২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১১:১৮

জীববিজ্ঞানের প্রশ্নও ফাঁস

চলমান এসএসসি পরীক্ষায় গতকাল সকালে ছিল জীববিজ্ঞান এবং অর্থনীতি বিষয়ের পরীক্ষা। এর মধ্যে জীববিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে। পরীক্ষা শেষে মিলিয়ে দেখা গেছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল রয়েছে।
গতকাল বিভিন্ন অনলাইনে পরিবেশিত খবর অনুযায়ী জীববিজ্ঞানের বহু নির্বাচনী অভীক্ষার উত্তরপত্রসহ প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপে সকাল ৮টা ৫৭ মিনিটে পাওয়া গেছে। এর কিছুক্ষণ পর সকাল সোয়া ৯টায় বোর্ডের দেয়া অতিরিক্ত খাতায় (এক্সট্রা খাতা) এমসিকিউর সমাধান লেখাসহ ফাঁস হয় প্রশ্নপত্র।
এ নিয়ে টানা ১১ দিন ১১টি বিষয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটল। এ দিকে গত রোববার প্রশ্নফাঁস অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। একটি বিষয়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে হুবহু মিল পাওয়া গেছে পরীক্ষা নেয়া প্রশ্নের সাথে। এ ছাড়া অন্য বিষয়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে আংশিক মিল পেয়েছে কমিটি। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে গ্রহণ করা কিছু বিষয়ের পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

উত্তর তৈরির সময় শিক্ষক আটক
নাটোর ও লালপুর সংবাদদাতা জানান, নাটোরের লালপুরে গতকাল এসএসসি পরীক্ষায় ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন বিষয়ের পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষা কক্ষ থেকে প্রশ্ন দেখে অফিস কক্ষে উত্তর তৈরির সময় মতিউর রহমান নামে এক শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। তিনি লালপুর থানা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে কারিগরি বিভাগের ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর এবং উপজেলার বড়বড়ীয়া গ্রামের আজিজুল খলিফার ছেলে।
জানা যায়, গোপালপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজে অনুষ্ঠিত এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন বিষয়ের প্রশ্ন দেখে প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে বসে উত্তর তৈরি করছিলেন মতিউর রহমান। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম উত্তরপত্রসহ হাতেনাতে শিক্ষক মতিউর রহমানকে আটক করেন। আটক শিক্ষককে লালপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আসাদুজ্জামান লালপুর থানায় একটি মামলা করেছেন।
ধামরাই (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, ঢাকার ধামরাইয়ে মোবাইল ফোনে এসএসসি পরীক্ষার জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নপত্র পাওয়ায় দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কারসহ তাদের থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায়।

জানা গেছে, উপজেলা সদর ধামরাই হার্ডিঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং সাভার উপজেলার শিমুলিয়া এসপি হাইস্কুলের দুই শিক্ষার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক ও তন্নি সাহাসহ কয়েকজন মিলে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশেই ইজিবাইকে বসে মোবাইল ফোন দেখতে ছিল। এ সময় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা একাডেমিক সুপারভাইজার আইরিন সুলতানা অন্য একটি বিদ্যালয়ের প্রশ্ন নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিষয়টি তার নজরে এলে তাদের কাছ থেকে মোবাইল দুইটি নিয়ে নেন।
সেই সাথে পরীক্ষার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক ও তন্নি সাহাকে কেন্দ্রের ভেতরে ডেকে এনে মূল প্রশ্নের সাথে তাদের মোবাইল ফোনে থাকা প্রশ্নের সাথে পুরোপুরি মিল খুঁজে পায় কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালামকে অবহিত করলে তিনি ওই পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কারের নির্দেশ দেন এবং থানায় সোপর্দ করেন।

