর্ষ গতকাল মঙ্গলবার দিনভর থেমে থেমে চলছিল। সোমবার মধ্য রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল ও শাহ আমানত আবাসিক হল থেকে ছাত্রলীগের আটকর্মীকে আটক করে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার এর প্রতিবাদে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন এবং পরিবহন দফতরে দাঁড়িয়ে থাকা সময় টিভির গাড়িসহ ১১টি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত হল থেকে দু’টি এলজি, বস্তাভর্তি রামদা উদ্ধার করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু ও বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি রেজাউল হকের অনুসারীদের মধ্যে সোমবার রাত ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে থেমে থেমে ইট ছোড়াছুড়ি চলে। এতে উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হন। আলমগীর টিপু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। রেজাউল হক নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে সোমবার মধ্য রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল ও শাহ আমানত আবাসিক হল থেকে ছাত্রলীগের আটকর্মীকে আটক করে পুলিশ। মধ্য রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত শাহজালাল, শাহ আমানত ও সোহরাওয়ার্দী হলে পুলিশ অভিযান চালায়। হাটহাজারী থানার ওসি বেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, তিন হল থেকে দু’টি এলজি, রামদা ও পাথরসহ কয়েক বস্তা দেশী অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো: আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা থামাতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধের ডাক দেয় চবি শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীরা। গতকাল ভোরে নগরীর বটতলী স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের হোসপাইপ কেটে দেয়। ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়মুখী বাস চলাচলেও বাধা দেয় ছাত্রলীগ। এতে শত শত শিক্ষার্থী ভোগান্তিতে পড়েন।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় টিপুর অনুসারী চবি ছাত্রলীগের অংশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ করে দিয়ে সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা সাড়ে ১২টায় পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। এতে অবরোধকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরে দাঁড়িয়ে থাকা অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে অবরোধকারীরা সরে যাওয়ার পর মূল ফটকের তালা খুলে দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার রাতে দুই হলে তল্লাশি চালিয়ে আট-দশটা রামদা ও দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র পাই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র মূল ফটক অবরোধ করে। পরে আমরা তাদের উঠে যেতে অনুরোধ করি। তারপরও সরে না গেলে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়।
আলমগীর টিপু বলেন, সোমবার রাতে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে আমরা প্রক্টরের পদত্যাগ চাই। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধ চলবে।

তবে ছাত্রলীগ একাংশের ডাকা এ অবরোধে চবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজনের অনুসারীরা দাবি করেন, এ অবরোধে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সাংবাদিকের ওপর হামলা : ছাত্রলীগের একাংশের ডাকা অবরোধকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেসরকারি সময় টেলিভিশনের গাড়ি ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টায় চবি প্রক্টর অফিসের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন সময় টিভির রিপোর্টার পার্থ প্রতীম বিশ্বাস ও গাড়িচালকসহ কয়েকজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসিন মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘প্রক্টর স্যার সাংবাদিকদের নিয়ে কথা বলার সময় অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রক্টর অফিসের একটি ও সময় টিভির একটি গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরে গিয়ে অন্তত ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/295667