২৫ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৯:০৯

বাংলাদেশে নিখোঁজের ঘটনা তদন্তে কতটা আগ্রহী পুলিশ?

বাংলাদেশের একটি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত চার শ’র বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। এমন নিখোঁজ তিনজনের সন্ধান মিলেছে গত কয়েক দিনে।
প্রায় চার মাস নিখোঁজ থাকার পর হঠাৎ করে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এর আগে দুই মাসেরও বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর সাংবাদিক উৎপল দাসকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় পাওয়া যায়।

অন্য দিকে প্রায় দেড় মাস নিখোঁজ থাকার পর ফিরে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজার। এ দু’টি ঘটনায় দু’জন প্রায় একই রকম বর্ণনা দিয়েছেন। এমন ঘটনার নিজেরা কতটা তদন্ত করে পুলিশ?
এ ধরনের ক্ষেত্রে তদন্তে পুলিশের তরফ থেকে এক ধরনের অনীহা লক্ষ করা গেছে বলে জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মী নুর খান লিটন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ক্ষেত্রে পুলিশের এক ধরনের অনীহা লক্ষ করেছি। বিশেষ করে পরিবারগুলোর তরফ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে যখন এক ধরনের সন্দেহ প্রকাশ করা হয় তখন তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের এক ধরনের অনীহা বা অনাগ্রহ লক্ষ করি।’ যারা মামলা করেছেন বা অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে গেছেন সেগুলো কতটা ফলোআপ করে পুলিশ?

নুর খান লিটন বলেন, ‘অনেক অভিযোগের ক্ষেত্রে দেখেছি পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন, কোনো কোনোটি এখনো অপেক্ষমাণ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ করেছি এ ধরনের মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে যেমন অনীহা আছে, তেমনি তদন্তের ক্ষেত্রেও অনীহা আছে এবং ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা দেয়া কিংবা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় তথ্য নিয়ে তার বিশ্লেষণ করা সেটা আমরা দেখি না।’
এ মানবাধিকারকর্মী জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অনেক সময় তা বাদ দিয়ে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) নথিভুক্ত করা হয় বলেও লক্ষ করা গেছে। তিনি বলেন, ‘যেসব পরিবার আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য আসে, আমরা যখন তাদের পুলিশের কাছে নিয়ে যাই এবং পুলিশ যখন জিডি বা অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতার কথা লেখা আছে বলে দেখে তখন তারা সাধারণত ওই অংশটি কেটে জিডি আকারে গ্রহণ করেন এবং তারপর এই জিডি বা অভিযোগকে আর গুরুত্ব দেয়া হয় বা ফলোআপ করা হয় তেমনটি আমরা দৃশ্যমান দেখি না।’

নিখোঁজ হওয়ার পর যারা ফিরে আসছেন তাদের কাছ থেকে তথ্য উদঘাটন করা এবং সেই বিষয় অনুসন্ধান চালানোর ক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতা দৃশ্যমান নয় বলেও তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য কী? জানতে চাইলে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) সহেলী ফেরদৌস বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা অবশ্যই চেষ্টা করি রহস্য উদঘাটনের জন্য এবং তথ্য সবসময়ই কাম্য। তথ্যের ওপর নির্ভর করেই পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নিই। অনেক ধরনের তথ্যই তো থাকে তা যাচাই-বাছাই করে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো নিয়ে কাজ করি।’
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অনেক সময় তা বাদ দিয়ে জিডি গ্রহণ করার অভিযোগ বা তদন্তে পুলিশের অনীহার অভিযোগ অস্বীকার করে এআইজি সহেলী ফেরদৌস বলেন, নিখোঁজের ক্ষেত্রে জিডির গুরুত্ব অবশ্যই আছে। এ রকম ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েই তা বিবেচনা করা হয়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/279296