কেন্দ্রসচিবকে বহিষ্কার
পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের নাজিরপুরে এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের সেট পরিবর্তনের অভিযোগে কেন্দ্রসচিবকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলার সিরাজুল হক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গতকাল এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মাহিদুল ইসলাম জানান, ওই দিন ওই কেন্দ্রে জীববিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ের ২৬৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। কেন্দ্রসচিবের কারণে ওই দিনের জন্য বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ‘ক’ সেটের পরিবর্তে ‘খ’ সেটের প্রশ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বিষয়টি পরীক্ষা শুরুর ২১ মিনিট পর কর্তৃপক্ষের চোখে ধরা পড়ে এবং ওই সেট দিয়েই পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে পরীক্ষা শেষে ওই কেন্দ্রে গেলে কেন্দ্রসচিব উপজেলার সিরাজুল হক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাধব চন্দ্র দাস ও সহকারী কেন্দ্রসচিব উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউজেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্র নাথ মণ্ডলকে পাওয়া যায়নি। কেদ্রেসচিবের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: হাসান সর্দার জানান, কেন্দ্রসচিব জরুরি কাজে পরীক্ষা শুরুর পর শিক্ষা বোর্ডে গেছেন। তিনি জানান, অন্যমনস্ক থাকার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা জানান, এ ঘটনার অভিযোগে ওই কেন্দ্রের সচিবকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দুই যুবক আটক, ২ বছরের সাজা

চান্দিনা (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার চান্দিনায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ফুয়াদ (১৮) ও শাহরিয়ার (১৮) নামে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের দুই বছরের সাজা প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গতকাল বেলা ১১টায় উপজেলা সদরের চান্দিনায় ডা: ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে থেকে তাদের আটক করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তুষার আহমেদ।
আটকরা হলেন উপজেলার মহারং গ্রামের টিপু সুলতানের ছেলে ফুয়াদ আলম (১৮) ও দেবিদ্বার উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে শাহরিয়ার ইসলাম (১৮)।
গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজেই চান্দিনা-১ পরীক্ষাকেন্দ্রের চান্দিনা ডা: ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে দুই যুবককে আটক করেন। তাদের মোবাইল ফোনে সোমবারের পরীক্ষার হুবহু প্রশ্নপত্র পান। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।
খুলনায় ৮ জন রিমান্ডে
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় আটক আটজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল খুলনা মহানগর শিশু আদালতের বিচারক মোসাম্মাৎ দিলরুবা সুলতানা সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে তিন দিন করে মঞ্জুর করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ চারজন কিশোর রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গত রোববার পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে মামলা করা হয়। র্যাব-৬-এর স্পেশাল কোম্পানির ওয়ারেন্ট অফিসার মো: রফিকুল ইসলাম এ মামলা করেন। মামলায় আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫-১৬ জনকে আসামি করা হয়।
অভিযুক্তরা হচ্ছে নগরীর খালিশপুরের কাশিপুর এলাকার মো: খায়রুল ইসলাম শাওন, মো: সাব্বির হোসেন, খালিশপুর বিআইডিসি রোডের বঙ্গবাসী স্কুলের সামনের এলাকার মো: ইব্রাহিম আল নাঈম, দৌলতপুর আঞ্জুমান রোডের মোনায়েম সাহরিয়া রাফি, দৌলতপুর পাবলা মধ্যপাড়ার মো: সাজিদ মল্লিক, খালিশপুরের উত্তর কাশিপুর এলাকার মো: সাব্বির হোসেন রিয়াজ, দৌলতপুর পাবলার মো: আরাফাত হোসেন সাকিব ও দৌলতপুর বাজার স্বর্ণপট্টি এলাকার চয়ন রায়।

জানা যায়, চলতি এসএসসি পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (সৃজনশীল) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর আগেই সকাল ৮টার দিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। ফেসবুকে বিভিন্ন নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ৩০০-৪০০ টাকায় প্রশ্নপত্র বিক্রি করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি গোপন খবরে র্যাব-৬ স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার এনায়েত হোসেন মান্নানের নেতৃত্বে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত ৯ জনকে আটক করা হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/295407